সেঞ্চুরিয়ান নাফীস, বিপিএলে প্রথম বাংলাদেশী by রোকসানা বেগম

ওয়ানডেতে চারটি ও টেস্টে এক শতকের মালিক শাহরিয়ার নাফীস। কিন্তু টি২০ ক্রিকেটে কোন শতক ছিল না। গত বৃহস্পতিবার অপরাজিত ১০২ রান করে টি২০ ক্রিকেটে প্রথম শতকের দেখা পেলেন।
এই শতক শাহরিয়ারের টি২০ ক্যারিয়ার সমৃদ্ধই শুধু করেনি, অনন্য রেকর্ডেরও মালিক বানিয়েছে। কোন উইকেট না হারিয়ে টি২০ ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসে প্রথম শাহরিয়ারের দল খুলনা রয়েল বেঙ্গলস ইনিংস শেষ করেছে। ইতিহাসের পাতায় যা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শাহরিয়ার যে শতকটি করেছেন, সেটি আবার তারই প্রথম এমনটি নয়, বিপিএলের বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটারেরও প্রথম শতক এটি।
দীর্ঘদিন শাহরিয়ার ব্যাটে রান পাচ্ছিলেন না এবং আকর্ষণও কুড়াতে পারছিলেন না। হঠাৎ জ্বলে ওঠার পেছনের কারণ তিনি নিজেই জানালেন, টি২০ রেকর্ড আমার একেবারেই ভাল নয়। তার চেয়ে বড় কথা আমি প্রথম বিপিএলেও ভাল খেলিনি। কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম আর নিজ দলের সহ-অধিনায়ক ফরহাদ রেজা খুব অনুপ্রাণিত করেছেন। এর সঙ্গে আমার স্ত্রীও সর্বক্ষণ আমাকে ভাল খেলতে উৎসাহ দিয়ে গেছেন।
টানা তিন ম্যাচ হারের পর জয় পাচ্ছে খুলনা রয়েল বেঙ্গলস। এর পেছনে কারণ জানতে চাইলে শাহরিয়ার জানান, ‘এর পেছনে বিশেষ কোন কাহিনী নেই। আমরা মোটেই গুছিয়ে শুরু করতে পারিনি। পাকিস্তানী ক্রিকেটাররা না আসায় পুরো দল এলোমেলো হয়ে যায়। প্রথম ম্যাচ খেলেছি একজন বিদেশী নিয়ে। পরের ম্যাচে চারজনকে পেয়েছি। এখন আমাদের টিম কম্বিনেশন অনেক ভাল হয়েছে। আমরাও সেরাটা খেলতে শুরু করেছি। এ কারণে সাফল্যও ধরা দিচ্ছে।’
শাহরিয়ার একসঙ্গে অনেক ইতিহাসের সাক্ষী একদিনে হয়ে গিয়েছেন। আন্তর্জাতিক, ঘরোয়া টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম টি২০ শতক করেছেন। কোন উইকেট না হারিয়ে ২০ ওভার খেলার ইতিহাস গড়েছেন। বিপিএলের একমাত্র বাংলাদেশী শতক করা ক্রিকেটারও তিনি। বাংলাদেশের হয়ে টি২০ ক্রিকেটে প্রথম উইকেটে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করা জুটির সাক্ষী। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও।
শাহরিয়ার এসব নিয়ে বললেন, ‘সত্যি বলতে আজকে অনেককেই স্মরণ করব। খারাপ সময়ে যারা আমার সঙ্গে ছিলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আসলে এ রকম ইনিংস প্ল্যান করে হয় না, চেয়েছি ভাল খেলতে। সফল হয়ে গেছি।’
