ভারতের কাছে টিপাইমুখ প্রকল্পের আরও তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ

প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্পের বিষয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশ আরও তথ্য চেয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ভারতের অসম ও মণিপুর রাজ্যের সীমানায় বরাক ও তুইপাই নদীর মোহনায় প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুত প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই বিষয়ে গঠিত যৌথ সমীক্ষা দলের বৈঠকে এ তথ্য চাওয়া হয়।
নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিতব্য সমীক্ষা দলের পরবর্তী বৈঠকে বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী আরও তথ্য দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
দু’দিনব্যাপী এই বৈঠকের শেষ দিন ছিল শনিবার। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ সমীক্ষা দলের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এর নেতৃত্ব দেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানিবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আনসার আলী মিয়া, যৌথ নদী কমিশনের পরিচালক আহসান উল্যাহ ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফাহমিদা খাতুন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) মাশফি বিনতে শামস। ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কমিশনার (গঙ্গা) এন কে মাথুর। অন্য সদস্যরা হলেন ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা সুনীল কোহলী, যুগ্ম কমিশনার (গঙ্গা) টি এস মেহরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের এক প্রতিনিধি এবং ডেপুটি কমিশনার (গঙ্গা) এম এস ভমরা। ভারতের প্রতিনিধি দলটি গত মঙ্গলবার ঢাকায় আসে। টিপাইমুখ সংক্রান্ত যৌথ সমীক্ষা দলের বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে গঠিত যৌথ কমিটি আলোচনায় বসে।
বৈঠক সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশকে প্রকল্পের বেশ কিছু নথিপত্র দেয় ভারত। প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য যাচাইয়ের পর বাংলাদেশ শনিবার ভারতের কাছে আরও কিছু তথ্য চেয়েছে। ভারত সেসব তথ্য সরবরাহে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা টিপাইমুখ প্রকল্পের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে তথ্য পর্যালোচনা করছেন। তাঁরা মূলত দেখছেন, টিপাইমুখ জলবিদ্যুত প্রকল্প হওয়ার আগে সেখানে নদী প্রবাহ কোন অবস্থায় আছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কি অবস্থায় যাবে। তারা সমীক্ষায় সম্ভাব্য সব ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। টিপাইমুখ প্রকল্প হলে অতিরিক্ত পানি মজুদ করে রাখার ফলে ভূমিকম্প হবে কি না, বরাক-সুরমা-কুশিয়ারা নদীর প্রবাহ পরিবর্তন হবে কি না, বর্ষা মৌসুমের আগেই বাংলাদেশের হাওর এলাকায় আকস্মিক বন্যা হবে কি না এবং বোরো ধান রোপণে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে কি না। তাছাড়া টিপাইমুখ ড্যাম ভেঙ্গে গেলে দু’দেশের সম্ভাব্য কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে তারও হিসাব-নিকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যৌথ সমীক্ষায় বাংলাদেশ অংশে প্রভাব মূল্যায়নে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এবং গাণিতিক মডেলিংয়ে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউইএম) পরামর্শক হিসাবে কাজ করছে। যৌথ সমীক্ষার কার্যপরিধি অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রায় ১৪টিরও বেশি বিষয়ের ওপর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে।
সূত্র মতে, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদীগুলো নিয়ে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ধারাবাহিক বৈঠক শুরু হবে।
এদিকে শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, যৌথ সমীক্ষা দলের মধ্যে প্রকল্পের কারিগরি দিক পর্যালোচনা করে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যৌথ সমীক্ষা দল কিছু নতুন কারিগরি সুপারিশ করেছে। ডিটেলইড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) এবং পরিবেশগত প্রভাব বিশ্লেষণ (ইআইএ) রিপোর্ট ভারত আগেই বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছিল। বাংলাদেশ সেটির প্রশংসা করে ভারতকে আরও কিছু অতিরক্ত ডাটা এবং রিপোর্ট দিতে অনুরোধ করেছে। ভারত তাতে সায় দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের সুবিধাজনক সময় অনুযায়ী ভারতে যৌথ সমীক্ষা দলের পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.