আমিরাতে নিহত ৭ বাংলাদেশীর লাশ দেশে পৌঁছেছে- স্বজনের কাছে হস্তান্তর

 সংযুক্ত আরব আমিরাতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাত বাংলাদেশীর লাশ রবিবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সাত বাংলাদেশীর মরদেহ বহনকারী বিমান।
এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। একের পর এক নামানো হয় লাশের কফিন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ১০টায় এ সকল লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আবুধাবির আল আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি চট্টগ্রামে। তারা হলেন ফটিকছড়ির উত্তর পাইন্দং গ্রামের আবদুল গনির পুত্র মোঃ আরিফ, আনোয়ারার মেলঘরের খানসামা গ্রামের শাহ আলমের পুত্র বোরহান উদ্দিন, ফটিকছড়ির রোসাঙ্গিরী গ্রামের প্রয়াত নজির মিয়ার পুত্র সিরাজুল ইসলাম খন্দকার, একই উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের আলী হোসেনের পুত্র মোঃ হাশেম, দক্ষিণ পাইন্দং গ্রামের আবদুল মোতালেবের পুত্র আলা উদ্দিন, ফটিকছড়ির মধ্যম কাঞ্চননগর গ্রামের নুরুল আলম এবং রাউজানের উত্তর সত্তা গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার দুই পুত্র খোরশেদ আলম ও মাসুদ রানা। কফিনগুলো নামিয়ে সারি সারি করে রাখা হয়। আট জনের মধ্যে নুরুল আলমের লাশ শনাক্ত না হওয়ায় বাকি ৭ জনের লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয় তাদের স্বজনদের কাছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি আল আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তারা। আনুষ্ঠানিক সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রবিবার সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে নিহতদের লাশ চট্টগ্রামে পৌঁছানো হয়। আল আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পুত্রকে হারিয়েছেন রাউজানের ইদ্রিস মিয়া। বড় ছেলে খোরশেদ আলম আবুধাবিতে যান এক বছর আগে। পরে তিনি নিয়ে যান ছোট ভাই মাসুদ রানাকে। তিন জনের মধ্যে দুজনই এখন না ফেরার দেশে। সন্তান হারানোর শোকে পাথর ষাটোর্ধ্ব ইদ্রিস মিয়া। তার মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। কিছুই বলতে পারছেন না। শুধু বিলাপ করে কাঁদছেন। একইভাবে নিহত সকলের স্বজনদের এমনই অবস্থা দেখা যায় বিমানবন্দরে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ছেলেদের বিদেশে পাঠানো হলেও সে স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (কল্যাণ) জাহাঙ্গীর আলম বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৪০ লাখ টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে আবুধাবি সরকার। আর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা করে অনুদান ঘোষণা করা হয়েছে।
৪ জনের লাশ দাফন
নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি থেকে জানান, মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবীর আল-ব্রাউদী রাজপ্রাসাদের সন্নিকটে ৪ ফেব্রুয়ারি সেখানকার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট এবং বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ বাংলাদেশীর মধ্যে ফটিকছড়ির ৪ জনের মৃতদেহ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ৪ জনের মরদেহ গ্রহণ করেন। পরে ৪ মৃতদেহ ফটিকছড়ি সদরের স্থানীয় করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনা হয়। বেলা ২টায় নিহত ৪ জনের জানাজার নামাজ শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আবুধাবী থেকে নিয়ে আসা এ ৪ জনের নাম হচ্ছে- হাসেম প্রকাশ নুরুল আলম (৪৮), আলা উদ্দীন (৩৮), মোঃ আরিফ (২৯), সিরাজুল ইসলাম মজুমদার (৪০), তবে নরুল আলমের (৩৫), লাশ এখনো পৌঁছায়নি।

No comments

Powered by Blogger.