কিলারদের নিয়ে পুলিশ এখনও অন্ধকারে ॥ by মোহাইমেনুল অনড়

 চবি ছাত্র মহিউদ্দিন ওরফে মাসুম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকা কিলিং মিশন সদস্যদের কোন হদিস এখনও মেলেনি। গত ৬ দিনেও হত্যাকা-ের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
ফলে এখনও উদঘাটন হয়নি মেধাবী এ ছাত্রের হত্যা রহস্য জট। এ অবস্থায় মামলার তদনত্মভার জিআরপি থেকে চট্টগ্রাম সিআইডিতে ন্যসত্ম করা হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতর এ প্রক্রিয়ার অনুমোদন প্রদান করেছে। সিআইডি সূত্র জানায়, যাবতীয় কাগজপত্র আসার পর দ্রম্নত এ মামলার নতুন তদনত্ম কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরম্ন করা হবে।
এদিকে, গত সোমবার থেকে জিআরপি পুলিশের নেয়া রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার পর্যনত্ম ঘটনার প্রধান প্রত্যদশর্ী গ্রেফতারকৃত চবি ছাত্র মোহাইমেনুলের কাছ থেকে খুনের কোন তথ্য আদায় করতে পারেনি পুলিশ। মোহাইমেনুল বারে বারে বলে যাচ্ছে সে শিবির কর্মী নয়। চার কিলারকে সে মাফলার জড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেও তাদের কাউকে সে চেনে না এবং এ ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে পুলিশ মনে করছে মোহাইমেনুল অনেক কিছু জানে, যা সে এখনও লুকাচ্ছে। সে বাইপাস সার্জারির রোগী হওয়ায় তাকে অত্যনত্ম সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়। মোহাইমেনুলের তিন বান্ধবীর খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে মনিরা ও আফরিন নামের দু'জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কোন তথ্য মেলেনি। মোহাইমেনুলকে জিআরপি ছাড়াও ডিবি, এসবি এবং ডিজিএফআই সদস্যরাও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কারও জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ের কোন কু এখনও পাওয়া যায়নি।
এদিকে, গত ৬ দিনেও মহিউদ্দিন হত্যা রহস্যের কুল কিনারা না হওয়ায় চট্টগ্রামে পুলিশ বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। আত্মীয়স্বজনকে চাপ দিয়ে মোহাইমেনুল ধরা দেয়ার পর যে আত্মতৃপ্তি সিএমপি কর্মকর্তারা প্রকাশ করেছিলেন তা ধীরে ধীরে স্থিমিত হয়ে গেছে। তবে তারা আশাবাদী। তাদের বদ্ধমূল ধারণা, এ হত্যাকা-ের সঙ্গে মোহাইমেনুলের সম্পর্ক থাকতে পারে।
চবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মোহাইমেনুলের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক পরিচয়ের জট কিছুতেই খুলছে না। তার ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য প্রায় একই হলেও একটি ছাত্র সংগঠনের বক্তব্য একেবারেই ভিন্ন। মোহাইমেনুলের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আফরিন জনকণ্ঠকে জানান, তাকে আমরা দীর্ঘ দুই বছর ধরে চিনি। তাকে এ সময়ে কোন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা তো দূরের কথা, কোন রাজনৈতিক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করতে দেখিনি। তিনি আরও জানান, মোহাইমেনুল সাধারণ একজন ছেলে। তবে মোহাইমেনুলের ঘনিষ্ঠ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেছেন, সে হলে আসন পাওয়ার জন্য প্রথমদিকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর অবশ্য সে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা জানি না। ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২য় বর্ষের কাস ক্যাপ্টেন শামীম জানান, মোহাইমেনুলকে আমরা সবাই ভাল ও নিরীহ ছেলে হিসেবে চিনি। তাকে দিয়ে এরকম ঘটনা ঘটানো কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে আমাদের বিশ্বাস। শামীম জানান, সে প্রথমবর্ষ থেকেই শারীরিক সমস্যার কারণে হলে থাকত । তবে সেখানে সে কোন ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত ছিল কিনা আমার জানা নেই। আর হলের রাজনীতির প্রসঙ্গে আমার আলাদা কোন ধারণা নেই।
একটি সূত্র জানিয়েছে, চবি ছাত্র মহিউদ্দিন হত্যার ঘটনায় হত্যাকা-ের দিন মহিউদ্দিনের সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মোহাইমেনুলকে আপোসের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে এ প্রতিশ্রম্নতিতে পুলিশের কাছে ধরা দেয়। রিমান্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হলেও কোন তথ্যই তার কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি পুলিশ। শিবিরের ঘোর কমর্ী হওয়ায় পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে তার থেকে কথা আদায় করা কষ্টসাধ্য।
দুটি প্রশ্ন ঘুরে ফিরে বার বার করা হলেও মোহাইমেনুল এসবের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ দুটি প্রশ্ন হল_ মোহাইমেনুল শিবিরের সঙ্গে জড়িত কিনা। থাকলে তা কতদিন ধরে। আর অন্যটি হচ্ছে ঘটনার সময় মোহাইমেনুল গুরুতর আহত হয়ে গোপনে চিকিৎসা নিয়ে গা ঢাকা দিল কেন। নগরীর নিরাময় কিনিকে যখন চিকিৎসা নেয় তখনও সে নিজের নাম গোপন করেছে। এর পেছনে কারণ কি-তা এখনও বের করতে পারেনি পুলিশ। দ্বিতীয় দিনের রিমান্ডেও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে মোহাইমেনুল ষোলশহর স্টেশনে মহিউদ্দিনের সঙ্গে একত্রে থাকার কথাটি এড়িয়ে উল্টো তাকে চেনেনা বলে দাবি করে যাচ্ছে। তবে পুলিশের অনেকের বদ্ধমূল ধারণা মোহাইমেনুল শিবিরের কমর্ী। এ কারণে সে অনেক কিছু গোপন করে যাচ্ছে।
এদিকে এত কিছুর পরও ইসলামী ছাত্রশিবির নিহত মহিউদ্দিন ও আহত মোহাইমেনুলকে এখনও পর্যনত্ম নিজেদের কর্মী বলে দাবি করে যাচ্ছে। কোনো ধরনের ভিত্তি ছাড়া। জামায়াত শিবির এখনও কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি যে, নিহত মহিউদ্দিন ও আহত মোহাইমেনুল তাদের কর্মী ছিল।
৩৪৫ আইনজীবীর বিবৃতি চট্টগ্রাম বারের ৩৪৫ আইনজীবী মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে চট্টগ্রামসহ রাজশাহী ও ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে গত শুক্রবার মহানগরীতে ইসলামী ছাত্র শিবিরের শানত্মিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের হামলা এবং গ্রেফতার ও মামলার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, সরকার গণতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরতন্ত্রী হয়ে উঠেছে।

No comments

Powered by Blogger.