স্কুল ফিডিং প্রকল্প-বিস্কুট বিতরণের নামে অর্থ লুটপাট by হামিদ সরকার

জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অপুষ্টি রোধে নেয়া স্কুল ফিডিং কর্মসূচি প্রকল্পে বিস্কুট বিতরণের নামে চলছে বিপুল অর্থ লুটপাট।
প্রকল্পের ব্যয়ের বিভিন্ন খাত নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিস্কুট বিতরণের জন্য ফি ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং মানরক্ষা ফি ছয় কোটি টাকা। আর প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৪৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি। অথচ চলমান এই প্রকল্পে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের দেয়া বিস্কুট খেয়ে ৫৭২ শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল বলে জানা গেছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগ ছাড়া দেশের ছয়টি বিভাগের ২০ জেলার ৭২টি উপজেলার খাদ্য নিরাপত্তাহীন এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ২০১০ সাল থেকে। প্রথমপর্যায়ে প্রকল্পটির জন্য ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় এক হাজার ১৪২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। দুই বছর পরে এসে এখন ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে ৩৮.০৭ শতাংশ বা ৪৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। খাদ্য নিরাপত্তাহীন এলাকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পুষ্টিমান বৃদ্ধি, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি ও বুদ্ধি বৃদ্ধি করাই মূল উদ্দেশ্য। প্রতিদিন প্রায় ২৩ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে পুষ্টিমানসম্পন্ন বিস্কুট বিতরণ করা। কিন্তু ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে অনিয়মিতভাবে বিস্কুট বিতরণ করা হয়। এ সময় বিস্কুট সরবরাহ কম ছিল। আর ২০১১ শিক্ষাবর্ষে মাত্র তিন মাস অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম চালু ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে আবার একনেকে গতকাল অনুমোদন দেয়া হয়।

সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী, শুধু বিস্কুট বিতরণের নামে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং বিস্কুটের গুণগতমান রক্ষার নামে ছয় কোটি টাকা। আর বড় অর্থ ব্যয় ধরা হয়েছে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ নামে। এজেন্সি ফি, প্রিমিক্স আমদানি ও সংশ্লিষ্ট পরিদর্শক ফি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৭৫ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এই তিনটি খাতে কত ব্যয় হবে তা পৃথকভাবে দেখানো হয়নি। এক দিকে বিতরণ কর্মসূচিতে বিতরণ ফি এবং অন্য দিকে পরিদর্শক ফি কেনÑ এটাই পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন। এখানে এজেন্সি খাতে ফি কেন রাখা হয়েছে সেটাও প্রশ্ন। পুষ্টিমান উন্নয়নের এই প্রকল্পে দেশী ও বিদেশী প্রশিক্ষণ খাতে প্রায় ছয় কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হলো মাত্র ২৮.২৮ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পুষ্টিহীনতা, দরিদ্রতার কারণে প্রতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়পর্যায়ে হাজার হাজার শিশু ঝরে পড়ছে। পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পর ৫২ শতাংশ শিশু আর স্কুলে যাচ্ছে না। দেশে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী ২০ লাখ শিশু পুষ্টিহীনতায় রয়েছে। একই ধরনের একটি প্রকল্প বর্তমানে ১০টি উপজেলায় চলমান রয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ও এমডিজি-২ এ অবদান রাখা, খাদ্য নিরাপত্তাহীন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিশু ভর্তি ও শিশু পুষ্টি হার বাড়ানো, শিক্ষার সক্ষমতার হার বাড়ানো এবং বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সক্ষমতার হার বাড়ানোই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিটি শিশুকে প্রতিদিন বিনামূল্যে ৭৫ গ্রামের পুষ্টিকর বিস্কুট দেয়ার কথা। আর এই বিস্কুটের প্রতিটি প্যাকেটের মূল্য ছয় টাকা। সরকারি ও বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক স্কুল, কমিউনিটি স্কুল, এবতেদায়ি মাদরাসা, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট ও অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের এ বিস্কুট দেয়া হবে।
       


No comments

Powered by Blogger.