রাবি হলে শিবিরের তাণ্ডব ॥ চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস- ২ জন ৫ দিনের রিমান্ডে

 রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে তান্ডব, ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জামায়াত-শিবির নেতারা পুলিশকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
পুলিশ রিমান্ডে ঘটনার পরিকল্পনা ও সংঘটনে কারা কিভাবে অংশ নিয়েছে, অস্ত্র কোথা থেকে কিভাবে এসেছে, ঘটনা শেষে কে কিভাবে পালিয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশ রবিবার রাতে জামায়াত-শিবিরের আরও ১৩ নেতাকর্মী-ক্যাডারকে আটক করেছে। এদের একজনকে রিমান্ডের আবেদনসহ সোমবার বিকেলে ১০ জনকে রাজশাহীর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত আব্দুল গাফ্ফার নামের একজনের ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর এবং অপর ৯ জনকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় দায়েরকৃত ৩টি মামলায় পুলিশ রিমান্ডে থাকা ৪৫ শিবির নেতাকর্মী ও ক্যাডারের মধ্যে ২৭ জনকে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রথম দিন ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া শিবির ক্যাডার লিটনকে পুলিশ সোমবার পুনরায় ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। ফলে জামায়াতের রাজশাহী মহানগর শাখার আমির আতাউর রহমানসহ নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে ২০ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ও ক্যাডারকে এখনও পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনার তারিকুল ইসলাম জানান, রবিবার রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারকৃত ১৩ জনের মধ্য থেকে সোমবার ১০ জনকে আদালতে হাজির করা হয়। এরা হলো- আব্দুল গাফ্ফার, নাহিদ আকতার, সবুজ মিয়া, সফিকুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী, কামরম্নজ্জামান, বাবর আলী, দিলদার, রাজন ও শিমুল। এদের মধ্যে আব্দুল গাফ্ফারকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া ইতোপূর্বে পুলিশ রিমান্ডে থাকা ৪৫ জনের মধ্যে ২৭ জনকে সোমবার আদালতে মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে প্রথম দিন গ্রেফতারকৃত লিটন নামের এক শিবির ক্যাডারকে সোমবার দ্বিতীয় দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
পুলিশের সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে তান্ডব, ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নক হোসেন খুন ও চারজনের হাত-পায়ের রগ কর্তনসহ অর্ধশত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে জখমের একদিন আগে নগরীর বিনোদপুরের ইসলামিয়া কলেজে গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি রাতে এশার নামাজের পর শিবিরের নেতাকর্মী ও ক্যাডাররা গোপন বৈঠক করে। ওই বৈঠকে গত বছর ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী হত্যায় অভিযুক্ত করে ছাত্রলীগ কমর্ী হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদকে 'খতমে'র পরিকল্পনা করা হয়। নোমানীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, একই কায়দায় আসাদকে হত্যার পরিকল্পনা সংক্রানত্ম শিবিরের ওই গোপন সভায় ক্যাডারদের জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু হলের ১৩১ নম্বর কটি ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামানকে সমপ্রতি বরাদ্দ দিয়েছে হল কতর্ৃপ। কটি বরাদ্দপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান যে সময় হলে উঠতে পারে, সে হলে আসামাত্রই তাকে 'খতম' করার সিদ্ধানত্ম নিয়ে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে দু'টি ক্যাডার গ্রম্নপকে সশস্ত্র অবস্থায় প্রস্তুত রাখা হয়। একটি দল গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের শীর্ষ নেতাদের জানায়, আসাদ ৮ ফেব্রম্নয়ারি রাতে নিজেই হলে উঠবে অথবা তার সিটে অন্য কাউকে উঠাতে আসবে। গোপন বৈঠকের সিদ্ধানত্ম কার্যকরের দায়িত্ব পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন সকল হলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মী ও ক্যাডারসহ বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের ৮ ফেব্রম্নয়ারি মাগরিবের নামাজের আগেই বঙ্গবন্ধু হলসহ পাশর্্ববর্তী বিনোদপুর, মেহেরচন্ডী কড়াইতলা, মেহেরচন্ডী পূর্বপাড়া আমবাগান ও নবাব আব্দুল লতিফ হলের পিছনের বধ্যভূমি এলাকাসহ শিবির নিয়ন্ত্রিত মেসে অবস্থানের নির্দেশ দেয়। পরিকল্পনা মোতাবেক শিবিরের একদল ক্যাডার আসাদকে হত্যার চূড়ানত্ম প্রস্তুতি নিয়ে ৮ ফেব্রম্নয়ারি সন্ধ্যার আগেই বঙ্গবন্ধু হলে অবস্থান গ্রহণ করে। এছাড়া অস্ত্র সরবরাহ এবং পরবর্তী নির্দেশের অপোয় রাখা হয় বহিরাগত শিবির ক্যাডার ডাঁশমারীর জাফর বাবু, মোজাম্মেল, বিনোদপুরের রবি, শাহীন ওরফে টাকুয়া শাহীন, রউফ, সালেকীন ও আলতাফ, বুধপাড়ার খুশি, সালাম, শানত্ম, বাবলু, নাসির, সাদেক, শামীম ও রাজু, ডাশমারীর তোফাজ্জল হোসেন ওরফে পিচ্চি তোফা, তুহিন, মাইনুল ও শামীম, মেহেরচন্ডীর মিলন, শাহীন (শিবগঞ্জে গুলিতে নিহত), মাসুদ ও আল আমিন, চকপাড়ার রবিউল ও ভোলা, খড়খড়ির রাসেল, তোহা, জোহা, হামিম ও রানা, চকেরবিলের নুরম্নল ইসলাম ও নজরম্নল ইসলাম, নারিকেল বাড়িয়ার মুজাহিদ ও সেলিম, কড়ইতলার আরিফ, শরিফ, শুকুর ও খোরশেদকে।

No comments

Powered by Blogger.