বিশ্ব মিডিয়ায় মাওলানা আযাদের বিচার-বিতর্কিত আদালতের রায়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘিত হওয়ার অভিযোগ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব মাওলানা আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির আদেশের খবরটি বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করেছে।
প্রভাবশালী অনেক সংবাদমাধ্যম ‘বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এই ট্রাইব্যুনাল যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড লঙ্ঘন করেছে, অনেকের এই অভিযোগও বেশ গুরুত্ব দিয়ে মিডিয়াগুলোয় প্রচার করা হয়েছে। অন্য দিকে রায়ে সরকার সমর্থকদের উল্লাসের বিষয়টিও স্থান পেয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়।

সোমবার ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মাওলানা আযাদকে ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন।

মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় ফাঁসির আদেশের খবর প্রকাশ করে বলা হয়, রায় ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজধানী ও দেশের অন্যান্য স্থানে আনন্দ মিছিল করে। এতে আরো বলা হয়, বিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি উভয়েই অভিযোগ করেছে, তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রহসনমূলক’। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলোও ট্রাইব্যুনালের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা বলেছে।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েশ ভ্যালে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে এই আদালত প্রতিষ্ঠা করেন। সোমবার আযাদের অনুপস্থিতিতে রায় প্রদান করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, গত বছর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার সময় তিনি পাকিস্তান পালিয়ে গেছেন। এতে বাংলাদেশের বিরোধী দলের বক্তব্য দিয়ে বলা হয়, তারা অভিযোগ করছে যে, ট্রাইব্যুনালটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং স্রেফ প্রধানমন্ত্রীর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এতে আরো বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপগুলোও আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ট্রাইব্যুনাল যে বিধিবলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে দুর্বল। আসামিপক্ষের আইনজীবী, সাক্ষী ও তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, বিচারকালে তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে।

এবিসি অনলাইন (অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন) মাওলানা আযাদের ফাঁসির আদেশের খবর প্রকাশ করে বলেছে, বিরোধী দলের মোট ১১ জন সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এতে বলা হয়, মাওলানা আযাদ বেসরকারি ও সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

রায় সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হয়, ‘এটা দেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন। মানবতার জন্য বিজয়।’

এতে আরো বলা হয়, জামায়াত ও বিএনপি তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যমূলক ও প্রহসনমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলো যুদ্ধাপরাধ আইনের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখতে পেয়েছে এবং মামলার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ করা আইনজীবী আবদুস শুকুর খান বলেন, মামলাটি ‘মিথ্যা’। তিনি বলেন, আযাদ কোনো ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না এবং যুদ্ধসংশ্লিষ্ট কোনো গ্রন্থেই তাকে কখনোই পাকিস্তানি সহযোগী হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি।

ওয়াশিংটন পোস্টে বলা হয়, আযাদ টেলিভিশনে ইসলামবিষয়ক অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান করতেন। তিনি তার রঙিন দাড়ির জন্য বেশ সুপরিচিত ছিলেন। এতে আরো বলা হয়, তার আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খণ্ডনে তিনি তার মাওলানা আযাদ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি।

এতে উল্লেখ করা হয়, আযাদের দেশ থেকে পালানোর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তার দুই ছেলে ও মেয়ের স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

ট্রাইব্যুনাল গঠন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলোর তোলা প্রশ্নের কথাও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে ওঠে আসে। এতে বলা হয়, নিউ ইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে, মামলার কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ। আদালতের গেট থেকে আসামিপক্ষের এক সাক্ষীর গুম হয়ে যাওয়া নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অভিযোগও এতে স্থান পায়।

এতে বলা হয়, অপর একটি ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি তার স্কাইপ সংলাপ নিয়ে ব্রিটিশ পত্রিকা ইকোনমিস্টে প্রতিবেদন প্রকাশের পর পদত্যাগ করেছেন। বেলজিয়ামভিত্তিক বাংলাদেশী আইনজীবী এবং তার মধ্যকার ওই স্কাইপ সংলাপ ও ই-মেইল বার্তা প্রকাশ হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়।

এতে বলা হয়, বিরোধী জামায়াতে ইসলামী বলেছে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কর্তৃপক্ষ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া ট্রাইব্যুনালকে ‘প্রহসন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.