জীবন যেমন- হাবিবুল বাশার সাদাসিধে by রুহিনা তাসকিন

তাঁর অধীনেই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়। মাঠে আর মাঠের বাইরে হাসিখুশি নিপাট ভদ্রলোক বলেই সুনাম তাঁর। খেলা ছেড়ে দিলেও মাঠেই আছেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক হিসেবে। বিপিএল নিয়ে চলছে দারুণ ব্যস্ততা।
এর ফাঁকেই একটু সময় দিলেন হাবিবুল বাশার অধুনার জন্য।
মাঠে যা-ই ঘটুক, বাড়িতে এসে ‘ফেস’ বানানো চলবে না। অর্থাৎ তাঁর যে হাসিটার ভক্ত সবাই, তা ধরে রাখতে হবে বাড়িতেও। স্ত্রী শাওন বাশারের শর্ত ছিল এটাই। আর হাবিবুল বাশারও চেষ্টা করেছেন তা মেনে চলতে।
মাঠের ব্যস্ততা এখন একটু কমলেও অবসর পান কমই। সেই সময়টুকু স্ত্রী আর দুই ছেলে তানজীম বাশার আর তাহীম বাশারের।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ২০০৮ সালে। তবে তার আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল খেলা ছাড়ার পরও কোনো না কোনোভোবে ক্রিকেটের সঙ্গে থাকার। ‘যা ভালোবাসি, তা-ই তো সারা জীবন ধরে করতে চাইব। আর আমার ভালোবাসা ক্রিকেট।’
তাহলে অবসরের সিদ্ধান্তটা আর কিছুদিন পরে নিলে তো পারতেন?
‘সে সময় আমার সতীর্থরা সবাই অবসরে চলে গেছেন। নতুন খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। তবু শেষ দিকে বেশ একা লাগত। মাঠে কেন জানি সেই চ্যালেঞ্জটা আর অনুভব করতাম না। সে বছর নিউজিল্যান্ড সফরেই বুঝতে পারলাম একা একা ডিনার করা খুব কঠিন। অনেক হয়েছে, আর নয়।’ বললেন তিনি।
মাঠে ছিল তাঁর নিখাদ ভদ্র ইমেজ। মাঠের ভেতরে-বাইরে মানুষটা কি এক?
জবাব এল, ‘মাঠে কিন্তু আমি মোটেও অত ভদ্র ছিলাম না। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা বলা হলেও এটা তো একটা প্রতিযোগিতা। সেই মনোভাবটা মাঠে ধরে রাখতাম। প্রতিপক্ষের দিকে একটু কড়া নজর বিনিময়, কথার বাণে একটু খোঁচা, এসব তো হয়-ই। মাঠে একটু উত্তেজনা না হলে তো দর্শকেরাও মজা পান না।’
তবে তার পরও খেলোয়াড়েরা তরুণদের রোল মডেল। তাঁদের অনেক কিছুই করা মানায় না বলে মনে করেন হাবিবুল বাশার। ‘ভদ্রতার স্বাভাবিক নিয়মকানুনগুলো মেনেই চলতাম আমি।’ বললেন তিনি।
খেলোয়াড়ি জীবনে নানা নিয়মকানুন, খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয়েছে। খেলা ছাড়ার পরে জীবনটা কেমন?
‘সারা জীবন যত বিরিয়ানি খাইনি, খেলা ছাড়ার পরের এক বছরে বোধ হয় তা খেয়ে ফেলেছি।’ হেসে বললেন। ওজন কিছুটা বেড়েছে। সেটা ঝরিয়ে ফেলার জন্য জিম করছেন সময় পেলেই। তবে তেল কম দেওয়া খাবার খাওয়ার যে অভ্যাস হয়েছিল খেলার সময় থেকেই, তা এখনো ধরে রেখেছেন। ‘গ্রিলড খাবার পছন্দ করি—স্টেক, ল্যাম্ব চপস এসব। আর ভাত, ডাল তো আছেই।’ জানালেন।
নিজে রান্না করতে একদমই পারেন না। পর স্ত্রীর রান্না খেয়ে মনে হয়েছিল জীবনটা খুব কঠিন হতে যাচ্ছে। তবে এখন শাওন বেশ ভালো রান্না করে।’
পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে খুব পছন্দ করেন হাবিবুল বাশার। ‘কক্সবাজার খুব প্রিয় জায়গা। আর উপমহাদেশের নানা জায়গায়ই বেশি যাওয়া হয় আমাদের। একটা খুব প্রিয় জায়গা আছে আমার, একবারই গিয়েছিলাম সেখানে, নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন। আবার যেতে চাই সেখানে।’ বলেন তিনি।
কাজের জন্যই এখন নিয়মিত ফরমাল পোশাক পরতে হয় তাঁকে। তবে সেটা মোটেও উপভোগ করেন না বলে জানালেন। ‘কখন বাড়ি ফিরে জিনস-টি-শার্ট পরতে পারব, সেটাই ভাবতে থাকি। ব্র্যান্ড নিয়ে মোটেও মাথাব্যথা নেই। পোশাক-আশাক স্ত্রীর পছন্দেই কেনা হয় বেশি।’
ক্রিকেট নিয়ে নিয়েছে তাঁর জীবনের অনেকটা সময়। তবে সে নিয়ে আফসোস নেই। ‘শুধু ছাত্রজীবনটা মিস করি। ঢাকা কলেজে পড়তাম। আর সে সময়ও খেলা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো তেমনটা হয়ে ওঠেনি। এখনো অবশ্য স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে।’
ক্রিকেটে কাউকে বন্ধু বলা যাবে না বোধ হয়। তবে ব্রায়ান লারার সঙ্গে সুন্দর কিছু সময় কেটেছে তাঁর। তাঁর কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন তাঁর ব্যবহারের গ্লাভস।
দুই ছেলে মানে যেন তাঁর দুই বন্ধুই। ‘ওদের কাছে আমি যেন একটা খেলনা। আমি বকা দিতে গেলে বড় ছেলে হেসে ফেলে। বলে, বাবা তোমাকে একদম মানায় না।’
একটা সময় ফুটবল খেলতেন খুব। ব্রাজিলের সমর্থক তিনি আর ক্লাব বললে রিয়াল মাদ্রিদ। পাশাপাশি টেনিস ভালোবাসেন।
খেলা আর পরিবার, এই নিয়েই এখন হাবিবুল বাশার।

No comments

Powered by Blogger.