যুদ্ধাপরাধী বিচার শুরু হওয়ায় ভারতের অভিনন্দন

 অনেক দেরিতে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানালেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে ভারত বাংলাদেশের এ বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে অন্যতম শীর্ষ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসিসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চেয়ে তরুণদের গণজাগরণকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মন্তব্য করলেও একাত্তরের গণহত্যাকে ‘এক অবর্ণনীয় বেদনা’ বলে আখ্যায়িত করলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে বেলা ১২টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনক্লোজ সম্মেলন কক্ষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। পদ্মা সেতুতে ভারত আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, এক বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভারত যে টাকা দিয়েছে তা বাংলাদেশ চাইলে যে কোন খাতে ব্যবহার করতে পারে। শর্তসাপেক্ষে পদ্মা সেতুতেও অংশ নিতে ভারত আগ্রহী।
সংবাদ সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, স্থল সীমান্ত চুক্তি, কানেকটিভিটি, বাণিজ্য ও অনুপ চেটিয়া প্রসঙ্গও উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব তিন দিনের শনিবার ঢাকায় আসেন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ।
সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রঞ্জন মাথাই আরও বলেন, আমি বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাই যে তারা অত্যন্ত আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আইনী বিষয় খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে একটি যথার্থ রায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে সে সময় দলে দলে শিক্ষার্থী ভারতে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসতেন। আমরা যাঁরা ইতিহাসের ওই সময়ে ছিলাম, তাদের কাছে মাত্র একটি বিচার ঘোষণা করা না করা কোন সাধারণ বিষয় নয়। এটি গণহত্যার বিরুদ্ধে মামলা যা বিশ্ববাসী জানে। এটি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের অসাধারণ এক বেদনা, যা আরও বোধগম্য হওয়া ও প্রশংসনীয় হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, শাহবাগে যে সমাবেশ হচ্ছে তা দেশের একদমই অভ্যন্তরীণ বিষয়।
রঞ্জন মাথাই আরও বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের যে বন্ধুরা রয়েছে তাদের জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার একটি ন্যায়বিচার, যা বহুদিন পর ঘটতে চলেছে। এই আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে আমরা খুশি হব।
এদিকে বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই দুই জনই বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শহীদুল হক বলেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা সীমান্ত হত্যাবন্ধসহ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, স্থল সীমান্ত চুক্তি, বাণিজ্য, তিস্তার পানি বণ্টন, টিপাইমুখ জলবিদ্যুত কেন্দ্র, কৃষি, বাণিজ্য, পরিবেশ ও কানেকটিভি নিয়ে কথা বলেছি। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি আমরা তুলেছি। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যুতেও ভারত দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে রঞ্জন মাথাই বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। ভারত প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্ক আরও উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে সম্প্রতি দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বন্দী বিনিময় ও ভিসা সহজীকরণ চুক্তি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বন্দী বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের কারাগারে আটক উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে নাকি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দেশে ফিরিয়ে নেবে প্রশ্ন করা হলে রঞ্জন মাথাই স্পষ্ট কোন জবাব না দিয়ে বলেন, অনুপ চেটিয়ার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যক্রমের প্রমাণ রয়েছে।
সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। হত্যা বন্ধে ‘ধৈর্য্য ধারণ’ ও ‘সীমান্তকে অপরাধমুক্ত করা’ এই দুই কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে ভারত। গত বছর ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিএসএফের হাতে ১০ বাংলাদেশী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে কিশোরী ফেলানি হত্যা প্রসঙ্গে তিনি ‘কিছু জানেন না’ বলে মন্তব্য করেন।
তিস্তার পানি চুক্তি বিষয়ে ভারত কতটুকু এগিয়েছে বা কবে নাগাদ চুক্তিটি স্বাক্ষর হতে পারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা কোন ক্যালেন্ডার ধরে দিনক্ষণ জানাতে চাই না। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে কাজ চলছে। খুব দ্রুত এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রহ থাকলেও পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তিতে তিস্তা চুক্তি ঝুলে যায়। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরের সময় এই চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল।

No comments

Powered by Blogger.