বেপরোয়া জামায়াত-শিবির- এ তাণ্ডব থামাতেই হবে

সোমবার রাজধানী ঢাকাসহ আরও কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভয়ঙ্কর রূপ আরেকবার প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী।
রাজধানীর মতিঝিল থেকে সচিবালয় পর্যন্ত এলাকায় তারা ঝটিকা মিছিল বের করে তিনজন সচিব এবং অর্থমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ব্যবহৃত গাড়িসহ শতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে এবং কয়েকটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের তাণ্ডব চলে দিনাজপুর, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে। প্রতিটি স্থানেই তাদের টার্গেট ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। হঠাৎ বের করা মিছিল আর ধরন থেকে এটা স্পষ্ট যে, যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই তারা রাজপথে নেমেছে। এ হামলা ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় নির্বিচারে যানবাহন ভাংচুর, অগি্নসংযোগ ও পুলিশের ওপর সুপরিকল্পিত আক্রমণেরই ধারাবাহিকতা। ওই দিনের হামলা চলাকালে তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ হুঙ্কার দিয়েছিল, 'এটা কেবল শক্তি প্রদর্শনের সূচনা।' এর পরিপ্রেক্ষিতে ২১ সেপ্টেম্বর 'অশুভ শক্তি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন' শিরোনামে সমকালের সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়, 'এ হুমকিকে হালকা করে দেখা চলে না।' পরের মাসগুলোতে ছাত্রশিবিরের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায়, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি যুক্ত দলটি চার দশক পরেও এতটুকু বদলায়নি। বাংলাদেশের গৌরবের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে এবং তাদের অগণিত নেতাকর্মী ও ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছিল। গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং এ ধরনের গুরুতর অভিযোগে দলটির কয়েকজন নেতার বিচার চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। বাচ্চু রাজাকারের মামলায় ট্রাইব্যুনাল-২-এর রায়ে বলা হয়েছে, একাত্তরে গণহত্যার জন্য জামায়াতে ইসলামী দলগতভাবেই সংশ্লিষ্ট ছিল। এই দলটির নেতাকর্মীরা এখন সহিংস পন্থায় চেষ্টা করছে বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করে একাত্তরের চিহ্নিত অপরাধীদের বাঁচাতে। তারা দেশ-বিদেশে বিচার কাজের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচার চালাচ্ছে এবং একই সঙ্গে সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এমন রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে বিচারের পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যায়। বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এ ধরনের তৎপরতা একাত্তরের মতোই গুরুতর অপরাধ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের কোনো অপচেষ্টা দেশবাসী কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা দেশবাসীর এ মনোভাবের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। সরকারের অবস্থানও ভিন্ন কিছু নয়। আমরা আশা করব, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি দেশবাসীর এ মনোভাব উপলব্ধি করবে এবং একাত্তরের ঘাতকদের সঙ্গে সব ধরনের সংশ্রব-সংশ্লিষ্টতার অবসান ঘটাবে। বিএনপি নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের ব্যাপারে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত তাদের অজানা নয়। এটাও না বোঝার কথা নয় যে, তাদের সঙ্গে মিত্রতার সুযোগ নিয়েই জামায়াতে ইসলামী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে একের পর এক ধ্বংসাত্মক কর্মসূূচি প্রদান করে চলেছে। এই সর্বনাশা খেলা থামাতে বিএনপিও ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করব।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও এ ব্যাপারে আরও কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। সম্প্রতি জেলা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সমাবেশে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রে এ নির্দেশ মানা হচ্ছে না, এমন অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রাজপথে একের পর এক সহিংসতা ও তাণ্ডবের খবর অনেক ক্ষেত্রে কেন গোয়েন্দারা আগাম পাচ্ছে না, সেটাই বিস্ময় জাগায়। সোমবারের সহিংস হামলার ঘটনায় অর্থমন্ত্রীও এ অভিযোগ করেছেন। বেপরোয়া জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব রোধে আরও সক্রিয় হবেন, এই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.