উত্তরায় শিশু গৃহকর্মীকে গণধর্ষণের পর হত্যা, গ্রেফতার ৪- পল্টনে চাকরির লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ, দুই আদম ব্যবসায়ী গ্রেফতার

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উত্তরায় গণধর্ষণের পর এক শিশু গৃহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।
এদের প্রত্যেককে ৩ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। অপরদিকে পল্টন থানাধীন এলাকায় চাকরির প্রলোভনে ফেলে এক নারীকে ধর্ষণ করেছে দুই আদম ব্যবসায়ী। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। আজ তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল থেকে মোছাম্মৎ জান্নাত (৯) নামে এক শিশু গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোহাম্মদ আলীম মাহমুদ জনকণ্ঠকে জানান, সানজিদা আক্তার (২৭) নামে এক গৃহকর্ত্রী রাত ১০টার দিকে অচেতন অবস্থায় জান্নাতকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যান। আধঘণ্টার মধ্যেই জান্নাত মারা যায়। এ সময় সানজিদা পালানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি সন্দেহ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়। তখন রাত সাড়ে ১০টা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে হাসপাতালে যায়। চিকিৎসকরা জানান, জান্নাত গণধর্ষিত হয়েছে। গণধর্ষণের ফলে অসুস্থ হয়ে জান্নাতের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পালানোর চেষ্টাকারী সানজিদাকে কৌশলে আটকে রাখেন। পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছে সানজিদাকে হেফাজতে নেয়। আর হাসপাতালে রোগী ভর্তির সময় রেজিস্টারে থাকা নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে। এদিকে রাতেই গৃহকর্তা খাদিমুল বাশার তার দুই বন্ধুকে নিয়ে থানায় যান। তাঁরা জান্নাতের মৃত্যুর বিষয়টি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে দফারফা করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি সন্দেহ হলে গৃহকর্তা খাদিমুল বাশার ভূঁইয়া (৩৪), তার দুই বন্ধু কামরুল ইসলাম (৩৩) ও রফিকুল ইসলামকে (৩৫) আটক করা হয়।
এরপর আটককৃতদের নিয়ে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় গৃহকর্ত্রী সানজিদা আক্তারের ভাই জুবায়েদ হোসেনকে (১৮)।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তরা পশ্চিম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন ও খুনের অভিযোগে থানার উপ-পরিদর্শক সফিউল ইসলাম একটি মামলা দায়ের করেন। সকালে আটককৃত ৪ জনকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক আবু মিয়া জানান, দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে সোপর্দ করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেককে ১০ দিনের করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেককে ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।
জান্নাতের মা সুমি বেগম (৩৫) জানান, তার স্বামীর নাম মৃত হাবিবুর রহমান। তিনি ৩ বছর আগে ক্যান্সারে মারা গেছেন। তাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বড়কুশিয়া গ্রামে। ১০ মাস আগে পাশের গ্রামের মমতাজ নামের এক ব্যক্তি জান্নাতকে মাসিক ৫শ’ টাকা বেতন আর খাওয়া ও কাপড়চোপড় দেয়ার চুক্তিতে খাদিমুলের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেন। জান্নাত তার ৩ সন্তানের মধ্যে সবার বড়।
পল্টন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর জনকণ্ঠকে জানান, পল্টন থানার সামনে ঠিক রাস্তার ওপারে মরণচাঁদ মিষ্টির দোকানের ওপর থেকে নারীর চিৎকার ভেসে আসার সংবাদ পুলিশকে দেয় জনতা। তাৎক্ষণিকভাবে ওই ভবনের ওপরে গিয়ে পুলিশ ওই ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় মজিদ (৪৩) ও জাকির (৪১) নামে ২ জনকে। উদ্ধারকৃত নারীর দাবি, মজিদ ও জাকির ভাল চাকরি দেয়ার নাম করে বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ওই ভবনে নিয়ে যায়। হোটেলের তৃতীয় তলার অফিসে তাঁকে মিষ্টি জাতীয় খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে। খাবার খেয়ে ওই নারী অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। ভোরে স্থানীয়দের মাধ্যমে ওই নারীর চেঁচামেচির সংবাদ পেয়ে ভবনের কলাপসিবল গেট ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করা হয়।
অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ওই নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা আদম ব্যবসায়ী। দায়েরকৃত মামলায় মজিদ ও জাকিরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আজ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকা মহানগর হাকিমের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.