বাঁশখালীতে জামায়াতের ডাকে হরতাল পালিত- পুলিশের মামলায় আসামি ৫ হাজার

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গতকাল জামায়াতের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। এ দিকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ হাজার লোককে আসামি করে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা জহিরুল ইসলামসহ গ্রেফতারকৃত ১৬ জনকে আদালতে পাঠিয়েছে। হরতাল চলাকালে চট্টগ্রাম বাঁশখালী-টৈটং সড়কের (বাঁশখালী প্রধান সড়ক) পুকুরিয়া চানপুর থেকে শুরু করে সাধনপুর, গুনাগড়ি, কালিপুর, চেচুরিয়া, মিয়ারবাজার, জলদি, উপজেলা সদর, শিলকুপ টাইমবাজার, চাম্বল বাংলাবাজার, পুঁইছড়ি থেকে পেকুয়া টৈটং পর্যন্ত বিস্তীর্ণ সড়কে ভারী যান চলাচল করেনি। মাঝে মধ্যে দু-একটি সিএনজি, অটোটেম্পো ও রিকশা চলাচল করলেও উপজেলা সড়কগুলো ছিল সর্বত্রই ফাঁকা। হরতাল চলাকালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পুকুরিয়া, গুনাগড়ি ও উপজেলা সদরে হরতালবিরোধী বিােভ মিছিল হয়েছে। হরতাল আহ্বান করলেও সড়কে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি। সহিংসতা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের উপস্থিতি ছিল লণীয়। চাম্বল এলাকার গ্রামবাসী জানান, থানায় মামলা হওয়ার খবর পেয়ে এলাকায় এখন গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

২৮ জানুয়ারি পুলিশের সাথে জামায়াত-শিবির ও সমর্থকদের কয়েক দফা সংঘর্ষে ১৫ পুলিশ কর্মকর্তা ও জামায়াত-শিবির নেতৃবৃন্দসহ ৩০ জন গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত হন।

প্রত্যদর্শীরা জানান, বাংলাবাজার এলাকায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে ব্যানার টাঙানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যানার নামাতে গেলে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ চাম্বল জামে মসজিদে অবস্থান নিলে জামায়াত-শিবিরসহ স্থানীয় লোকজন তাদের অবরোধ করে। এ খবর পেয়ে বাঁশখালী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশের সাথে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিেেপর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাঁশখালী-টৈটং সড়ক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে চার শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও ২৭টি টিয়ার শেল নিপে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার ঘটনায় উপজেলা জামায়াত গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বাঁশখালীর চাম্বল বাজারে পুলিশ অহেতুক ব্যানার নামাতে গিয়ে স্থানীয় জনতার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে নিরীহ মানুষের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত উপজেলা জামায়াতের আমির জহিরুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম দণি জেলা জামায়াতে ইসলামী। একই সাথে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের নামে পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়েছে।

গতকাল চট্টগ্রামস্থ দণি জেলা জামায়াত কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেক। এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, উত্তর জেলা জামায়াতের আমির অধ্য আমীরুজ্জামান, দণি জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মোহাম্মদ ইসহাক, সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুরুল্লাহ ও বাঁশখালী উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুর রহিম ছানুবী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দণি জেলার থানায় থানায় শিবিরের বিােভ

বাঁশখালী উপজেলায় পুলিশ কর্তৃক জনতা ও শিবির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম দণি জেলার বিভিন্ন থানায় বিােভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। লোহাগাড়া শহর শাখার সভাপতি জহির মুহাম্মদ শামসুদ্দীনের নেতৃত্বে আধুনগরে এক বিােভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষের সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ছাত্রনেতা শহীদুল্লাহ, মহিউদ্দীন, কবির আহমদ, হারুনুর রশিদ, আবদুর রহিম, কামাল উদ্দীন প্রমুখ।

এ ছাড়া জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও আনোয়ারা থানায় বিােভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.