মোহাইমেনুল ৫ দিনের রিমান্ডে

 চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুম হত্যাকা-ের প্রত্যদর্শী মোহাইমেনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার চট্টগ্রাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এর আগে জিআরপি থানা পুলিশ তাকে মহিউদ্দিন হত্যা মামলায় আসামি করে গ্রেফতার দেখায়। রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্র পরে কেঁৗসুলি বলেন, মোহাইমেন ছাত্র শিবিরের সাথী। সারাদেশে পরিকল্পিত নৃশংসতার ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে। অপরদিকে, আসামি পরে আইনজীবীরা দাবি করেন_ মোহাইমেন কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে নিজেই পরিস্থিতির শিকার।
জিআরপি থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার আসামি হিসেবে সোমবার দুপুরে তাকে আনা হয় চট্টগ্রাম আদালতে। বিকেল ৩টার দিকে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম শামসুল আলমের আদালতে উপস্থিত করে মোহাইমেনের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শহীদ উলস্নাহ। আবেদনে তিনি বলেন, মোহাইমেন এ ঘটনার প্রত্যদর্শী। ঘটনাস্থল থেকে তার ব্যাগ, আইডি কার্ড ও খাতাপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সুতরাং সেখানে তার উপস্থিতির ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। সে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।
আদালতে রাষ্ট্র পরে কেঁৗসুলি চট্টগ্রাম জেলা পিপি এ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বলেন, মোহাইমেনুল ইসলাম ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথী। সে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসবে হত্যার পরিকল্পনা এবং এর সঙ্গে আর কারা জড়িত ছিল সবার নাম। তিনি রিমান্ড মঞ্জুরের জোরালো দাবি জানান। এ সময় আসামি পরে কেঁৗসুলি রম্নবেল পাল রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে মোহাইমেন কোন দলের ছেলে নয় বলে দাবি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থক বেশ ক'জন আইনজীবী। আদালত উভয় পরে বক্তব্য শুনে মোহাইমেনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুরের পর জিআরপি পুলিশ সোমবার বিকেলেই মোহাইমেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়।
এদিকে, ঘটনার প্রত্যদর্শী মোহাইমেনকে খুঁজে পাওয়ার পর আলোচিত এ ঘটনার নেপথ্যে রহস্যের জট খুলতে শুরম্ন করেছে বলে মনে করছে পুলিশ। গত রবিবার রাতে মিডিয়ার সঙ্গে মতবিনিময়কালে সিএমপি কমিশনার মোঃ মনিরম্নজ্জামান বলেন, এটি বড় ধরনের অগ্রগতি। যেহেতু মোহাইমেন ঘটনাস্থলে ছিল এবং সে নিজেও আহত হয়েছে সেহেতু তার কাছ থেকে জানা যাবে গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্য। তার দেয়া তথ্য এবং সংশিস্নষ্ট বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রত্যদর্শী মোহাইমেনুল ইসলাম দাবি করেছে, সে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট নয়। সে রাতে সে অপো করছিল শাটল ট্রেনের জন্য। তখন অপোয় ছিল মহিউদ্দিন মাসুমও। কিন্তু সে মহিউদ্দিনকে চিনত না। ৩/৪ জন সন্ত্রাসী এসে তার ওপর হামলা চালায়। আহত অবস্থায় সে পালিয়ে যেতে সম হয়। পরবতর্ীতে সে স্থানীয় নিরাময় কিনিকে চিকিৎসা নিয়েছে। তার মাথায় ৬টি স্টিজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে কিনিকে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে।
এদিকে, তদনত্মের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট পুলিশের একটি সূত্রের ধারণা_ মোহাইমেন নিজেই কিলিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এমনও হতে পারে যে, ক'জন মিলে মহিউদ্দিনের ওপর হামলে পড়লে মহিউদ্দিনও বাঁচার চেষ্টায় পাল্টা আঘাত করলে সে আঘাতে মোহাইমেন আহত হয়। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অপরদিকে, মহিউদ্দিন হত্যাকা-ের পরদিন তাকে শিবির কর্মী দাবি করে জামায়াত শিবিরের মিছিল ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগে বিশেষ মতা আইনে গ্রেফতারকৃত ৮৬ আসামির মধ্যে ২০ জনের রিমান্ড শেষ হয়েছে রবিবার। সোমবার দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, নিহত মহিউদ্দিন মাসুম শিবির কর্মী ছিল না। জিজ্ঞাসাবাদে এদের কেউ তেমন জোরালো দাবিও করেনি। বরং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে তারা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছিল বলে জানায়। আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
চবির ১৯ জনের দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ॥ মহিউদ্দিন হত্যাকা-ের পর গত শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কটেজ থেকে গ্রেফতারকৃত ২৩ শিবির কর্মীর রিমান্ড আবেদনের শুনানি সোমনার অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওসমান গনির আদালতে। আবেদনে এদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। রাষ্ট্রপরে কেঁৗসুলি এ্যাডভোকেট অশোক কুমার দাশ, এ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিনসহ আইনজীবীরা বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পরিকল্পনা বাসত্মবায়নের জন্য এরা তৎপর রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। বিচারক আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে ১৯ শিবির কর্মীর দু'দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পরীার্থী হওয়ায় বিশেষ বিবেচনায় ৪ জনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। তারা হচ্ছে-মোঃ ইমরান, মোঃ ইউসুফ, মোঃ বেলাল ও আবদুলস্নাহ মুন্সী। এ ১৯ জনকে যে কোন সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মোহাইমেনুলের পরিবারের সংবাদ সম্মেলন ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিনের হত্যাকা-ে আটককৃত মোহাইমেনুল কোন ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয়। মহিউদ্দিন হত্যাকা-ের সঙ্গে তার কোন ধরনের সংশিস্নষ্টতা নেই। সংশিস্নষ্ট আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা সুষ্ঠু ও নিরপে তদনত্মের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে। সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসকাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবারের সদস্যরা এ দাবি জানায়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোহাইমেনুলের বড় ভাই মোমেনুল ইসলাম। পরিবারের সদস্যরা জানায়, কোন কুচক্রী মহল এ ঘটনাকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াতে চাচ্ছে। তবে সে যাতে সুবিচার পায় তার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানায়। তারা নিহত মহিউদ্দিন হত্যাকা-েরও বিচার দাবি করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, মোহাইমেনুল ইসলাম কখনও কোন ছাত্র সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িত ছিল না এবং বর্তমানে কোন সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত নেই। কিন্তু তাকে নিয়ে ঘৃণ্য রাজনীতি শুরম্ন হয়েছে। সে ষড়যন্ত্রের শিকার। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সে নগরীর মেহেদীবাগে টিউশনি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার জন্য শাটল ট্রেনের জন্য অপো করছিল। কিন্তু এ সময় অতর্কিতে চার যুবক মুখে মাফলার জড়ানো অবস্থায় তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে হামলা চালায়। এতে সে মাথায় আঘাত পেয়ে স্টেশনে ব্যাগ রেখে পালিয়ে যায় এবং নগরীর একটি কিনিকে চিকিৎসা নেয়। এরপর থেকে সে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাসায় অবস্থান করে। নিরাপত্তার অভাবে এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয় বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।
সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোহাইমেনুলের চাচা নুরম্নল ইসলাম, বোন নাসরিন সুলতানা, আফরিন সুলতানা, তাসনুমা সুলতানা, ভাই মঈনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের প থেকে আরও জানানো হয়, ২০০৩ সালে মোহাইমেনুলের হার্টে বাইপাস সার্জারি করা হয়। এ জন্য ডাক্তারের পরামর্শে তাকে হলে থেকে পড়াশোনা করতে হয়।
তদনত্ম কমিটির কার্যক্রম ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগ সমর্থক এএএম মহিউদ্দিনের হত্যাক‍াণ্ডের তদনত্ম কার্যক্রম পুরোদমে শুরম্ন করেছে কমিটি। চবি প্রশাসন গঠিত এ কমিটির তিন সদস্য সোমবার দুপুরে হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল ষোলোশহর রেল স্টেশন পরিদর্শন করেছেন। তারা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তদনত্ম কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আলী আশরাফ জনকণ্ঠকে জানান, আমরা অতি দ্রম্নত মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিনের হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটন করতে বদ্ধপরিকর। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল পদপে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তদনত্ম কমিটিকে যে কেউ এ খুনের বিষয়ে তথ্য দিতে পারবে। তথ্যদাতাদের নাম অবশ্যই গোপন রাখা হবে। উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর রেল স্টেশনে চবির মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিন খুন হয়। এরপর শুক্রবার রাতে জরম্নরী সিন্ডিকেট সভায় সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক ইমাম আলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদনত্ম কমিটি গঠন করে চবি প্রশাসন। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
শনিবার চবি খুলছে ॥ আমাদের চবি সংবাদদাতা জানান, সাতদিন বন্ধ থাকার পর আগামী শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যনত্ম অব্যাহত থাকবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। উলেস্নখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে চবি রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ছাত্র মহিউদ্দিন হত্যাকা-ের পর প্রশাসন সাতদিনের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ আলম জানিয়েছেন, মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিনের মৃতু্যতে বিশ্ববিদ্যালয প্রশাসন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। তবে এর বিচার করার জন্য প্রশাসনের প থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে আগামী শনিবার থেকে ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হবে এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সকল ধরনের পদপে নেয়া হবে।
এদিকে, গত ১৩ ফেব্রম্নয়ারি জনকণ্ঠে প্রকাশিত 'মূল পরিকল্পনা চবির খতিব মঞ্জিলে' শিরোণামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করেছেন চবির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব আবু বক্কর মোঃ সিদ্দিক উলস্নাহ। তিনি বলেছেন, প্রকাশিত সংবাদ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মহিউদ্দিন হত্যাকা- নিয়ে খতিব মঞ্জিলে কোন গোপন সভা হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.