স্বাগতম ২০১৩

কালের পরিক্রমায় চলে গেল আরও একটি বছর। ২০১২ পেরিয়ে কালরূপী থুড়থুড়ে বুড়ো পা রাখল ২০১৩’য়। ডিপ্রজন্মের পক্ষ থেকে সবাইকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা।
হ্যাপি নিউ ইয়ার! বড্ড দেরি হয়ে গেল! বছরের পয়লা দিন ডিপ্রজন্ম প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত তা আর প্রকাশ হয়নি। তাতে কী! আমরা না হয় একটু দেরিতে এই সংখ্যায় ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। স্বাগতম ২০১৩! শুভেচ্ছা ডিপ্রজন্মের সকল পাঠককে।
নানা উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উদযাপনের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ এই দিনটি পালন করল। পালন করছে বাংলাদেশের মানুষও, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম। থার্টিফার্স্ট নাইট থেকে শুরু করে পরবর্তী অষ্টপ্রহর পর্যন্ত কত-শত ঘটনা উদযাপনের মধ্য দিয়ে সারাবিশ্বের মানুষ পালন করেছে এই দিনটি তার কোন ইয়ত্তা নেই। দেশে দেশে বিচিত্র সব আয়োজন ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিচিত্র সব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মানুষ দিনটি নিজেদের মতো করে উদযাপন করেছে।
থার্টিফার্স্ট নাইটে ঘড়ির কাঁটা ১২ টা ছোঁয়ামাত্র শুরু হয়ে যায় উদযাপন পর্বটা। বিশ্বের বড় বড় নগরীর আকাশে আঁতশবাজির আলোর ফোয়ারা বয়েছে যেন। ডিজে পার্টি, ব্যান্ড পার্টি, লাইফ কনসার্ট কতশত আয়োজন করা হয়েছে থার্টিফার্স্ট নাইটে, তার যেন শেষ নেই। উদ্দেশ্য একটাই পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া। পুরনো বছরের সব ব্যর্থতা, হতাশাকে ভুলে নতুনের আবাহনে নিজেদের শুভ শপথে বলীয়ন করে তোলা, উজ্জীবিত করা। এক কথায়, সারা বিশ্বের নগরবাসী ওই দিনটায় মেতে উঠেছিলেন আমোদে। নিজ নিজ দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও রেওয়াজ অনুযায়ী সবাই উদযাপন করেছেন এই বিশেষ দিনটি।
এদিনটি উপলক্ষে প্রিয়জনকে কার্ড উপহার দেয়া একটি বিশেষ রীতি। প্রিয়জনকে নানা উপহারসমেত কার্ড পাঠিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রায় সবাই। যদিও মুঠোফোন ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোর প্রসারে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনকে নতুন বছরের শুভেচ্ছ জানাতে এগুলোর ওপরই ক্রমশ বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বর্তমান প্রজন্ম। তবুও কার্ডের দোকানে যাওয়া ও পচ্ছন্দ অনুসারে কার্ড উপহার দেয়ার গুরুত্ব একটু বেশিই। যেমনটা মনে করেন সেন্ট গ্রেগরিস হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মির্জা গালিব হাসান সিয়াম। ‘কার্ড উপহার দেয়ার গুরুত্বটাই আলাদা। বিশেষ কাউকে তো আর শুধু মুঠোফোনে টেক্সট পাঠালেই চলে না। অবশ্য মুঠোফোনে টেক্সট করা আর ফেসবুকে সবাইকে শুভেচ্ছা তো জানিয়েছিই। বিশেষ বিশেষ লোকদের কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে কিন্তু ভুল করিনি।’
রাত বারো বাজার সঙ্গে সঙ্গে সকলের মাঝে পড়ে যায় মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানোর হিড়িক। কে কাকে আগে শুভেচ্ছা জানাবে তা যেন পরিণত হয় এক প্রতিযোগিতায়। এ প্রতিযোগিতাও কেউ যেন হারতে চান না। কেউ কেউ আবার ফোন কল দিয়ে বিনিময় করেছেন নববর্ষের শুভেচ্ছা। মা-বাবা, ভাই-বোন ও ভালবাসার মানুষকে সর্বাগ্রে শুভেচ্ছা জানানোর মজাটাই আলাদা।
সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে কাপর্ণ্য করেন না কেউই। সকলেই পোস্ট করে নববর্ষের নতুন সব ছবি। পড়ে যায় লাইক ও কমেন্টের বিনিময়ের হিড়িক। ‘দূরে-কাছের সবাইকে একত্রে শুভেচ্ছা জানানোর এত সহজ উপায় সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো ছাড়া আর কোথায় মেলে বলুন তো। খুদে বার্তা তো পাঠিয়েছিই, ফোনেও সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তারপরও সবার আগে শুভেচ্ছাটা কিন্তু জানিয়েছি ফেসবুকেই, ফ্রেন্ডলিস্টে যারা আছে কেউই বাদ যায় না এই শুভেচ্ছা থেকে।’ এমনটাই জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আউয়াল ফয়সাল। বিশেষ কাউকে বিশেষ কিছু উপহার দেয়ারও একটি বড় উপলক্ষ নতুন বছরের এই প্রথম দিন। অনেকদিন ধরে ভাবছেন বিশেষ মানুষটাকে উপহার দেবেন। বলে ফেলবেন না-বলা কথা। কিন্তু উপহার দিতে পারছেন না, বলতে পারছেন না সেই না-বলা কথা।
কাজ করছে সঙ্কোচ, দ্বিধা। যদি প্রত্যাখ্যান করে! নতুন বছরের এই পহেলা দিনে এই সঙ্কোচ, দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে অনেকে এই আপাত অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছেন। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোকে উপলক্ষ করে বিশেষ মানুষটিকে বলে ফেলেছেন না-বলা কথা।
নতুন বছরে প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানাতে ঢাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছেছে এক উৎসবের আমেজ। ঘটা করে এই দিনটি পালন করেছেন নগরবাসী। পহেলা বৈশাখের মতো না হলেও এই দিনে নগরবাসীর মধ্যে উৎসব, উদযাপন, আনন্দ-ফুর্তি আর আমেজের কমতি ছিল না। সবার মুখে মুখে ঘুরেছে একই বার্তা হ্যাপি নিউ ইয়ার ২০১৩।
উচ্ছৃঙ্খলতার আশঙ্কায় রীতিমতো চলতি বছরও অনেকটা কড়াকড়িভাবেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল ঢাকা মহানগরীতে। এতে যেন নগরবাসী একটু নাখোশও। কি আর করা! কড়াকড়ির মধ্যেই নগরবাসী বিশেষত তরুণ প্রজন্ম পালন করেছে থার্টিফার্স্ট নাইট। তরুণ প্রজন্ম কিন্তু এ নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় নি। নেচে-গেয়ে উদযাপন করেছে তরুণ প্রজন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ, টিএসসি এলাকা, নীলক্ষেত, গুলশান, বনানী প্রভৃতি এলাকায় থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে রীতিমতো ছিল তারুণ্যের ব্যাপক উচ্ছ্বাস। নিজেদের মতো করে নেচে-গেয়ে তরুণ প্রজন্ম নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে। বছর শেষের প্রথম প্রহরে নতুন বছরকে শুভেচ্ছা জানাতে কার্পণ্য ছিল না কারও মধ্যে। আড্ডার কোন কমতি ছিল না পার্ক, উদ্যান এলাকাগুলোয়। আবার সবান্ধব দূরে কোথাও বেড়িয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। আয়োজন করেছেন স্পেশাল লাঞ্চ-ডিনারের।
২০১২ সালের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত, যাতে আনন্দ ও খুশিতে ভরে থাকে, সে জন্য নতুন বছরের প্রথম দিনে সবার মুখে ঘুরেছে এক ও অভিন্ন শুভ বার্তা- ‘নববর্ষে শুভেচ্ছা তোমায়।’ ডিপ্রজন্মের পক্ষ থেকে আবারও সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
ডিপ্রজন্ম ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.