জামায়াত শিবিরের ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে- রাজশাহীতে মহাজোটের বিশাল জনসভা

 মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা, মেধাবী ছাত্র ফারম্নক হোসেনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্থানীয় মহাজোট আয়োজিত বিশাল জনসভায় বক্তারা মৌলবাদী, জঙ্গী, তালেবান ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
'ঘাতক জামায়াত-শিবিরের পৈশাচিক হত্যাকা- ও সন্ত্রাসের রাজনীতি রম্নখে দাঁড়াও; যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদরদের বিচারের দাবিতে জাগো বাংলাদেশ' শীর্ষক সেস্ন-াগানকে সামনে রেখে আয়োজিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় মহাজোট সমন্বয়ক ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রম্নজ্জামান লিটন। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট বু্যরো সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। এছাড়া আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আখতার জাহান, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট বু্যরো সদস্য লুৎফর রহমান, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবুল হক বকু, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্য শফিকুর রহমান বাদশা, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পিয়ারম্নল, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা দুরম্নল হুদা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা কমান্ডের সমন্বয়ক শফিকুর রহমান রাজা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আওয়াল কবির জয় বক্তব্য রাখেন।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর এদেশে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালত রায় দিয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ তা বাসত্মবায়ন করেছে। আপনারা (জনগণ) যে রায় দেবে সরকার তা বাসত্মবায়ন করবে। ভুলে গেলে চলবে না, '৭১-এর ১৪ ডিসেম্বর নিজামীরা ভেবেছিল, এদেশ যাতে চলতে না পারে, সেজন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে হবে। তারাই সারাদেশে মেধাবী ছাত্রদের হত্যা করছে। প্রফেসর হুমায়ুন আজাদ, ইউনুস, তাহেরকে তারাই হত্যা করেছে। তাদের প্রতিরোধ করতে হলে গ্রাম পর্যনত্ম ঐক্য বিসত্মৃত করতে হবে। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশটি স্বাধীন করেছিলাম, সেই স্বাধীনতা পদদলিত হয়েছিল। স্বাধীনতার চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল। সেই চেতনা পুনরম্নদ্ধারে মহাজোট গঠিত হয়েছে। এখন সিদ্ধানত্ম নিতে হবে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে রাজনীতিতে থাকতে দেব কি-না? তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলে নিহত ফারম্নকের বন্ধু আমাকে হাসপাতালে বলেছে, ফারম্নককে যখন হত্যা করা হয়, তখন পুলিশের পায়ে ধরে তাকে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা শোনেনি। তিনি অভিযোগ করেন, এখনও সরকারের মধ্যে, পুলিশের মধ্যে জামায়াত-শিবিরচক্রের লোক রয়েছে। এর সঙ্গে খালেদা জিয়া ও বিএনপির নেতারাও জড়িত রয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে, সাংবিধানিকভাবে জনগণকে লড়তে হবে নিরাপত্তার জন্য। আগে আক্রমণকারীকে প্রতিহত করে তারপর থানার দিকে দৌড়াতে হবে। আগেই থানার দিকে দৌড়ালে চলবে না। মানুষের অধিকার যারা পরাজিত করতে চায় তাদের প্রতিহত করতে হবে।
রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, জামায়াত-শিবির জঙ্গীচক্রের রাজনীতি নিষিদ্ধ, হাইকোর্টের রায় বাসত্মবায়ন, '৭২-এর সংবিধানে ফিরে গিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ঘোষণা করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই তখন জামায়াত-শিবিরচক্র ফের হত্যার রাজনীতিতে নেমেছে। তারা শুধু হত্যাই করছে না, বুদ্ধিজীবীদের মতো হত্যা করে লাশ ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে। ঘাতক জামায়াত-শিবিরের কোন মা নেই, মা থাকতে পারে না।
হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, জামায়াত-শিবির আমাদের গায়ে হাত তোলার সাহস পায় কোথা থেকে? মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধানত্ম নিলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ২৪ ঘণ্টার বেশি টিকে থাকতে পারবে না। কিন্তু আমরা তা করব না। আমরা তাদের সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করব। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনী, মোশতাক ও জেনারেল জিয়াউর রহমানের হাত ধরে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি শুরম্ন হয়েছিল। একাত্তরের জামায়াত অঘোষিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরম্নদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু তারা টিকে থাকতে পারেনি। নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ করে ইনু বলেন, ভয় নেই। আরেকটি যুদ্ধ হবে। বাংলার মাটিতেই সামপ্রদায়িক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, জামায়াত-শিবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বার বার রক্তাক্ত করেছে। বার বার লাশ বয়ে নিয়ে এসেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহীর মানুষের সম্পদ। জামিল আখতার রতন, রিমু, রূপম, বিশ্বজিৎসহ অসংখ্য ছাত্রকে তারা হত্যা করেছে। ছাত্রলীগকর্মী ফারম্নককে খুন করে তারা ম্যানহোলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ড. তাহের ও ইউনুসকে জামায়াত-শিবিরচক্র হত্যা করেছে। খুনী, সন্ত্রাসী, একাত্তরের ঘাতক যারা রগকাটায় বিশ্বাসী; তারা মুক্তিযুদ্ধের সম্ভাবনাকে নস্যাত করতে চায়। রাজশাহী থেকে সিদ্ধানত্ম নিতে হবে, জামায়াত-শিবিরের সমসত্ম তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
মেয়র লিটন জামায়াত-শিবিরের অপতৎপরতা বন্ধে প্রতিটি মহলস্না, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায় থেকে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারম্নক হোসেনকে হত্যার জন্য মহানগর জামায়াতের আমির আতাউর রহমানকে দায়ী করেন।

No comments

Powered by Blogger.