আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

পাকিসত্মান শাসনামলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পৰে যাঁরা কথা বলতেন, তাঁদের তখন শাসকগোষ্ঠীর হাতে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। ভাষার প্রশ্নে বাঙালীর কোন পঙ্ক্তি তাঁরা পছন্দ করতেন না।
তেমনি একুশ নিয়ে লেখা প্রথম কবিতাটিও মেনে নিতে পারেননি পাকিসত্মানী শাসকগোষ্ঠী। চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দানে ২১ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় কবিতাটি আবৃত্তি করেন হারম্ননুর রশীদ। এর পর পরই পাক সরকার কবিতাটি নিষিদ্ধ করে দেয়। কবিতাটির লেখক কবি মাহুবুব-উল-আলম চৌধুরীর বিরম্নদ্ধে হুলিয়া জারি করে। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক। কবিতার নাম ছিল 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি পঙ্ক্তিগুলো ছিল এমন_ 'এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে/ রমনার উধর্্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার তলায়/ সেখানে আগুনের ফুলকির মতো/ এখানে ওখানে জ্বলছে রক্তের ছাপ/ সেখানে আমি কাঁদতে আসিনি'। এই কবিতা প্রকাশের পর লেখকের ওপর হুলিয়া জারি হয়। তখন ৯ মাস তিনি পালিয়ে, আত্মগোপন করেছিলেন। কবিতার কপিটি লুকিয়ে রেখেছিলেন বাড়িতে। এই কারণেই '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তাঁর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় পাকবাহিনী। অনেক কিছুর সঙ্গে কবিতাটিও পুড়ে যায়। এর পর অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে তিনি আবেদন রাখেন_ যদি কারও কাছে কবিতাটি থাকে, তিনি যেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এর ভিত্তিতে মফিদুল হক নামের এক ব্যক্তি মাহবুব-উল-আলমের কাছে এলেন একটি জরাজীর্ণ ডায়েরি নিয়ে। সে ডায়েরির কিছু অংশ আছে, কিছু অংশ নেই। ডায়েরি থেকে কবিতার যে অংশটুকু উদ্ধার করা গেছে, সেটুকুই আজ বাজারে ছাপার আকারে পাওয়া যাচ্ছে। এ রকম জানা-অজানা ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্য প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও আলোচনাসভার। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলা একাডেমীর মাসব্যাপী অনুষ্ঠানে আজ মঙ্গলবার আলোচনা হবে 'ভাষা আন্দোলন: দুষ্প্রাপ্য দলিলের আলোকে' বিষয়ের ওপর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল কাইউম। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী। আর আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক মাহবুবুল হক রহমান হাবিব ও তারেক রেজা। পরে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.