রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের বিচার জনগণ মানবে না : তরিকুল ইসলাম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের প্রধান সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের কোনো বিচার এ দেশের জনগণ মানবে না।
বিরোধী দলের নেতাদের শায়েস্তা করার জন্য বিচার হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকারের ‘গ্লানি মোচনের’ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আসুন, নিজেদের ঘরের ভেতরে-বাইরের লোকদের বিচারের মাধ্যমে গ্লানি মোচন করি।’ মুক্তিযুদ্ধের পরও দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে দাবি করে তার বিচার করারও দাবি জানান তরিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এবং বর্তমানেও এই অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। তাই সরকারকে বলব, আসুন, এসব অপরাধের স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার নিশ্চিত করে করে পাপ ও গ্লানি মোচন করি। জামায়াতে ইসলামীর নামোল্লেখ না করে বিএনপির প্রধান মুখপাত্র বলেন, বিশেষ চিহ্নিত একটি বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই বিচারের আয়োজন চলছে।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলে গতকাল দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তরিকুল ইসলাম এ কথা বলেন।

স্বাধীনতার পর দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তরিকুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ৪০ হাজার প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাকে তৎকালীন সরকারের রী বাহিনী হত্যা করেছিল। তাদের মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরাও বিচারের জন্য কাঁদছেন।

সর্বহারা নেতা সিরাজ শিকদারের নিহত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাকে হত্যার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কোথায় সিরাজ সিকদার? তার হত্যার বিচারও আজ পর্যন্ত হয়নি।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল বলেন, বিএনপি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধার দল। এই দল কখনো সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। আমরাও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চাই। তবে বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের। কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিচার করলে জনগণ তা মানবে না।

পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার সরকার করছে নাÑ গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান তরিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, এক দিকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, পুলিশ রাজনৈতিক হাতিয়ার নয়, অন্য দিকে যে পুলিশ কর্মকর্তা বিরোধী দলের চিফ হুইপকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছেন, তাকে আজ (গতকাল) রাষ্ট্রপতির পুলিশ মেডেল দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারকে বলব, দয়া করে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় অঙ্গ সংগঠনের মতো ব্যবহার করবেন না। তাদের নিরপেভাবে কাজ করতে দিন।

তরিকুল অভিযোগ করেন, পুলিশ বাহিনীতে একটি জেলার সদস্যদের দাপট চলছে।

নির্দলীয় সরকারের দাবির পে যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, এক দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হচ্ছে, বিশ্বজিৎ দাসের মতো ছেলে রাজপথে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে নির্মমভাবে খুন হচ্ছেন, অন্য দিকে কারাগার থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের এরকম দলীয় চিন্তার কারণে জনমনে আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য আমরা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ল্েয নির্দলীয় সরকারের দাবি করছি।

সরকারের সাফল্য নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্যের রেশ ধরে তরিকুল বলেন, এতই যদি উন্নয়ন ও অগ্রগতি করে থাকেন, তা হলে নির্বাচন নিয়ে কেন এত ভয়? নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে বিজয়ী হয়ে আসুন। আমরা আপনাদের স্যালুট জানাব।

মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় তরিকুল ইসলাম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপি নেতা সেলিমা রহমান, মারুফ কামাল খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা রেহানা আখতার রানু, বিলকিস জাহান শিরিন, সুলতানা আহমেদ, ফরিদা ইয়াসমীন, নুর জাহান ইয়াসমীন, নার্গিস আলী প্রমুখ।
       

No comments

Powered by Blogger.