নেতাকর্মীদের নিয়ে ৮০তম জন্মদিন পালন করলেন এরশাদ

ৰমতা ছাড়ার পর এবারেই প্রথম ঘটা করে নিজের জন্মদিন পালন করেছেন সাবেক স্বৈরশাসক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। 'শুভ-শুভ-শুভ দিন এরশাদ সাহেবের জন্মদিন' এমন মিছিল স্লোগানে দিনভর মুখরিত ছিল বনানী জাতীয় পার্টি কার্যালয়।
রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে এরশাদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা পোস্টার ছিল চোখে পড়ার মতো। মহাজোটের অন্যতম শরিক হওয়ার কারণে এবারের জন্মদিনে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও ছিল বাড়তি উৎসাহ উদ্দীপনা। কোন বাঁধা ও শৃঙ্খলমুক্ত জন্মদিন পালন করেছেন তিনি। বন্দী অবস্থায় থেকে জন্মদিন পালন করতে হয়নি এজন্য অনেকেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে ৮০তম জন্মদিনে স্ত্রী রওশন ও সন্তান এরিখ কাউকেই আনুষ্ঠানিকতায় চোখে পড়েনি। সাবেক স্ত্রী বিদিশার সদ্য দায়ের করা ৬০ কোটি টাকার মানহানির মামলার নতুন বোঝা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। ৮১ তম বছরকে সামনে রেখে, বর্তমানে দেশের প্রধান ছয়টি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন সাবেক এই স্বৈরশাসক। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদু্যত, গ্যাস, পানি, টেন্ডার, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বলেছেন, এসব সমস্যার কারণে দেশের মানুষের নাভিস্বাস উঠেছে। সঙ্কট সমাধানে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি মহাজোট সরবকারের কাছে এসব সমস্যা সমাধান করা কোন বিষয় নয়। সরকারের সফলতা অনেক। আন্তরিকভাবে কাজ করলেই এসব সমস্যারও সমাধান হবে। নিজ উদ্যোগে সন্ত্রাস, টেন্ডার ও চাঁদাবাজি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার কথা জানান তিনি। শনিবার ৮০তম জন্মদিন উপলৰে দলের বনানী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি।
দীর্ঘ সময় পর এবার ঘটা করে পালন করা হলো এরশাদের জন্মদিন। দলের পৰ থেকে সারাদেশসহ কেন্দ্রীয়ভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে মধ্যে ছিল কেক কাটা, শুভেচ্ছা বিনিময়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রক্তদান কর্মসূচী, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
সাংবাদিকদের এরশাদ বলেন, আমরা জাতি হিসেবে স্বাধীন হলেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে তিনি দোয়া চেয়ে বলেন, মানুষের কাছ থেকে অনেক ভালবাসা পেয়েছি। দলীয় নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনায় আমি আনন্দিত। আগামী দিনে দেশের জন্য কিছু করে যেতে চাই। আমি হয়ত একদিন থাকব না। কিন্তু আমার প্রসত্মাবিত প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা একদিন চালু হবেই হবে। দেশের প্রয়োজনে একদিন সবাই বিষয়টি অনুভব করবে। প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু করা না হলে ঢাকা শহরকে রৰা করা যাবে না। বর্তমানে প্রচলিত উপজেলা ব্যবস্থা দেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে।
সকাল ৯টায় পল্লীবন্ধু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এরশাদের নিজ বাসা বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কে কেক কেটে জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলের শীর্ষ নেতারা। জন্মদিন উপলৰে পল্লীবন্ধু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গুলশান মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রতিযোগিতায় রাজধানীর বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এসময় এরশাদ শিশুদের উদ্দেশে বলেন, আজকের এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিশুদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের নতুন দিগনত্মের সূচনা হলো। তোমরা বড় হও। সুনাম অর্জন কর। বেঁচে থাকলে আবারও তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে। এরপর ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে জাতীয় পার্টি বনানী কার্যালয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। জন্মদিনে দলীয় হাজারো নেতাকর্মী এরশাদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় কেক কাটা ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী। জাতীয় যুব সংহতির উদ্যোগে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে গরিব শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করে এরশাদ। বাদ আছর গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে পল্লীবন্ধু ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। দলের পৰ থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, বাদল খন্দকার, সুনীল শুভ রায়, এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, এসএম ফয়সল চিশতী, এস এম ইকবাল হোসেন রাজু, জহিরুল ইসলাম জহির প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.