বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি দেখে যেতে পেরে আমি খুশি- সংবর্ধনা সভায় বললেন শতবষর্ী বিপস্নবী বিনোদবিহারী

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেতে পেরে আমি খুবই খুশি। আরও ভাল লাগবে যেদিন বিচার হবে যুদ্ধাপরাধীদের। আমি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে চাই।
আর উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিবিজরিত অন্যতম স্থান চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়ে একটি শহীদ মিনার দেখে যেতে চাই।"
শতবর্ষে এসে দেশের বিশিষ্টজনের দেয়া সংবর্ধনা গ্রহণ করে শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে অত্যনত্ম আবেগাপস্নুত কণ্ঠে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্যসেনের অন্যতম সহযোগী বিপস্নবী বিনোদবিহারী চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করা ও নিঃস্বার্থে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তরম্নণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে প্রবীণ এ বিপস্নবীর অভিব্যক্তির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জালালাবাদ পাহাড়ে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের সহায়তার কামনা করেছেন দেশের বিশিষ্টজন। অনুষ্ঠানে শিশু ও তরম্নণ প্রজন্মের সঙ্গে রীতিমতো ধূমধাম করে জন্মশতবার্ষিকী পালন করলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপস্নবী বিনোদবিহারী চৌধুরী। শুক্রবার তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালন উপল েকেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিণত হয়েছিল শিশু-কিশোরদের মিলনমেলায়। খেলাঘরের আসর, কচিকাঁচা মেলার শতাধিক শিশু-কিশোর হাসি, গান, গল্প আর আলাপচারিতায় পুরো বিকেল জমিয়ে রাখে। বিপস্নবীও তাঁর জীবনের বিভিন্ন আন্দোলনের গল্প শুনিয়ে শিশুদের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরেন। বিনোদবিহারী জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিৰাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, নাট্যকার খায়রম্নল আনাম সবুজ, শহীদ জায়া মুশতারী শফি, খেলাঘর আসর ও কচিকাঁচা মেলার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। এরপর বিভিন্ন সংগঠনের প থেকে ফুল দিয়ে বিনোদবিহারীর জন্মশতবার্ষিকীকে স্বাগত জানানো হয়। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে আলাপচারিতা আর বক্তৃতা।
বিনোদবিহারী চৌধুরী আপে করে বলেন, যিনি এদেশকে পাকিসত্মানী হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে রা করে বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ৩৪ বছর ধরে তাঁর হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিল। তিনি শিশুদের উদ্দেশ করে বলেন, তোমরা সৌভাগ্যবান যে সেই স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বিচার তোমরা দেখতে পারছ। এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারে না। বিপস্নবী বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই তরম্নণ প্রজন্মের কাছে আহ্বান যারা এদেশ চায়নি, যারা এ দেশের বিরোধিতা করেছে, তাদের এ দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। অন্যথা তারা আবার হানা দেবে। বিনোদবিহারী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ১৯৩০ সালের ২২ এপ্রিল চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়ে যারা ব্রিটিশের বিরম্নদ্ধে আন্দোলন করে শহীদ হয়েছিলেন তাদের হত্যার বিচার আজও হয়নি। তিনি ওই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে রাখার জন্য একটি শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ সর্বত্র একটি শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম। এ স্বপ্ন বাসত্মবায়নে আমাদের দু'টি কাজ করতে হবে। প্রথমত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করা। দ্বিতীয়ত নিঃস্বার্থে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। শিশুদেরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জন্মালাম, খেয়ে-ঘুমিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলাম_ এ ধরনের জীবনের কোন মানে হয় না। জীবনের অর্থ আছে। কর্মময় জীবনের মাঝে সেই অর্থ খুঁজে নিতে হবে। অন্যায় ও অসত্যের বিরম্নদ্ধে বীরের মতো লড়তে হবে।
অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বিনোদবিহারী চৌধুরী খুব অল্প বয়সে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন, তাই তিনি এখনও শতবর্ষী টগবগে তরম্নণ। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিট্রিশদের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ভাষার জন্য সংগ্রাম করে কারাবরণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। কিন্তু এ দেশে এখনও সেই রাজাকার, আলবদর, সাম্রাজ্যবাদী শোষকরা শাসন করছে। তিনি তরম্নণ প্রজন্মকে উদ্দেশ করে বলেন, আগামী দিনে যদি বাংলাদেশকে একটি শোষণহীন, ধর্মনিরপে দেশ হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলে বিনোদবিহারীর কাছ থেকে শিাগ্রহণ সার্থক হবে।
বিচারপতি গোলম রাব্বানী শিশুদের উদ্দেশে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর সবাই দেশটাকে রাজাকারমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ও ধর্মনিরপে রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধীরা স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে গাড়ি হাঁকাচ্ছে। শাসন করছে। এর চেয়ে অপমান আর দুঃখের কিছু নেই। তিনি বর্তমান প্রজন্মকে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেশকে একটি ধর্মনিরপে, শোষণহীন ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান। বিপস্নবী বিনোদবিহারী চৌধুরী জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন পরিষদ-ঢাকা আয়োজিত দু'দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান আজ শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.