আজ যত যুদ্ধবাজ... সভ্যতাবিনাশী শক্তি নিশ্চিহ্ন কর

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বাঙালীর ত্যাগের পরিমাণ অপরিমেয়। এর জন্য ত্রিশ লাখ প্রাণ উৎর্সগ করতে হয়েছে, দু'লাখ মা-বোনকে সম্ভ্রম দিতে হয়েছে এবং দেশের প্রচুর সম্পদ লুণ্ঠিত হয়েছে পাকহানাদার বাহিনী দ্বারা।
এমনই দুঃসহ বেদনার বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ ও মর্যাদাসম্পন্ন করার জন্য এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি সর্বমহলের। কারণ যুদ্ধাপরাধ হলো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এ অপরাধের ৰমা নেই। এরা জাতির শত্রু, মানবতার দুশমন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত করতে চেয়েছিল এরা। একাত্তরে এরা জয়ী হলে, কখনই বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বাঙালী জাতি নির্মূল হয়ে যেত। সভ্যতাবিনাশী, প্রগতিবিরোধী, অন্ধকারের পশ্চাৎপদ প্রতিক্রিয়াশীল এই শক্তিকে দেশ ও সমাজ থেকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে এ মাসেই শুরু হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এ বিচারে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সংস্কৃতিকর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন 'যুদ্ধপরাধীদের বিচারে ঐক্যবদ্ধ জাতি'_ স্লোগান নিয়ে ১৮ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এর মধ্যে দেশব্যাপী সংস্কৃতিকর্মীদের সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা ছাড়াও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। গত ৯ মার্চ থেকে টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে চলছে এ অনুষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরস কমান্ডারস ফোরাম ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে এখন চলছে গণসঙ্গীতের পরিবেশনা। গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের তত্ত্বাবধানে শনিবার এ অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক ও গণসঙ্গীত পরিবেশন করে ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সঙ্গীত একাডেমী, দৃষ্টি ও স্বভূমির শিল্পীরা। একক কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন_ শিল্পী রুপু খান, দিলীপ হালদার, আরিফ রহমান, প্রলয় সাহা, লাইলী ইসলাম, শামীমা রহমান মুন্নী, আবিদা রহমান সেতু প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন লে. কর্নেল (অব) নূর নবী খান।
তবে প্রতিবাদী এই গণসঙ্গীতের অনুষ্ঠান শুরু হয় একক কণ্ঠের গান দিয়ে। প্রথমেই মঞ্চে আসেন রম্নপু খান। গেয়ে শোনান_ কুহু কুহু কোথায় ডাকেরে... এবং পদ্মা মেঘনা সুরমা যমুনা... গান দু'টি। প্রলয় সাহা এসে পরিবেশন করেন এই মাটিতে জন্ম আমার, এই মাটিতেই মরণ যেন হয়... গানটি। তার পরই মঞ্চে উঠে আসেন স্বভূমির শিল্পীরা, পরিবেশন করেন প্রতিবাদী গণসঙ্গীত। সমবেতকন্ঠে তাঁরা গেয়ে শোনান তিনটি গান_ আজ যত যুদ্ধবাজ দেয় হানা..., আমার প্রতিবাদের ভাষা... এবং শুনেছ কি কেউ নতুন দিনে...। দলীয় পরিবেশনার পরে শামীমা রহমান মুন্নীর একক কণ্ঠে গীত হয়ে বেজে ওঠে_ ও আমার বাংলা মাগো... এবং যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছি... গান দু'টি। দলীয় পরিবেশনায় দৃষ্টির শিল্পীরা গেয়ে শোনান_ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে..., ৩০ লৰ জীবন দিয়ে আনছি স্বাধীনতা... এবং কোটি প্রাণ বাঙালীর মুক্তিবাহিনী...গানগুলো। দিলীপ হালদার পরিবেশন করেন_ এই না বাংলাদেশের গান গাইতেরে দুঃখে... এবং মুক্তিযোদ্ধা জাগো মুক্তিবাহিনী জাগো...। সমবেত পরিবেশনায় ওস্তাদ মোমতাজ আলী সঙ্গীত একাডেমীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন_ ইয়াহিয়ার গৃহবাস ভুট্টার ৰেতে করছে সর্বনাশ... এবং বাংলাদেশের মাটি ওগো...গান দু'টি। একক কণ্ঠে আরিফ রহমান পরিবেশন করেন_ বন্ধু তুমি জান না, বন্ধু তুমি বুঝ না... এবং তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর...। রম্নপু মজুমদার পরিবেশন করেন_ দিন যায় কান্দিয়া কান্দিয়া... এবং মৃত্যুকালে পাপী আল্লাহ বলে না...। শাহীনা হাসান মুন্নী গেয়ে শোনান_ সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তে তুমি... এবং একতারা তুই দেশের মাটি...গান দু'টি। এভাবে গণসঙ্গীতের এ আসর চলে রাত ন'টা পর্যনত্ম। ১৮ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান চলবে আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত। আজ রবিবার বিকেলেও এখানে রয়েছে গণসঙ্গীতের পরিবেশনা।

No comments

Powered by Blogger.