ডিওর বদলে এসও-এপ্রিল থেকে এক দরে বিক্রি হবে তেল-চিনি

আগামী এপ্রিল মাসেই সারা দেশে পরিবেশকদের মাধ্যমে এক দরে ভোজ্য তেল ও চিনি বিক্রি শুরু হবে। এসব পণ্য পর্যায়ক্রমে কনজ্যুমার প্যাকেটে (বিভিন্ন মাপের প্যাকেট) বিক্রি হবে। প্যাকেটে পণ্যের মূল্য, পরিমাণ ও মেয়াদ লেখা থাকবে।
নতুন এ ব্যবস্থায় ডিওর পরিবর্তে পণ্য সরবরাহের জন্য সেলস অর্ডার (এসও) দিতে হবে। এর মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১৫ দিন। এসও হাতবদলযোগ্য নয়। বাজারে যাতে পণ্যের সংকট সৃষ্টি না হয় সে জন্য কোনো পরিবেশক মিল মালিকের কাছে যে পরিমাণ পণ্য চাইবেন, ততটুকু পণ্য দিতে বাধ্য থাকবেন মিল মালিকরা। কোনো পরিবেশক পণ্য মজুদ করতে পারবেন না। তাঁরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে, দাম বেশি নিলে মামলাসহ পরিবেশক লাইসেন্স বাতিল ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ পদ্ধতি চালু হওয়ার সময় থেকেই বর্তমানে বিদ্যমান ডিও (সরবরাহ আদেশ) প্রথা বাতিল হয়ে যাবে।
এসব বিধান রেখে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় চিনি ও ভোজ্য তেল সরবরাহ ও বিক্রির পরিবেশক প্রথা চালুর নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব জানান, নীতিমালাটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। পরে আইন মন্ত্রণালয় তার গেজেট প্রকাশ করবে। এতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। গেজেট জারি হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে পরিবেশক প্রথা কার্যকর হবে।
খসড়া নীতিমালায় পরিবেশকরা কোনো কম্পানির পণ্য উত্তোলনের সময় ব্যাংকে বা অফিসে টাকা দেওয়ার বিপরীতে মানি রিসিপ্ট ছাড়াও ডেলিভারি চালান বা ডিও পাবেন বলে উল্লেখ ছিল। এই ডিওর মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ১০ দিন। গতকাল এ ক্ষেত্রে ডিওর বদলে এসও ব্যবহার ও তার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ দিন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরে বাণিজ্য সচিব মো. গোলাম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, এর ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এতে বাজারে ভোজ্য তেল ও চিনির দর স্থিতিশীল থাকবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা বাড়বে। কার্যকরভাবে বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এ সময় নিজের অনুভূতি তুলে ধরে বাণিজ্য সচিব বলেন, �আজ আমি সুখী মানুষ। বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সবাই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছিলেন। আজ সেই প্রচেষ্টার ফল পাওয়া গেল।�
মো. গোলাম হোসেন আরো বলেন, �ভোজ্য তেল ও চিনির উৎপাদক প্রতিষ্ঠান তার সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যেক উপজেলা ও থানায় এক বা একাধিক পরিবেশক নিয়োগ করতে পারবে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে নিজের পছন্দসই কিছু উপজেলায়ও পরিবেশক নিয়োগ করতে পারে।�
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মুর্তজা রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মজিবুর রহমান, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান তালুকদার, প্রধান আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রক এম এ সবুর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হোসেন মিঞা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, বাংলাদেশ ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান এম এ রউফ চৌধুরী, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, নূরজাহান গ্রুপের জহিরউদ্দিন আহমদ রতন, টি কে গ্রুপের তারিক আহমেদ, এস আলম গ্রুপের কাজী সালাহউদ্দিন আহমদ, মোস্তফা গ্রুপের জহির উদ্দিন, ঈগলু সুগারের মহিউদ্দিন মোনেম, সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য গোলাম রহমান, এফবিসিসিআইর পরিচালক মো. হেলালউদ্দিনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.