স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা হলে আমি সাক্ষ্য দেবোঃ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, এ বিচারের দাবিতে গণজাগরণ শুরু হয়েছে শাহবাগের প্রতিবাদের মাধ্যমে।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রেখে রাজাকারদের ফাঁসি দেয়া যায় না। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজাকার উল্লেখ করে আগামীকালের (আজকের) মধ্যে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। বর্তমান স্বরাষ্টমন্ত্রী যুদ্ধের সময় পাকিস্তান প্রশাসনের পক্ষে কাজ করেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিচার হলে আমি নিজে সাক্ষ্য দেবো।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিষয় উল্লেখ করে বীরউত্তম খেতাব পাওয়া এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, একজনের অপরাধ কম তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে আর আরেকজনের অপরাধ বেশি, তাকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন। এটা আপস হয়েছে।
গতকাল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে উদ্বোধনী ও সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চত্বরে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বঙ্গবীরের স্ত্রী বেগম নাসরিন সিদ্দিকী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীরপ্রতীক প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি (জেপি)’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় পার্টি (জাপা)’র প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগকে দাওয়াত দিলেও সংগঠনটির পক্ষ থেকে কোন প্রতিনিধি উপস্থিত হননি বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, জামায়াতে ইসলাম যদি মনে করে তারা পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলাম, তাহলে বাংলাদেশে তাদের ঠাঁই নাই। তারা ঘাতক। আর যদি দলটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হয় তাহলে তাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য মাঠে নামতে হবে। এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব ইসলামী দলই জামায়াত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, শাহবাগের সমাবেশ যদি নিরপেক্ষ হয় আমি সঙ্গে আছি। আর যদি আওয়ামী লীগের হয়, আমি এ সমাবেশকে ঘৃণা করি। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজাকাদের ফাঁসি আমিও চাই। কিন্তু এক রাজাকারের ফাঁসি আরেক রাজাকার দিতে পারে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে কেউ যোগদান করলে হয় মুক্তিযোদ্ধা আর অন্য দলে যোগ দিলে হয় রাজাকার। বড় দুটি দল দেশের রাজনীতি ধ্বংস করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের যুবকরা শাহবাগে প্রতিবাদ করতে নেমেছে। তাদেরকে দমিয়ে রাখা যাবে না। সরকার প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এটাকে আওয়ামীকরণ করার চেষ্টা চলছে। দলীয়করণ করলে ভবিষ্যতে মুশকিলে পড়তে হবে। ভুল করবেন। তিনি বলেন, যে রায় হয়েছে তাতে জনগণ সন্তুষ্ট নয়। দলীয় সরকারে অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবেন না। জাতীয় নেতৃবৃন্দকে এক সঙ্গে বসে একটা সমাধান করতে হবে।
কাউন্সিলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, মহাজোট সরকারকে বিতাড়িত করতে এখন একটি জাতীয় ঐক্যের দরকার। বৃহৎ জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে। বুলেটে নয়, ব্যালটে এ সরকারকে পরাজিত করতে হবে। আ স ম আবদুর রব বলেন, নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হচ্ছে। বিশেষ একটা গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের শক্তি কুক্ষিগত করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। শাহবাগের আন্দোলনের ফসল কেউ নিজের ঘরে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এজন্য সচেতন থাকতে হবে ব্যক্তি ও দলের প্রতি। চোরাবালিতে যেন এ আন্দোলন হারিয়ে না যায়। যারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদের বাংলাদেশের ঠাঁই নাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অবশ্যই বাংলার মাটিতে করতে হবে। তিনি বলেন, বৃটিশ আইন দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে না। নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও আইন পরিবর্তন করতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমাদের মুক্তি দিতে পারে না। দুটি দল বাদে বাকি সব দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও তাদের নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি খুব হিসাবি দল। হিসাব করে চলে। তারা সাপও মারে না লাঠিও ছাড়ে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগও এদেশে কোন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল নয়। যদি পক্ষের দল হতো তাহলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে হাস্যকর রায় আসতো না।

No comments

Powered by Blogger.