মানসিক অত্যাচারে কান্ত চাঁদমণি আলিঙ্গন করল মৃত্যুকেই

 সৌন্দর্যই কাল হলো তার। হেরে গেলো চাঁদের মতো ফুটফুটে স্কুলছাত্রী চাঁদমণি (১৫)। বখাটে আত্মীয় ও তার সাঙ্গোপাঙ্গের কুপ্রস্তাব, ধর্ষণের হুমকি আর অশ্লীল গালাগাল সইতে না পেরে আত্মহননের পথই বেছে নিতে হলো তাকে।
দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অত্যাচার সইতে সইতে কান্ত চাঁদমণি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই 'শানত্মি' খুঁজে নিল। বুধবার রাতে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে। কিশোরগঞ্জে সদর উপজেলার সতাল ভট্টাচার্যপাড়া গ্রামের আব্দুল মোতালিবের মেয়ে বিলকিস আফরোজা চাঁদমণির আত্মহত্যাকে কেউ মেনে নিতে পারছে না। সে স্থানীয় আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এলাকাবাসী চাঁদমণির বখাটে চচাত ভাই ও তার সাঙ্গোপাঙ্গের বিচার দাবি করেছে। থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো হুমকি দেয়া হচ্ছে পরিবারটিকে। শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদমণির মা জাহানারা বেগম মেয়ের কবরের পাশে বিলাপ করছে। তার মেয়েকে যারা আত্মহননের পথে ঠেলে দিয়েছে তিনি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। পুলিশ, এলাকাবাসী ও মামলার বিবরণে জানা যায়_ একই গ্রামের চাঁদমণির বখাটে চাচাত ভাই আলম (২০) সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে এক বছর যাবৎ তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তাকে কুপ্রস্তাব দিত। অপমানজনক অশালীন কথাবার্তা বলত। বুধবার দুপুরে আলম তার সঙ্গীদের নিয়ে চাঁদমণিদের বাড়িতে এসে তার কাছে বিয়ে না দেয়া হলে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। তাকে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করা হবে বলেও সবার সামনে বলে তারা। এতে অপমানিত, বিব্রত চাঁদমণি ঘরের দরোজা বন্ধ করে দেয়। সবাই ভেবেছিল, লজ্জায় সে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। রাতে অনেক ডাকাডাকি করে কোন সাড়া না পেয়ে দরোজা ভেঙ্গে দেখে চাঁদমণির মৃতদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে।
পরদিন চাঁদমণির বাবা আব্দুল মোতালিব বাদী হয়ে একই গ্রামের আলমকে প্রধান এবং তার সঙ্গী আঃ রহমান (২১), সাদ্দাম হোসেন (২০) ও রাসেলকে (২৩) আসামি করে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। চাঁদমণির ফুফাত ভাই আব্দুল হক বলেন, বখাটে আলমের উৎপাতে কয়েক মাস আগে তার পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। স্কুলে সে ভাল ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও এদের উৎপাতে স্কুলে যেতে পারেনি। তবুও আলম বাড়ি এসে প্রায়ই অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করত।
অভিযুক্ত আলমের বাবা কাঠ ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, 'বেকার ছেলেকে বহুবার শাসন করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু উল্টো সে আমার গায়ে কয়েকবার হাত তুলেছে। আমার ছেলে বলে কথা নয়, এরূপ বখাটেদের শাস্তি হওয়া উচিত।' এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মোশাররফ হোসেন জানান, 'আসামিদের ধরার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।'

No comments

Powered by Blogger.