হাইকোর্টে ঝুলে আছে ১২ হাজার মামলা- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাওনা

 বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাওনা আছে। মামলার কারণে সেসব অনাদায়ী টাকা আদায় প্রক্রিয়াও থমকে গেছে।
এখন পর্যন্ত এ ধরনের ১২ হাজার মামলা হাইকোর্টে ঝুলে আছে। এ অবস্থায় জনবল বাড়িয়ে হলেও যত দ্রম্নত সম্ভব মামলা নিষ্পত্তি করে এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের জোর তাগিদ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
শনিবার জাতীয় সংসদে কমিটির সভাপতি আ হ ম মুসত্মফা কামালের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এদিকে বিচার ও হিসাব বিভাগের সদস্যদের সম্পৃক্ত করে আয়কর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন, আয়কর রিটার্ন দাখিল সহজীকরণ ও পূর্বে কর দেয়া নিজ সম্পত্তি বা অর্থ পুঁজি হিসাবে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পুনরায় কর দেয়ার বিধান বাতিল করে তা আগামী বাজেটের মাধ্যমে সংশোধনের সুপারিশ করেছে কমিটি। বৈঠকে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, চলতি অর্থবছরে ৬১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লৰ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ লৰ্যমাত্রা কিভাবে অর্জন করা যাবে এবং এরপরও আরও অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সুনির্দিষ্ট কিছু পরামর্শ ও দিকনিদের্শনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বছরের পর বছর ধরে অনাদায়ী সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় ও ঝুলে থাকা ১২ হাজার মামলার নিষ্পত্তিতে এখনি পদক্ষেপ নিতে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
সভাপতি জানান, বৈঠকে এবারের বাজেটের মাধ্যমে সংশোধনের জন্য তিনটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। আয়কর রিটার্ন বা স্বনিধারণী আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালাকে সহজ করতে বলা হয়েছে। আয়কর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। প্রচলিত বিধি অনুযায়ী, আয়কর বিভাগ থেকে পদোন্নতি পেয়ে পেয়ে একজন কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালের সদস্য হন। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের প্রশ্নে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের ঘটনা ঘটে। সমতাভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগ ও হিসাব বিভাগ থেকে একজন করে সদস্যকে সম্পৃক্ত করে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, নিজ সম্পত্তি বা অর্থ পুঁজি হিসাবে ব্যবহারের ৰেত্রে নতুনভাবে কর ধার্য না করা। তিনি বলেন, দেখা যায়, কারও অলস টাকা পড়ে আছে। তিনি সে টাকার ওপর ন্যায্য করও দিয়েছেন। এখন সে টাকা তিনি পরিবারের ছেলে, মেয়ে বা যেকোন এক সদস্যের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে চাইছেন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, পূর্বে কর দেয়া অর্থ বা সম্পদ কারও মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে আবারও নতুন করে কর দিতে হয়। সেক্ষেত্রে কমিটির সুপারিশ হচ্ছে, পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বিনিয়োগ হলে যেন পুনরায় কর দিতে না হয়।
আয়কর আইন করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৮৪ সালে যখন সংসদ অধিবেশন চলত না তখন আয়কর অধ্যাদেশ করা হয়। আধুনিক এ যুগে এই অধ্যাদেশ নিয়ে সমস্যায় পড়েন বিদেশীরা। অধ্যাদেশ সম্পর্কে অবহিত না থাকার কারণে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের মাধ্যমে তারা এ বিষয়ে কোন তথ্য পান না। দেশের অর্থনৈতিক গতিধারাকে ইতিবাচক মনত্মব্য করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও আমরা মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে পেরেছি। বিশ্ব মন্দার কারণে বিশ্বের পুঁজি বাজারের অর্থ ৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে নেমে ৩১ ট্রিলিয়ন ডলার এবং বিশ্ব জিডিপি ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নেমে এসেছিল। সে সময়ও আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এক অর্থে স্থিতিশীল ছিল।

No comments

Powered by Blogger.