রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

 রংপুরের পল্লীতে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুবৃত্তরা। নিহতের নাম মতিয়ার রহমান মতি। শনিবার সকালে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় তার লাশ আলুক্ষেতে দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিলে পুলিশ লাশ নিয়ে মর্গে প্রেরণ করে।
এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। তবে কেউ গ্রেফতার হয়নি । পুলিশ এবং নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সদর উপজেলার তপোধন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাহেবগঞ্জ বাজার সমিতির সদস্য ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান (৫০) শুক্রবার রাত আনুমানিক ২টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাইসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাকে আটক করে আলুক্ষেতে নিয়ে যায় । সেখানে মতির হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং মুখে গেঞ্জি ও আলু ঢুকিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ মাটি দিয়ে আংশিক ঢেকে রেখে যায়। সকালে স্থানীয় লোকজন আলোক্ষেতে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
এ ব্যাপারে তপোধন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম রেজা জনকণ্ঠকে জানান, দীর্ঘদিন থেকে ইজারাদার ও বাজার সমিতির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। বাজার সমিতির সদস্য হিসেবে মতি সব সময় জোরালো ভূমিকা রাখত। সাহেবগঞ্জ বাজার সমিতি ও ইজারাদারদের সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে মতি খুন হয়ে থাকতে পারে। এটা কোন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয় বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
তপোধন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম সাজুর ধারণা নেশাখোর দুবৃত্তরা রাতের অঁধারে মতিকে খুন করে তার কাছে থাকা টাকাপয়সা ও বাইসাইকেলটি নিয়ে যেতে পারে। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রশিদ সরকার জানান, মতি হত্যার বিষয়ে তাঁর ছেলে মোস্তাফিজার রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। খুনীদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে।
শনিবার তপোধন ইউনিয়নের চান্দকুঠি পশ্চিম পাড়া গ্রামে নিহত মতির বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে স্বজনদের আহাজারি। নিহত মতির মা জোবেদা বেগম (৮৫) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন যারা আমার ছেলেকে খুন করেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।
নিহতের স্ত্রী মাজেদা বেগম (৫০) বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। মাজেদা বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, আমার স্বামী সংসারে একমাত্র উপার্জনম ব্যক্তি। বাড়ি ভিটা ছাড়া আমাদের আর কোন সম্পদ নেই, আয় রোজগারের পথ নেই। এখন তাঁর প্রশ্ন ২ মেয়ে ৩ ছেলে নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন? কি খেয়ে বাঁচবেন? কিভাবে চলবে সংসার? তিনি বলেন, আমার স্বামী দলের খুব একনিষ্ঠ কর্মী ছিল। বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসত, তাঁর আদর্শ অনুসরণ করত। আওয়ামী লীগের কোন অনুষ্ঠান হলে সে দোকান বন্ধ করে চলে যেত। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী মতির সাথে কারও কোন বিরোধ ছিল না। কারও সাথে কোন ঝগড়া বিবাদও হয়নি।
নিহত মতির আড়াই বছরের ছোট ছেলে বিপস্নব অপোয় আছে, রাতে তার বাবা দোকান বন্ধ করে তার জন্য বিস্কুট নিয়ে আসবে। এখনও সে জানে না তার বাবা আর নেই।

No comments

Powered by Blogger.