ধূমপান কমানোর উপায়

ধূমপান মানবদেহে ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বর্তমানে দেশে দেশে ধূমপানবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি চলছে এই বিষয়ের ওপর গবেষণা।
সম্প্রতি এমনি এক গবেষণায় জানা গেছে, তামাকজাত পণ্য বা সিগারেটের প্যাকেট যদি আকর্ষণীয় না হয়ে খুবই সাধারণ মানের হয়, তবে তা ধূমপানের হার কমিয়ে দেয়। জার্মান ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় এক লাখ দশ হাজার মানুষ তামাক সেবন বা ধূমপানের কারণে মৃত্যুবরণ করছে। তাই ধূমপান রোধে এখন নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
জার্মান ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় এক লাখ দশ হাজার মানুষ তামাক সেবন বা ধূমপানের কারণে মৃত্যুবরণ করছে। রোগাক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। তাই ধূমপান রোধে এখন নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
‘প্রতিদিন যদি ৩০০ যাত্রী নিয়ে একটি করে জাম্বে জেট ধ্বংস হয়, তাহলে মানুষ আর প্লেনে উঠতে চাইবে না।’ বলেন, জার্মান ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রের মুখপাত্র মার্টিনা লাঙার। অথচ ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। ধূমপায়ীরা জানেন, ফুসফুস ও গলার ক্যানসারসহ নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তাঁদের অধূমপায়ীদের চেয়ে অনেক বেশি, তবু সিগারেটের আকর্ষণকে পাশ কাটাতে পারেন না অনেকেই।
জার্মানির এক-চতুর্থাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ নিয়মিত সিগারেটের দিকে হাত বাড়ান। বাংলাদেশ, কোরিয়া, রাশিয়ায় ধূমপায়ীর হার আরও অনেক বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে জনসাধারণের অর্ধেকেরও বেশি ধূমপানে আসক্ত।
জার্মানিতে ধূমপান নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলে আসছে। বার, রেস্তরাঁ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ধূমপান নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বহু উত্তেজক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে জার্মানির সব অঙ্গরাজ্য ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশনের স্বাস্থ্য ও ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা উপস্থাপন করা হয়েছে।
সিগারেটের প্যাকেটে ভয়াবহ ছবি
এই নীতিমালায় বিশেষ নতুনত্ব হলো : ভবিষ্যতে সিগারেটের প্যাকেটে আঁতকে ওঠার মতো ছবি থাকবে, যা ধূমপানের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিকটা তুলে ধরবে। ধূমপানের কারণে যে সব রোগ সচরাচর দেখা যায়, সেগুলো হলো, ফুসফুসের ক্যানসার, ফুসফুসের নানাবিধ রোগব্যাধি, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি। এই জাতীয় রোগে আক্রান্ত মানুষদের ফটো লাগানো থাকবে সিগারেটের প্যাকেটে। অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা ও ব্রাজিলে এই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক। ‘ধূমপান মুখ গহ্বরের ক্যানসারের কারণ’– এই কথাটি সিগারেটের প্যাকেটের ওপর লেখা থাকে সে সব দেশে। সেই সঙ্গে যুক্ত করা হয় ঐ ক্যানসারে আক্রান্ত এক ব্যক্তির ছবি। যা দেখে ক্রেতারা আঁতকে ওঠেন। জার্মানিতে এখন পর্যন্ত সিগারেটের প্যাকেটের ওপর শুধু মাত্র সতর্কীকরণ বাণীই দেখা যায়, যেমন সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে ‘সিগারেট মৃত্যু ঘটায়!’
সমালোচনার সুর

তবে এই ধরনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে জার্মান সিগারেট সংঘের পক্ষ থেকে। এই সংঘের মুখপাত্র ডিয়র্ক পানগ্রিটস ডয়েচে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে সিগারেটের প্যাকেটের ৭৫ শতাংশ সতর্কতাসূচক বাণী ও ফটোর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সিগারেটের নিজস্ব মার্কার জন্য তেমন কোন জায়গাই আর থাকবে না। এই ধরনের পরিকল্পনা মেনে নেয়া যায় না।” তামাক কোম্পানি রেমটসমা এই নীতিমালার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। অবশ্য জার্মান সিগারেট সংঘ, যেটি অনেক তামাক কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত, ক্রেতাদের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টিকে অবহেলা করে না। ১৮ বছরের কম বয়সের তরুণরা যাতে সিগারেট কিনতে না পারে, সে ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে সংঘটি।
ফলাফল ইতিবাচক হতে পারে
বাস্তবিকই নানা প্রচারণার ফলে তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা কমে গিয়েছে। এই গ্রুপটিকেই কাছে টানতে চায় তামাক শিল্পকারখানাগুলো। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, প্রতি দশ জনে নয় জন তরুণই সিগারেটের প্যাকেটে সুস্পষ্ট সতর্কতামূলক দিকনির্দেশনা আশা করেন। জার্মানিতেও অধিকাংশেরই একই মত।
ক্যানসার গবেষক মার্টিনা লাঙার জানান, ‘‘ভয়ঙ্কর ছবিগুলো কাজ লাগছে। আমাদের সমীক্ষা থেকে জানতে পেরেছি, ফটোযুক্ত সতর্কবাণী ধূমপান রোধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।”
ধূমপানের কুফল সম্পর্কে ভোক্তাদের নিñিদ্রভাবে সবরকম তথ্য দেয়া হয়েছে, সিগারেট লবির এই যুক্তি খ-ন করে মার্টিনা বলেন, ‘‘বিশেষ করে শিক্ষাবঞ্চিত মানুষদের মধ্যে এই বার্তা ঠিকমতো পৌঁছাচ্ছে না। আর যাঁরা অনেক বছর ধরে ধূমপানে অভ্যস্ত, তাঁদের কাছে সতর্কতামূলক উক্তির তেমন কোন আবেদন আর নেই।”
এই গবেষকের মতে, এ জন্য কৌশলটা মাঝে মাঝে পরিবর্তন করা দরকার। ছবিসহ সতর্কতা বাণী ব্যয়বহুল নয় এবং কার্যকরী এক মাধ্যম, যা প্রতিটি ধূমপায়ীর কাছে সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে।
একটি সিগারেটেই মারাত্মক ক্ষতি
সিগারেট সংঘের প্রতিনিধি পানগ্রিটস মনে করেন, শুধু তামাকই স্বাস্থ্যহানিকর একমাত্র বস্তু নয়, বেশি চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়াও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই মিষ্টি উৎপাদনকারীদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কেননা তারা তো একই নৌকার সহযাত্রী।
মার্টিনা লাঙার-এর মতে, ‘‘এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা চলে না। তামাকের রয়েছে বিশেষ ক্ষতিকর প্রভাব। ধূমপায়ীদের অর্ধেকেই মারা যায় তামাক সেবনের কারণে দেখা দেয়া নানা রকম অসুখ বিসুখে।” চিনি কেবল অতিরিক্ত মাত্রায় খেলেই স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। কিন্তু একটি মাত্র সিগারেটই রয়েছে ‘অপরিমেয় বিষের’ বোঝা, যা শরীরে ক্ষতিকর পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
জুবায়ের আব্দুল বারি

No comments

Powered by Blogger.