মেহেরবা প্লজায় কাজের মেয়ে খুন স্ত্রী-পুত্রসহ ভবন মালিক আটক

 রাজধানীতে দুই মহিলাসহ তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তোপখানা রোডের মেহেরবা প্লাজার মালিকের গৃহপরিচারিকাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ওই ভবনের মালিক মোঃ মহসিন বাকের (৬১), তার স্ত্রী জহুরা (৫০),
ছেলে আরমান বারেক (২০) ও কাজের মেয়ে জামিলাকে (১৪) আটক করেছে। পুলিশ জানায়, আপত্তিকর কিছু দেখে ফেলায় অথবা কাজের মেয়েকে পাশবিক নির্যাতনের পর ১০ তলা ভবন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হতে পারে। আগারগাঁওয়ে এক মহিলার মস্তকবিহীন পচাগলা লাশ উদ্ধার করেছেপুলিশ। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে এক যুবককে খুন করা হয়েছে। এদিকে মিরপুরে ৫ তলার ছাদ থেকে পড়ে এক কলেজছাত্রীর রহস্যজনক মৃতু্য হয়েছে। বংশালে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দু'জন নিহত হয়েছে। শনিবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, শনিবার সকালে পুলিশ শাহবাগ থানাধীন তোপখানা রেডের ৩৩ নম্বর মেহেরবা পস্নাজার ১১ তলা ভবন ও ৩৪ নম্বর ১৫ তলা ভবনের মাঝখানে গলিতে জহুরা বেগম (৪০) নামে এক কাজের মেয়ের ডান হাত কাটা বীভৎস লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানায়, নিহত জহুরা মেহেরবা প্লাজার মালিক ১০তলার বাসিন্দা মোঃ মহসিন বাকেরের বাড়িতে ১৬ বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করত। শুক্রবার রাতে যে কোন সময় ওই ভবন থেকে কাজের মেয়ে জহুরাকে নির্যাতনের পর নিচে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের ছোট বোন ফাতেমা বেগম পুলিশকে জানায়, যৌবন বয়স থেকে বোন জহুরা ওই বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করত। এ জন্য প্রতিমাসে তাকে আড়াই হাজার টাকা বেতন দিত। এই টাকায় একমাত্র ছেলে সাজুকে (১৩) পড়ালেখা করাত। প্রায়সই গৃহকর্তা মোঃ মহসিন বাকের মদ খেয়ে বোন জহুরাকে মারধর করত। এমনকি তার স্ত্রী জহুরা ও ছেলে আরমানও বোন জহুরাকে নির্মম নির্যাতন করত। গত মাসে বোন জহুরাকে বাসা থেকে বের করে দেয় গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী। এতে বেতনও দেয়নি তারা। এরপর থেকে বোন মতিঝিল টিএ্যান্ডটি কলোনিতে আমার বাসায় থাকত। এ জন্য বোন জহুরা প্রায়শই তাদের ভয়ে আতঙ্কে থাকত। কয়েকদিন আগে মেহেরবা প্লাজার গার্ড পুনরায় বোন জহুরাকে ওই ভবনে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী ও তার ছেলে মিলে আমার বোন জহুরাকে হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আঃ মালেক মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গৃহপরিচারিকা জহুরাকে খুন করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা ময়নাতদন্তের পর আমল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী তার যুবক ছেলে ও কাজের মেয়েকে আটক করে বিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহতের স্বামীর নাম নূরুল হক। পিতার নাম গফুর আলী। তাঁর গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ থানার ১নং বগারচর গ্রামে।
এদিকে এদিন রাতে পুলিশ শেরেবাংলা নগর থানাধীন আগারগাঁও শমরাত ভবনের পেছনে কাজী অফিসের ঝিলের মাঝখান থেকে অজ্ঞাত (৩০) এক মহিলার মস্তকবিহীন পচাগলা ভাসমান লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানায়, ৩/৪ দিন আগে কে বা কারা ওই মহিলাকে অপহরণের পর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এরপর তার শরীর থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে দুবৃত্তরা। তার লাশ গুম করার জন্য এই ঝিলে ফেলে যায়। নিহতের পরণে গোলাপি সেলোয়ার ও কামিজ ছিল। একই দিন বিকেলে পুলিশ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চর থানাধীন বেগুনবাড়ি এলাকার ৪/১/এফ/১ নং নির্মাণাধীন ভবনের পিলার সংলগ্ন ডোবা থেকে অজ্ঞাত (২০) এক যুবকের ৰত-বিৰত পচাগলা লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানায়, সন্ত্রাসীরা ৩/৪ দিন আগে অজ্ঞাত যুবককে কুপিয়ে স্বাসরোধে হত্যা করে তার লাশ এখানে ফেলে যায়। নিহতের শরীরে কোন বস্ত্র ছিল না।

৪ লাশ উদ্ধার
অন্যদিকে শনিবার দুপুরে মিরপুর থানাধীন মনিপুর এলাকার ৭৬৪/১/এ নং ভবনের ৫ তলার ছাদ থেকে পড়ে মাতলুয়া আক্তার (২১) নামে এক তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত মাতলুয়া আক্তার তেজগাঁও কলেজের অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। নিহতের পরিবার জানায়, দুপুরে মাতলুয়া ৫ তলার ছাদে কাপড় শুকাতে যায়। সেখান থেকে নিচে পড়ে তার মৃতু্য হয়েছে। পুলিশ জানায়, নিহতের মৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পিতার নাম ফিরোজ মিয়া। ১ বোন ১ ভাইয়ের মধ্যে বড়। একই দিন সকাল ১১টায় বংশাল থানাধীন সাত রওজা আবুল হাসনাত রোডের লন্ডন বাড়ির ভাড়াটিয়ার কৰে বিদু্যতের সুইচ চাপ দিতে নিয়ে ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয় জাকির (৪) নামে এক শিশু। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনলে কার্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। নিহতের পিতার নাম জায়েদ। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানাধীন নটেশ্বর গ্রামে। অন্যদিকে এদিন সকালে লালবাগ থানাধীন আজিমপুর মাতৃসদনের সামনে মিরপুর-সদরঘাটগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় আজহার শেখ (৬৫) নামে এক রিকশাচালকের মৃতু্য হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ বাসটি আটক করে। রিকশাচালকের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। নিহতের পিতার নাম মৃত বজলু শেখ। সে কামরাঙ্গীরচর থানাধীন ঝাউলাহাটি এলাকার নূর মেম্বরের বাড়ির ভাড়াটিয়া। ৩ ছেলে ১ মেয়ের জনক সে। এ ছাড়া শুক্রবার গভীর রাতে বিমানবন্দর থানাধীন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস চাপায় মুসলিম মিয়া (৪৫) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পিতার নাম মৃত আকমল আলী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার লাঙ্গলকোট থানাধীন মাকতলি গ্রামে।

No comments

Powered by Blogger.