গাইবান্ধার চরে থাই রাজকুমারী, হাজার হাজার মানুষ- দীপু মনি যাচ্ছেন আজ by আবু জাফর সাবু

 নদীবেষ্টিত ধুধু বালুময় চরাঞ্চলে রাত কাটানোর সুপ্ত বাসনা পূরণ এবং এ অঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের জীবন জীবিকা এবং মা শিশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে ধারণা পেতে থাইল্যান্ডের রাজকুমারী মাহাচাক্রী সিরিনধর্ন মঙ্গলবার গাইবান্ধায় এসেছেন।
তাঁর সঙ্গে রয়েছেন থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত চেলামপল থানচিট ও তার পত্নী এবং জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বুমবার্গ পাবলিক হেলথ টিম এবং হেলথ এ্যাডভাইজরি বোর্ডের ৩৫ সদস্যের একটি দল। রাজকুমারীকে দেখতে পলাশবাড়ী উপজেলা সদর থেকে বালাসীঘাট পর্যনত্ম ২৮ কিলোমিটার সড়কের দু'পাশে বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরম্নষ দীর্ঘণ অপো করতে থাকে। অতঃপর বিকেলে রাজকুমারীর গাড়ির বহর অতিক্রানত্ম হওয়ার সময় উৎফুলস্ন মানুষ হাত নেড়ে এবং উলস্নসিত হয়ে তাকে অভিনন্দন জানান।
ঢাকা থেকে জিএমজি এয়ার লাইন্সের চার্টার্ড বিমানে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে রংপুর হয়ে গাইবান্ধায় বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের পর বালাসীঘাটের চরাঞ্চলের রসুলপুরে বিশেষভাবে নির্মিত রিসোর্টে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যনত্ম সে কর্মসূচীটির পরিবর্তন করা হয়েছে। কারণ ঢাকা থেকে যাত্রা শুরম্নর পূর্বণে চার্টার্ড করা বিমানটি যান্ত্রিক ত্রম্নটি দেখা দেয়ায় শেষ পর্যনত্ম রাজকুমারী ও তাঁর সঙ্গে সফরকারী দলটি সড়কপথে ঢাকা থেকে সরাসরি গাইবান্ধা বালাসীঘাটে এসে পেঁৗছায় বিকেল ৬টায়। এ সময় গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী, জেলা প্রশাসক মোঃ শহীদুল ইসলাম, ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদসহ জেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারী কর্মচারী জীবিতা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
এজন্য সঙ্গত কারণেই রাজকুমারীর ২ দিন ব্যাপী কর্মসূচীর প্রথম দিনের রংপুরের তাজহাট মাহিগঞ্জ এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় জীবিতা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পসহ যে সমসত্ম প্রকল্প পরিদর্শনের কথা ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। এতে থাই রাজকুমারীর আগমনকে কেন্দ্র করে জেলার প্রত্যনত্ম সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সতিরজান, বামনডাঙ্গা, ধোপাডাঙ্গা, কুপতলাসহ সংশিস্নষ্ট এলাকার মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলতি হয়েছিল তা কর্মসূচী বাতিলে চরম হতাশায় পর্যবসিত হয়। এসব এলাকায় প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কপথে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরম্নষের দিনভর ভিড় পরিলতি হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাটসহ রাসত্মার দু'পাশে এবং নদীর পাড়ে হাজার-হাজার মানুষের ভিড় ছিল লণীয়। রাজকুমারী ও তার সফরসঙ্গীদের আগমন উপল েসর্বসত্মরের নারী পুরম্নষ অধীর আগ্রহ নিয়ে দীর্ঘণ অপো করে। বিশেষ করে, স্থানীয় নারী পুরম্নষের শুধু একটি আগ্রহ ভিনদেশী সেই রাজকুমারীকে এক নজর দেখা। যিনি তাঁদের সুখ দুঃখের সাথী হয়ে দুঃখ দায়িনী নদী তীরবর্তী এই চরাঞ্চলে রাত কাটাতে এসেছেন সুদূর থাইল্যান্ড থেকে। সেজন্য রাজকুমারী এসে পেঁৗছার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে এক নজর দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায় এবং সবাই তাকে হাত নেড়ে উলস্নাসধ্বনি দিয়ে অভিনন্দিত করে। রাজকুমারী গাড়ি থেকে নেমে নৌকায় ওঠার সময় উপস্থিত মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার বিপুল সংখ্যক পুলিশের প েনিয়ন্ত্রণ করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক হাজার মানুষ নদীতে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে রাজকুমারীর নৌকায় ওপারে পাড় হওয়া দেখে।
রাজকুমারী মাহাচাক্রী সিরিনধর্নকে বালাসীঘাটে নৌকায় করে নদীর ওপারে নিয়ে ভাষারপাড়া নামানো হয়। নৌকা থেকে চরের বালুর ওপর দিয়ে নেমে হেঁটে রাজকুমারী ঠাঁই নেন বিশেষভাবে তৈরি বেলের চরের সুদৃশ্য কুঁড়েঘর দ্বারা সাজানো রিসোর্টে। থাই দূতাবাস এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় প্রশাসন ও জীবিতা বাংলাদেশ কর্তৃপকে পূর্বেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে রাজকুমারী চরাঞ্চলে রাত কাটাতে চান নিরিবিলি এবং নদী ও চরের প্রাকৃতিক পরিবেশকে একানত্মভাবে উপভোগ করতে। সেজন্য প্রটোকলের বাহুল্য এবং নিরাপত্তা কর্মীদের আধিক্য যেন রিসোর্টের আশপাশে না থাকে। ফলে প্রশাসনও সেভাবেই প্রয়োজনীয় পদপে গ্রহণ করেছেন। নদীর ওপারে চরাঞ্চলে রাজকুমারী ও বিশেষভাবে নির্ধারিত অতিথি এবং সফরসঙ্গী ছাড়া কাউকেই সেখানে যেতে দেয়া হয়নি। রাতের খাবারের তালিকায় দেশীয় খাবার, বিভিন্ন জাতের নকশী পিঠা এবং রসমঞ্জুরী নামের গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু মিষ্টি। সেই সঙ্গে রাজকুমারীর চাহিদামতো খাবার পরিবেশন করার ব্যবস্থাও সেখানে রাখা হয়েছে।
রাজকুমারীর সফরসঙ্গী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ্ টিম এবং হেলথ্ এ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে যাঁরা গাইবান্ধায় আসছেন তাঁরা হলেন, জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ড. মাইকেল কাগ, এডি ব্রাউন, সিলভিয়া ব্রাউন, কল্পটান্স কমপস্নান, রাংগসিরি চোজিট, ড. পারম্নল ক্রিসচিয়ান, ক্যাথেরিন ডোরিয়ার, জেফ্ ডাবনাউ, স্টেসি ডাবনাউ, ম্যানফ্রেড এগারডোরফার, মরিয়া এগারডোরফার, ড. ওয়াসানটুইসটি এমোরন, মনিক ফরবেস ডিকারসন, মারগারেট হিমেলফার্রব, রিচার্ড হিমেলফার্রব, এলিজাবেত হারউইচ, ড. ফ্রাংক হারলে, ক্যাথেরিন হারলে, পিবুলনাকরিটার কুনিং আরিয়া, ড. রউফ্ বোম, টুনটিসিরিন ক্রাইসিড, ড. এলাইন লাবরিক, মি: এ্যাডওয়ার্ড লাডউইগ, ক্যাথেলিন লাডউইগ, সুচেতা মেহরা, ড. অশোক আগারওয়াল, লাকি মেওনি, আশাভারিভরম্নল হাকরন প্রাপোদ, পল সেইফারট, ড. আলফ্রেড সোমার, মিসেস. জিল সোমার, ড. ক্যাথি ওয়েস্ট, ড. জেমস্ এগার, ড. জনি জারলো। এছাড়া থাইল্যান্ডের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত চেলামপল থানচিট ও তার পত্নী তাদের সঙ্গে থাকবেন।
বুধবার থাই রাজকুমারীর কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়ায় প্রয়াত জমিদার প্যারী মাধবের বাড়ির ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ এবং পরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গায় জীবিত বাংলাদেশের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সেখানেই দুপুরের খাবার সম্পন্ন করবেন। পরে গাইবান্ধা জেলা সদরের জীবিতা বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ে এক আলোচনাসভায় মিলিত হবেন। বিকেলে আবার বালাসীঘাটের চরাঞ্চলের সেই রিসোর্টে ২য় দিনের মতো রাত কাটাতে ফিরে আসবেন।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার সকাল আটটায় ঢাকা থেকে লালমনি এক্সপ্রেসযোগে গাইবান্ধায় এসে পেঁৗছবেন। তিনি জীবিত বাংলাদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং চরে রাজকুমারী ও সফর সঙ্গীদের সঙ্গে রাতের ডিনার শেষে সানত্মাহার হয়ে একতা এক্সপ্রেসযোগে ঢাকা যাওয়া উদ্দেশে রাত সাড়ে ৯ টায় গাইবান্ধা ত্যাগ করবেন।

