খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসের পাশ থেকে বোমা উদ্ধার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের পাশের রাসত্মা থেকে দু'টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। বিষয়টি পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে বিএনপি।
খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। গোয়েন্দারাও বলছে, বোমার ঘটনাটি পরিকল্পিত। চলমান চিরম্ননি অভিযানের বিরম্নদ্ধে বিএনপির আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বা বিপরীত অবস্থান নিতে জামায়াত-শিবির এধরনের পরিকল্পনা করতে পারে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর গুলশান থানাধীন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের পাশের রাসত্মায় দু'টি বোমাসদৃশ বস্তু দেখতে পায় পথচারীরা। পরে পথচারীরা পুলিশকে খবর দেয়। গুলশান থানা পুলিশ দ্রম্নত ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে। আশপাশের মানুষকে সরিয়ে দেয়া হয়। গুলশান থানার ওসি কামাল উদ্দিন জানান, দু'টি জর্দার কৌটা লাল স্কসটেপ দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের শতাধিক গজ দূরে রাসত্মার পাশে পাওয়া যায়। খবর পেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট দ্রম্নত ঘটনাস্থলে পেঁৗছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, উদ্ধারকৃত বোমা দু'টি তাজা ছিল। তবে বোমাগুলো তেমন শক্তিশালী ছিল না। জর্দার কৌটায় ছোট বেশকিছু পাথর ও সালফার দিয়ে বোমা দু'টি তৈরি করা হয়েছে। বোমা বিস্ফোরিত হলে প্রচ- শব্দ ও ধোঁয়া হতো। বিস্ফোরণে পাথরগুলো বেশ গতি নিয়ে ছুটে যেত। তিনি আরও বলেন, বোমা দু'টি পুঁতে রাখা হয়েছিল কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্ধারকৃত বোমা দু'টি পানিভর্তি বালতিতে ভিজিয়ে রেখে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত বোমা দু'টির বিস্ফোরণে বড় ধরনের কোন নাশকতা ঘটার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তবে বিষয়টি পরিকল্পিত। আতঙ্ক সৃষ্টি ও পরোৰ হুমকি দিতেই বোমা পুঁতে রাখা হতে পারে। এধরনের পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি দূষিত জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের হাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারম্নক নির্মমভাবে খুন হয়। এরপর দেশে চিরম্ননি অভিযান শুরম্ন হয়। চলমান অভিযানে কয়েক শ' জামায়াত-শিবির অস্ত্রবাজ গ্রেফতার হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে জামায়াত-শিবির। এদিকে সোমবার দুপুরে সংসদ সচিবালয়ের মিডিয়া সেন্টারে বিএনপির সংসদীয় দলের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারম্নক বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীর কার্যালয় থেকে বোমা উদ্ধারের বিষয়টি পরিকল্পিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাও হুমকির মুখে বলে তিনি অভিযোগ করেন। বিরোধীদলীয় নেত্রীর নিরাপত্তা আরও জোরদার করার দাবিও জানান তিনি। এ সময় বিএনপির সংসদ সদস্য নজরম্নল ইসলাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বোমা পেতে রাখা জামায়াত-শিবিরের নয়া কৌশলও হতে পারে। জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ঢাকায় শিবিরের অনত্মত শতাধিক মেস রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি মেসের ঠিকানা পেয়েছে গোয়েন্দারা। রীতিমতো প্রস্তুতি নিচ্ছে শিবির ক্যাডাররা। এবারের সরকারবিরোধী আন্দোলনে তা-ব চালানোর চেষ্টা করবে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা।
অন্যদিকে বোমা নাটক সাজিয়ে জামায়াত-শিবিরের এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির মুখ খোলানোর চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বিএনপিকে পরোৰ হুমকির মুখে রাখছে জামায়াত। জামায়াতের টার্গেট সরকারের লৰ্য ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়া। যাতে দেশব্যাপী চলমান চিরম্ননি অভিযান থেমে যায়। গ্রেফতারের হাত থেকে রৰা পায় জামায়াত-শিবিরকর্মী। গ্রেফতার এড়াতে এটি জামায়াত-শিবিরের নয়া কৌশল।
এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীকে হত্যার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নির্দেশ দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের গ্রেফতারের হাত থেকে বাঁচাতে জামায়াত নেতারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাতের অাঁধারে একাধিক বৈঠক করেছে। বৈঠকে খালেদা জিয়াকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিতে অনুরোধ করেছেন জামায়াত নেতারা। বিএনপির তরফ থেকে আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেৰণের সিদ্ধানত্ম হয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রশিবির ছাত্রদলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক একাধিক গোপন বৈঠক করেছে। জামায়াত-শিবিরের এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রদলকে শিবিরের সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার আহ্বান জানায় ছাত্রশিবির। কিন্তু ছাত্রদল তাতে রাজি হয়নি। এতেই বেকায়দায় পড়ে জামায়াত-শিবির। আন্দোলনের ডাক দিয়ে দেশব্যাপী গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এরপর নয়া কৌশল হিসেবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বোমা পেতে রাখার নাটক সাজায়। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, এধরনের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবির জড়িত থাকতে পারে। খালেদা জিয়া দূষিত জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতারে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। এতে ৰিপ্ত হয়ে জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বোমা পেতে রাখতে পারে। এতে খালেদা জিয়া কথা বলতে বাধ্য হবেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে পরোৰভাবে হুমকি দেয়া। এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির। বোমা ইসু্যকে কাজে লাগিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার চেষ্টা করছে তারা। মূলত সরকারের লৰ্য আন্দোলনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। সরকার আন্দোলনের দিকে নজর দিলে চিরম্ননি অভিযান ঢিলেঢালা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরাও গ্রেফতারের হাত থেকে রৰা পাবে। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে।
রাজধানীতে জামায়াত-শিবিরের অনত্মত শতাধিক মেস রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি মেসের নাম-ঠিকানা এখন গোয়েন্দাদের হাতে। এসব মেস থেকেই জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা ঢাকায় তৎপরতা চালাত। সম্প্রতি চিরম্ননি অভিযান শুরম্ন হওয়ায় জামায়াত-শিবির আশপাশে ঘাপটি মেরেছে। তবে তারা ঢাকাতেই আত্মগোপনে রয়েছে। যে কোন সময় বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে তারা। এজন্য প্রস্তুতি চলছে। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতেই ছাত্রলীগ কর্মী ফারম্নককে হত্যা করে জামায়াত-শিবির। ছাত্রলীগের যে কোন নেতাকর্মীকে হত্যার জন্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্দেশের পরেই খুন করা হয় ফারম্নককে। এটি পরিকল্পনা মাফিক করা হয়। ফারম্নক হত্যার সঙ্গে জড়িতদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত-শিবির ফারম্নককে হত্যা করে। এতে সারাদেশে ধরপাকড় শুরম্ন হবে। অনেক সময় অভিযানে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হয়। এটিও তাদের ইসু্য করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে শিবির গ্রেফতার হয়েও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো সম্ভব হয়। বোমা পেতে রাখার ঘটনাটির নেপথ্য করিগরও জামায়াত-শিবির বলে একাধিক প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা।

No comments

Powered by Blogger.