ড্যাপ নিয়ে বিড়ম্বনা- অভিযোগ বিবেচনায় নিতে হবে

ড্যাপ বা ঢাকা ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের ব্যাপারে কোনো উপসংহারে যাওয়া হচ্ছে না। বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনসহ নানা ধরনের বাধায় পড়ছে ড্যাপ।
ড্যাপ নিয়ে বিতর্কেরও অবসান হয়নি। যে প্রক্রিয়ায় ড্যাপ করা হয়েছে তাতেও প্রশ্ন উঠেছে। খোদ ঢাকায় জনপ্রতিনিধিরা আপত্তি তুলেছেন। এই আপত্তির ব্যাপারেও কোনো সন্তোষজনক জবাব মেলেনি। এখন বিতর্ক এড়িয়ে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের মোট ভূমির ৬১ ভাগের মধ্যে সব ধরনের উন্নয়নকাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ফলে নিজেদের জমি নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে না পারায় ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ মানুষ। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন অনেক ভূমিমালিক। আশা করেছিলেন তারা তাদের ভূমির উপযুক্ত মূল্য পাবেন। এর মধ্যে পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পের উন্নয়নের কাজ চলছে। ঢাকার দুই প্রান্তে এ দু’টি প্রকল্পের সাথে লাগোয়া অথবা কাছাকাছি ভূমি যাদের রয়েছে তাদের আনন্দের সীমা ছিল না। কিন্তু ড্যাপ নামের যে বিধিটি করা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর তাদের সে আনন্দ আর ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

ঝিলমিল ও পূর্বাচল প্রকল্প দু’টি উন্নয়নের জন্য চিহ্নিত করা হলেও এর সাথে লাগোয়া ভূমিকে বন্যাপ্রবাহ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদেরা এটিকে সাধারণ মানুষের জন্য রাজউকের উপহাস হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, এমন ঘটনা বিশ্বে আর কোথাও নেই। একটা এলাকা সরকারিভাবে উন্নয়ন করা হলে এর পাশের অন্যান্য অঞ্চলে বেসরকারি উন্নয়ন হয়ে থাকে, এটা নগর পরিকল্পনারই অংশ। কিন্তু ঢাকায় সরকারি উন্নয়ন এলাকার পাশের জায়গা উন্নয়নের ধারাকে আইন করে বন্ধ করে দেয়ার প্রবণতা কাজ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগের তথ্য সত্যও রয়েছে। অভিযোগের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, ঝিলমিল প্রকল্পের পুরোটাই বুড়িগঙ্গার পাশে বন্যাপ্রবাহ এলাকায় অবস্থিত। এর পাশে পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল বন্যাপ্রবাহ এলাকায় অবস্থিত থাকলেও এই সরকারি স্থাপনার জায়গাটি বন্যাপ্রবাহ এলাকার বাইরে রাখা হয়েছে। আর এর পাশের ভূমিগুলোকে বন্যাপ্রবাহ এলাকার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে, লক্ষ্য একটিই এখানে যাতে উন্নয়ন না হয়। এটা অনেক বিশেষজ্ঞের কাছে বিস্ময়ের বিষয়।

কার্যত সরকারই বন্যাপ্রবাহ এলাকাকে উন্নয়নের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে। তারা এর পাশের অঞ্চলকে বেসরকারি উন্নয়নের জন্য রেখে দিতে পারত। এটাই ছিল যুক্তির কথা। তা ছাড়া বাস্তব কারণেই পূর্বাচল ও ঝিলমিলের আশপাশের প্রায় সব জমিই চলে যাচ্ছে আবাসন কোম্পানির দখলে। এ জমিগুলোকে কৃষিভূমিতে ফিরিয়ে নেয়া অথবা পানিপ্রবাহ এলাকা হিসেবে কিভাবে ব্যবহার করবে সরকার সেটাই মৌলিক প্রশ্ন।

ড্যাপে ৫৯০ বর্গমাইলের পানিপ্রবাহ দেখানো হয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম পাশ দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবহমান। কিন্তু পূর্ব পাশ দিয়ে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্প এবং পশ্চিম পাশ দিয়ে ঝিলমিল প্রকল্প উত্তর-দক্ষিণের বন্যাপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা হচ্ছে না।

আমরা মনে করি, ড্যাপ বৃহত্তর ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে সাজানোর জন্য, জনগণের সুবিধার জন্য; বেশির ভাগ লোককে সুবিধাবঞ্চিত রেখে নতুন ঢাকা গড়ার জন্য নয়। আশা করব সব অভিযোগ বিবেচনায় নিয়েই সামনে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে কাউকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতে অন্যদের একেবারে বঞ্চিত করার নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে রাজউকের সাথে সরকারি সিদ্ধান্তের সমন্বয় জরুরি।
       

No comments

Powered by Blogger.