সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হচ্ছে ভোজ্যতেলের দাম- অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাল বৈঠক

ভোজ্যতেলের বাজারে আগুন। প্রায় প্রতিদিনই এই পণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে। এই সেদিনও বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা করে।
কিন্তু গতকাল সেই তেলই বিক্রি হয়েছে লিটারপ্রতি ১৪০ টাকায়। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। সয়াবিনসহ বাজারে ভোজ্যতেলের কোনো অভাব নেই। কিন্তু তারপরও বাড়ছে তেলের দাম। পরিবেশকেরা বলছেন, মিল মালিকেরা পর্যাপ্ত তেল আমাদের সরবরাহ করছেন না। অন্য দিকে মিল মালিকদের বক্তব্য অশোধিত তেল খালাস করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। তবে দেশে পর্যাপ্ত তেল মজুদ রয়েছে তাই এখনি দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।  তেলের দাম বৃদ্ধিতে নড়েচড়ে বসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোজ্যতেলের (সয়াবিন, পামওয়েল বা অলিন) মূল্য, মজুদ, এলসি পরিস্থিতি ও পরিবেশক পদ্ধতির কার্যকারিতা পর্যালোচনা করতে আগামীকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সভা আহ্বান করা হয়েছে। এখানে দাওয়াত দেয়া হয়েছে ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও রিফাইনারি মালিকদের। তাদের কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা হবে যে সিন্ডিকেট করে তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে সেক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে জরিমানাসহ বাতিল করা হতে পারে পরিবেশক লাইসেন্সও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে উপস্থিত থাকতে যাদের প্রতিনিধি পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে তারা হলোÑ বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরণ অধিদফতর, প্রধান নিয়ন্ত্রক (আমদানি-রফতানি), এফবিসিসিআই, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। এতে করে আমরা এক দিকে বিস্মিত ও চিন্তিত। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের প থেকে ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজার মূল্য বিশ্লেষণ করে আমাদের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, আমদানি মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম মিল গেটে ১১১ টাকা। এর সাথে বোতলের মূল্য ১৫ টাকা, পরিবেশকের ২ টাকা ও খুচরা ব্যবসায়ীর ২ টাকা মুনাফা যোগ করে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের সর্বোচ্চ দাম হওয়ার কথা ১৩০ টাকা। কিন্তু এ মূল্যে কোথাও এখন ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা করে।

এ দিকে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে পাইকারি খোলা সয়াবিন তেলের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৫০০ টাকা। পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে তাদের বাজারে প্রতি মণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ৩০০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১১৫ টাকা ২২ পয়সা। গতকাল প্রতি মণ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৮০০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১২৮ টাকা ৬২ পয়সা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৩ টাকা ৪০ পয়সা। আর সুপার পামের দাম বেড়েছে প্রতি মণে ৪০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা ৭১ পয়সা।

জাতীয় মনিটরিং সেলের হিসাবে প্রতি মাসে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে এক লাখ পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ ১০ হাজার টন। এর বিপরীতে গত মাসে খালাস করা হয়েছে মাত্র ৫৫-৫৬ হাজার টন। এখনো দেশে বিভিন্ন টার্মিনালে প্রায় এক লাখ টন ভোজ্যতেল মজুদ রয়েছে। তাই বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই।
       


No comments

Powered by Blogger.