বাগাতিপাড়ায় পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামে রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন দুলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। একটি হত্যা মামলায় গত সোমবার তাঁর স্ত্রী রাশিদাকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আটক করেছিল। এরপর দুলালের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাওয়া যায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে বড়াইপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। সোমবার রাতে দুলাল বাড়িতে একা ছিলেন।
পুলিশ বলছে, জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার সন্ধ্যায়ই দুলালকে ছেড়ে দেওয়া হয়। হত্যা মামলায় স্ত্রী গ্রেপ্তার এবং পরপুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক থাকার কথা প্রকাশ হয়ে পড়ায় অপমানে সে আত্মহত্যা করেছে। তবে লাশ ঝোলার ধরন দেখে তাঁর মৃত্যু রহস্যজনক বলে মনে করছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাড়ইপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে দুলাল হোসেনের আপন বলতে কেউ নেই। কাছের আত্মীয় বলতে তাঁর একমাত্র ভায়রা একই গ্রামের আবুল কালাম। দুলাল বড় হয়েছেন তাঁর মামার বাড়ি একই উপজেলার বিহারকোল গ্রামে। শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছুটা প্রতিবন্ধী প্রকৃতির ছিলেন তিনি। ১২ বছর আগে তিনি বিয়ে করেন একই উপজেলার সালামপুর হাসবাড়িয়া গ্রামের আবেদ মিস্ত্রির মেয়ে রাশিদাকে। তাঁদের ১১ বছরের মেয়ে দোলা ও সাত বছরের ছেলে রাজিব রয়েছে। রাশিদার সঙ্গে দুলালের মামাতো ভাই শামসুলের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে দুলালকে বড়াইগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় পাঁচ-ছয় দিন আগে রাশিদার মামাতো দেবর শামসুল হোসেন প্রামাণিক নিখোঁজ হন। গত রবিবার পুলিশ পার্শ্ববর্তী বড়াল নদী থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
শামসুলকে হত্যার অভিযোগে তাঁর বড় ভাই ছিদ্দিক হোসেন প্রামাণিক গত রবিবারই বাগাতিপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ রাশিদাকে গ্রেপ্তার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর স্বামী দুলালকে আটক করে। বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছে।
দুলালের ভায়রা আবুল কালাম জানান, গত সোমবার সকালে স্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুলাল হোসেন মেয়ে দোলা ও ছেলে রাজিবকে তাঁর বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন। পরের দিন গতকাল সকালে মেয়ে দোলা বাড়িতে এসে ঘরের দরজা খোলা পায়। ভেতরে ঢুকে সে দেখে, তার বাবা ঘরের মেঝের ওপর 'দাঁড়ানো অবস্থায়' তীরের সঙ্গে ফাঁস লাগানো অবস্থায় আছেন। আবুল কালাম বলেন, 'ছেলেমেয়েদের রেখে যাওয়ার পর দুলালের আর খোঁজ পাইনি। গতকাল সকালে দোলার মুখে জানতে পারি দুলাল মারা গেছে।' তিনি জানান, দুলাল আত্মহত্যা করতে পারে_এটা বিশ্বাস করি না। তিনি ঘটনার তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
সরেজমিনে দুলালের বাড়ইপাড়া গ্রামের বাড়িতে গেলে সেখানে উপস্থিত গ্রামের আবদুল গনি নামের এক ব্যক্তি জানান, দুলালের এক পা খোঁড়া ছিল। একটু বোকাসোকা টাইপের হওয়ায় বউয়ের কথামতোই চলত সে। স্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ায় সে ভেঙে পড়েছিল। এ কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে। তবে উপস্থিত লোকদের অনেকেরই অভিযোগ, আত্মহত্যা করলে তাঁর পা মাটির সঙ্গে লাগানো থাকবে কেন? এমনভাবে দেহটা ঝোলানো আছে যে, তাঁর হাত দুটো ছড়ানো। গলায় ফাঁস পরে মনে হয় দাঁড়িয়ে আছে। আত্মহত্যা করলে আরো উঁচুতে লাশ ঝুলে থাকার কথা।
এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া থানার ওসি মির্জ্জা আব্দুস সালাম জানান, দুলাল জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, কয়েক দিন আগে রাত ৮টার দিকে শুকুর আর তাঁর স্ত্রী রাশিদা মিলে শামসুলকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ বস্তায় ভরে তাতে ইট বেঁধে বড়াল নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। ওসি বলেন, 'স্বীকারোক্তির পর আমরা মামলার বাদীসহ দুলালকে নিয়ে নাটোর এএসপি সার্কেলের কাছে যাই। তিনি স্বীকারোক্তি শোনার পরে যোগীপাড়া গ্রামের আমির আলীর জিম্মায় দুলালকে ছেড়ে দেওয়া হয়।' আমির আলী দাবি করেন, তিনি দুলালকে তাঁর বাড়িতে সোমবার রাতেই পেঁৗছে দিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে এএসপি সার্কেল আপেল মাহামুদ বলেন, 'লাশ দেখে মনে হয়েছে শামসুল আত্মহত্যাই করেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তবে ভাই হত্যার সঙ্গে স্ত্রী জড়িত হওয়ার ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়ায় লজ্জায়, অভিমানে সে আত্মহত্যা করেছে বলেই মনে হয়।'
নিহত শামসুলের বড় ভাই ছিদ্দিক প্রামাণিক জানান, দুলাল শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল একজন মানুষ। সে আর যা-ই করুক শামসুল হত্যায় জড়িত থাকতে পারে না। দুলালের মৃত্যুতে তিনিও ব্যথিত। দুলালের ফুফাতো ভাই আকরাম জানান, গতকাল বিকেল ৪টার দিকে দুলালের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে রাতেই দাফন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.