শতক হয়ে যাবে এমন ভাবনা কখন আসে শাহরিয়ারের সেই কথাও জানান, ‘৫০ হওয়ার পর চিন্তা করেছি, শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করব। কিন্তু ১০০ রান করব ভাবিনি। আমার যে রকম ব্যাটিং তাতে ১০০ অবিশ্বাস্যই। তবে আমার সামর্থ্যরে ওপর সব সময়ই বিশ্বাস ছিল। আমি মনে করি, আমার সামর্থ্য অনুযায়ী অনেকদিন হয় খেলতে পারছিলাম না। ৮৬-৮৭ হওয়ার পর মনে হয়েছে সেঞ্চুরিটা হয়ে যেতে পারে।’
ল ভিনসেন্টকে নিয়ে শাহরিয়ার অসাধারণ রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। শাহরিয়ার তাই কৃতিত্ব ভিনসেন্টকেই দিলেন, ‘ভিনসেন্টকে অনেক কৃতিত্ব দিতে হবে। কারণ সে অনেক চার ছয় মেরেছে। আমার ওপর থেকে অনেক চাপ কমে গেছে। ১০০ রান করা সম্ভব ছিল না যদি জুটি না হতো। এই সেঞ্চুরির ৯০ শতাংশ কৃতিত্ব তাকে দিতে হবে।’
শাহরিয়ারের কাছে অবশ্য শতকের চেয়ে জয়টিই মুখ্য। দল যে তার নেতৃত্বে জয়ই পাচ্ছিল না। আর এমনদিনে জয় পেল যখন শাহরিয়ারের দল ইতিহাস গড়ল। শাহরিয়ার বলেছেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা জিতেছি। দল জিতলে সবকিছুই ভাল লাগে। আমার কাছে মনে হয় স্ট্যান্ডার্ড অব ক্রিকেট যেটা হচ্ছে খুবই ভাল। আমরা খুলনাতে প্র্যাকটিস করতে পারলে ভাল হতো। প্রথম দুটা ম্যাচ আমরা হেরে গেছি। তারা আমাদের সাপোর্ট করেছেন। আমরা চেষ্টা করব আরও ম্যাচ জিতে আমাদের দলটাকে ওপরে নিয়ে যেতে।’
তিন ম্যাচ হারের পর টানা দ্বিতীয় জয় পাওয়ার পর শাহরিয়ার অভিব্যক্তি জানালেন, ‘তিন ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর টানা দুই ম্যাচে জিতে আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। দল এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী। তিন ম্যাচে হারের পর জয় নিয়ে তো রীতিমতো সন্দেহ ছিল। এখন আমরা জানি আমরা কি পারি। আরও সাতটি ম্যাচ বাকি আছে। আশা করছি, জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে সেমিফাইনাল খেলতে পারব। আসলে সব ক্রিকেটার একসঙ্গে কিছুদিন থাকার সুযোগ পায়নি। আমাদের পাকিস্তান ক্রিকেটারদের পরিবর্তে বিদেশী ক্রিকেটারও নেয়া হয়েছে। তবে সেটি হঠাৎ করেই করতে হয়েছে। ক্রিকেটাররা নিজেদের শুরুতে মানিয়ে নিয়েছে। এখন দলে সামঞ্জস্য এসেছে। ফলও ভাল পাওয়া যাচ্ছে। তবে দেশী ক্রিকেটাররাই এবার ভাল করছে। বিদেশী ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেশী ক্রিকেটাররাও ভাল করলে সেই দল শক্তিশালী হওয়াটাই স্বাভাবিক।’
বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান শাহরিয়ারের দৃষ্টি আরও ভাল করা। ভাল করতে পারলে জাতীয় দলে খেলার পথও পরিষ্কার হবে। সেই দিকেই দৃষ্টি শাহরিয়ারের। তবে এখন যেহেতু চলছে বিপিএল, তাই খুলনা রয়েল বেঙ্গলসে যত ওপরে ওঠানো যায় সেই চেষ্টাই করবেন। সঙ্গে নিজে যতটা ভাল নৈপুণ্য দলকে উপহার দিতে পারেন। তাতেই খুশি শাহরিয়ার।

No comments

Powered by Blogger.