নীলফামারীর মানুষ হতাশ
নিজস্ব সংবাদদাতা নীলফামারী থেকে জানান, নীলফামারীর আকাশে একটি বিশেষ বিমান আসার কথা ছিল মঙ্গলবার। বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা জেলার সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিশেষ বিমানটি অবতরণ করবে। সেই বিমান থেকে নামবেন থাই রাজকুমারী মহাচাক্রী সিরিনধর্নসহ একটি দল। আগেই ছড়িয়ে পড়েছিল এ কথা। সকাল থেকে থাই রাজকুমারীতে একনজর দেখার জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দর ও সড়কের ধারে মানুষজনের ছিল অধীর অপেৰা। দু'চোখ আকাশের দিকে কখন বিমান ঢাকা থেকে আসবে। সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিটে বিশেষ বিমানটির সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের কথা ছিল। এখানে নেমে সড়কপথে রাজকুমারীর গাইবান্ধা যাবার কথা। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, বিমান আসছে। না অবশেষে বিমানটি আর সৈয়দপুরে আসেনি। আর নীলফামারীবাসীর ভাগ্যে জোটেনি থাই রাজকুমারীতে এক নজর দেখার। হতাশা নেমে আসে লোকজনের মাঝে।

No comments

Powered by Blogger.