সাফল্যঝর্ণা ধারা চৌধুরী- অভিনন্দন

শীত উপেক্ষা করেই সব বয়সের মানুষ এসেছেন তাঁকে অভিনন্দন জানাতে। তাঁদের মনে একটাই চাওয়া, একটাই অভিব্যক্তি, ভারত সরকারের পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত ঝর্ণা ধারা চৌধুরীকে শুভেচ্ছা আর শ্রদ্ধা জানানো।
২৭ জানুয়ারি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ গ্রামের গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের নিজ কার্যালয়ে এভাবেই ভালোবাসায় সিক্ত হন ঝর্ণা ধারা চৌধুরী। ২৫ জানুয়ারি সমাজকর্মের জন্য ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবের জন্য মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিব ঝর্ণা ধারা চৌধুরী। সেদিনই বেলা ১১টার দিকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ফোনে ঝর্ণা ধারা চৌধুরীকে সে দেশের সরকারের ওই স্বীকৃতির খবরটি জানান। আগামী মার্চে ভারতের নয়াদিল্লিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই খেতাব তুলে দেওয়া হবে। ঝর্ণা ধারা চৌধুরীই একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি পদ্মশ্রী খেতাব পেলেন।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের মানবাধিকারকর্মী অসীম কুমার বক্সী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই খেতাব এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
পুরস্কারের জন্য নাম ঘোষণা হওয়ার পর ঝর্ণা ধারা চৌধুরী বললেন, ‘সারা জীবন ধরে আমি যে আছি, তাঁরা আমাকে ভোলেননি। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। এ পুরস্কার আমাকে আমার কাজে আরও বেশি উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি সমাজের অন্য মানুষও ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত হবেন।’
জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বলেন, তাঁর সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড গ্রামের অবহেলিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছে।
ঝর্ণা ধারা চৌধুরী ১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা প্রয়াত প্রমথ চৌধুরী এবং মা প্রয়াত আশালতা চৌধুরী। ১১ ভাইবোনের মধ্যে ঝর্ণা ধারা চৌধুরী দশম। তিনি চট্টগ্রামের খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।
১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গার সময় মাহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে ওডিশা থেকে সত্যনারায়ণজি দাঙ্গাপীড়িত অঞ্চলে কাজ করেন এবং আমৃত্যু তিনি এখানে অবস্থান করে সমাজসেবার কাজ করেছেন। ঝর্ণা ধারা চৌধুরী তাঁর জীবনী সত্যনারায়ণজি প্রকাশ করেন।
১৯৫৪ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানার জয়াগে প্রতিষ্ঠিত গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত হন ঝর্ণা ধারা চৌধুরী। চট্টগ্রামের প্রবর্তক সংঘের শিক্ষিক এবং অনাথালয়ের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ঝর্ণা ধারা চৌধুরীর মানবসেবা শুরু হয়। তিনি ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক বাজাজ পুরস্কার, ২০০০ সালে ওল্ড ওয়েস্টবেরি বিশ্ববিদ্যালয় শান্তি পুরস্কার, ২০০৩ সালে দুর্বার নেটওয়ার্ক পুরস্কার, ২০০৭ সালে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক সাদা মনের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি, ২০১০ সালে শ্রীচৈতন্য পদক, একই বছর চ্যানেল আই ও স্কয়ার কীর্তিমতী নারী পুরস্কার এবং ২০১১ সালে গান্ধী স্মৃতি শান্তি সদ্ভাবনা পুরস্কারে ভূষিত হন।
ঝর্ণা ধারা চৌধুরী শৈশবকাল থেকেই মানবসেবার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। ৭৪ বছর বয়সী ব্রহ্মচারিণী সমাজসেবা ও জনকল্যাণে আত্মনিবেদিত এই নারী মানবসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাই এবার তাঁর ইচ্ছা পুরস্কারের অর্থও গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের মাধ্যমে জনমানুষের কল্যাণে ব্যয় করার।

No comments

Powered by Blogger.