ক্রুইফের অদ্ভুত সব আবদার

পেশাদার কোচদের নানা রকম শর্ত থাকে চাকরিদাতার কাছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে সব নিয়মনীতিই হার মানিয়েছেন লোডভিক ডি ক্রুইফ। জুন থেকে বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে গত মাসেই সই করে গেছেন সমঝোতা স্মারকে।
এর আগে বাফুফের অনুরোধে চ্যালেঞ্জ কাপে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিতে ডাচ কোচ দিয়েছেন অদ্ভুত সব শর্ত!
শর্ত-১: ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসবেন। ২-৬ মার্চ কাঠমান্ডুতে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ শেষে পরদিন দেশে ফিরবেন। এই ১২ দিনের জন্য তাঁকে ও তাঁর সহকারী রেনে কোস্টারকে পুরো এক মাসের বেতন দিতে হবে। বাফুফের এতে রাজি।
শর্ত-২: বাফুফে বলেছিল, চ্যালেঞ্জ কাপে ভালো ফল করলে ১০ হাজার ডলার বোনাস দেওয়া হবে। ওই বোনাসের অর্ধেক টাকা তাঁকে এখনই দিতে হবে। হল্যান্ডের আয়করও বাফুফেকে দিতে হবে। বাফুফে এতেও সম্মত।
শর্ত-৩: বেতনটা আগামীকালই দিতে হবে (শর্ত দিয়েছেন পরশু)। দুই কোচের বেতন-বোনাস এবং এজেন্টের কমিশনসহ যা প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো। বাফুফে এটাও দেবে বলছে।
শর্ত-৪: চ্যালেঞ্জ কাপে ক্রুইফ না এলে সহকারী কোস্টার আসবেন। কোস্টারও না এলে তাঁরা একজন কোচ পাঠাবেন। মানে দুই কোচ টাকা নেবেন, কিন্তু আসবেন কি না ঠিক নেই! এটা মানতে পারছে না বাফুফে।
শর্ত-৫: চ্যালেঞ্জ কাপের জন্য বাফুফের সঙ্গে এখন সংক্ষিপ্ত চুক্তি হলে সেটি দুই কোচ বাতিল করতে পারবেন। কিন্তু বাফুফে বাতিল করতে পারবে না। এটিও বাফুফের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
চ্যালেঞ্জ কাপের অল্প কয়েক দিনের জন্য এমন হাস্যকর সব শর্ত দিতে পারেন ক্রুইফ, বাফুফের তা অনুমানক্ষমতার বাইরেই ছিল। যদিও বাফুফের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করে গেছেন নাটকীয় এক পরিবেশ তৈরি করে। বাফুফেকে রীতিমতো ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন হাজার রকম দাবি-দাওয়া আদায় করে। তবে বাফুফের সঙ্গে তাঁর চূড়ান্ত চুক্তি এখনো হয়নি। সেটিও অপেক্ষাধীন।
চ্যালেঞ্জ কাপের শর্তাবলি দেখে ক্ষুব্ধ বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সমঝোতা স্মারক বাতিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘স্থায়ী সমঝোতা স্মারকে কোচ যা চেয়েছে সবই দিয়েছি। কিন্তু এখন চ্যালেঞ্জ কাপে আসতে যেসব শর্ত দিয়েছে, এগুলো এক ধরনের ইয়ার্কি। কোচ না এলে সহকারীকে পাঠাবে, সহকারী না আসলে অন্য কোনো কোচ পাঠাবে, এটা কী ধরনের আবদার! এই অস্থায়ী চুক্তিটা সে বাতিল করতে পারবে। আমরা পারব না। এটাও হাস্যকর। কোনোভাবেই এসব শর্ত মানতে পারছি না। এমন কোচ এনে আমি আরও বিপদে পড়ব নাকি!’
বাংলাদেশের ফুটবলে ক্রুইফ-অধ্যায় কি তাহলে শুরুর আগেই শেষ? ‘নাবিলরা (পাশে থাকা বাফুফের জাতীয় দল কমিটি চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ) তো ৯৯ শতাংশ না করে দেওয়ার পক্ষে। তবে আমি শেষ বলব না। দেখি কী করা যায়’—বললেন ক্ষুব্ধ এবং বিস্মিত সালাউদ্দিন।
ক্রুইফের এজেন্টকে তখনই বাফুফে ভবন থেকে নিজে ফোন করে বললেন, তাঁকে (সালাউদ্দিন) ফোন করতে। এত কিছুর পরও সালাউদ্দিন একটু আশাবাদ ধরে রাখতে চাইলেন, ‘আমি আগে কথা বলি। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
ক্রুইফ-অধ্যায়ের শেষ হয়ে গেলে চ্যালেঞ্জ কাপে কোচ হবেন কে? সাংবাদিক আড্ডায় বিকল্প হিসেবে উঠল আবাহনীর ইরানি কোচ আরদেশির পোরনেমাত, কিংবা শেখ জামালের নাইজেরিয়ান কোচ যোসেফ আপুসির নাম। সালাউদ্দিন বললেন, ‘এটাও মাথায় আছে।’
ইউরোপে গতকাল ছিল ছুটি। তাই আজকের মধ্যেই ক্রুইফের আসা না-আসার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বাফুফে।

No comments

Powered by Blogger.