অনেকেই ঘরে ফেরে,ফেরে না কেউ কেউ by জাকিয়া আহমেদ

দিনের বেলায় না হলেও রাতের ঢাকা অনেকটাই থাকে ট্রাকের দখলে। ফাঁকা রাস্তায় নিজের চলার গতিতে তার যেন কোন বাধ থাকে না।
অনেকটা অপ্রতিরোধ্যভাবেই নিজের আগমণী র্বাতাকে জানান দিয়ে বলে- সরে যাও, আমি আসছি।
মঙ্গলবার দিনগত রাত ২টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে হাতির ঝিলে যাওয়ার পথে দেখা গেল, ঢাকার অন্য একটি রূপ। কর্মচঞ্চল, ব্যস্ত নগরী ঢাকা নিজের রূপ বদলে শান্ত, স্নিগ্ধ।

তবে এ দিন গত কয়েকদিনের তুলনায় আবহাওয়া বদলেছে। প্রচণ্ড বাতাস আর বেশ শীত। তাই, রাস্তার দুপাশে দেখা গেল অনেক স্থানেই আগুন জ্বালিয়ে সেখানে চারপাশে ভিড় করে বসে রয়েছেন ঘরহারা মানুষজন।

কিশোর রাজা তাদেরই একজন। গায়ে চাদর, মাথায় টুপি পরে আগুনের ওম নিচ্ছে। এত রাতে কেন তুমি বাইরে জানতে চাইলে বলে, “আইজ অনেক শীত পড়ছে। শীতের কাপড়ও খুব বেশি নাই। তাই, আগুন ধরাইয়া তাপ নিতাছি। রাজার পাশেই থাকা বয়স্ক একজন বলেন, “এই বুড়া বয়সে শীতে এইবার এমুন কষ্ট পাইলাম। আইজকা আবার শীত পড়ছে। তাই, আগুনের পাশে বইসা আছি।”

রাস্তার পাশের চায়ের দোকানগুলোতে এই মাঝরাতেও ভিড় দেখা গেল।

অপরদিকে, হাতিরঝিল নগরবাসীর বিনোদনে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এখানে আসছেন পরিবার, বন্ধুদের নিয়ে। তবে দিনের বেলায় হাতিরঝিলের সৌন্দর্য তেমন চোখে না লাগলেও, রাতের হাতিরঝিল যেন রূপে অপরূপা। চোখ ধাঁধানো রূপ তার।

কাঠামোগত সৌন্দর্যের পাশাপাশি রাতে তার সঙ্গে যোগ হয়, আলোর ঝর্ণাধারা। এ এক অন্য ঢাকা, নতুন ঢাকা। আলোর খেলা চলে একটু পর পর। এই এখন হলুদ আলো তো, একটু পরই সেটা লাল। কিছুক্ষণ পর সেটা হয়ে গেল নীল, আর একটু পর বেগুনি।

মঙ্গলবার দিনগত রাত সোয়া ২টার দিকেও সেখানে গিয়ে দেখা গেল, অনেকেই এসেছেন। কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছেন; কেউ ছবি তুলছেন। ১০ থেকে ১২ জনের একটি সাইক্লিস্ট দলকেও দেখা গেল। তাদের দেখে মনে হলো, ওর্য়াল্ড সাইক্লিনিং চেম্পিয়নশীপে তারা অংশ নেবেন। নানা কসরত করে যাচ্ছেন সাইকেল নিয়ে। আর তা দেখে আনন্দে হাততালি দিচ্ছেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন।

একজন বললেন, এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে বাংলাদেশের বাইরে থাকা বন্ধুদের বলবো, “আমি টেমস নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি। তার এ কথায় হাসির তুবড়ি ছুটলো অন্যদের মধ্যেও।”

তবে খেটে খাওয়া মানুষেরা আনন্দ করতে নয়, তারা এই শীতের রাতেও বাইরে আছেন জীবিকার তাগিদে।

অনেককেই দেখা গেল, ট্রাক থেকে নিজেদের ভ্যানে নানান রকম মালামাল বোঝাই করছেন। সবজি বোঝাই ভ্যান নিয়ে ছুটে চলেছেন অনেকেই। সবজিগুলো সকাল হতে না হতেই পৌঁছে যাবে বিভিন্ন বাজারে। সেগুলো বিক্রি হলে তবেই না তাদের জীবন চলবে!

তবে পুলিশকে একটি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয় বলেও জানালেন ভ্যানচালক রমিজ উদ্দিন।
“টাকা নেয়, আবার ভ্যানের থিইক্যা সবজিও নিয়া যায় হেরা। টাকা দিতে না চাইলে ভ্যান উল্টাইয়া ফালায় দেয়। তাই, টাকা দিয়া রক্ষা পাই”- জানালেন তিনি।

রমিজ উদ্দিনের শেষের কথাটি যেন রাতের বাতাসে ফিরে ফিরে এলো- কানে- ‘টাকা দিতে না চাইলে ভ্যান উল্টাইয়া ফালায় দেয়। তাই, টাকা দিয়া রক্ষা পাই।’

মনে হলো, আসলেই এ এক অন্য ঢাকা, অন্য ঢাকা!

No comments

Powered by Blogger.