রাজধানীতে ছিনতাইকারীর হাতে ছাত্র খুন, নিরাপত্তা প্রহরীকে হত্যা

 রাজধানীতে দু'টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরে ছিনতাইকারীরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপজাতীয় ছাত্রকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যার পর সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়েছে।
এ সময় তার সঙ্গী গুরুতর আহত হয়। পরে জনতা এক ছিনতাইকারীকে ধরে গণধোলাই দিয়েছে। তার কাছ থেকে একটি রক্তমাখা ধারালো ছোরা উদ্ধার হয়েছে। কাফরম্নলে এক নিরাপত্তা প্রহরীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। রমনায় এক কিশোরী গৃহপরিচারিকার রহস্যজনক মৃতু্য হয়েছে। সংসদ ভবনের ফুটাপাথে ব্যায়াম করতে গিয়ে বেপরোয়া বাস চাপায় এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সোমবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দুই খুন জানা গেছে, রবিবার রাত ২টায় ছাত্র অমিত রেমা ঘাগ্রা, সোহাগসহ (২৩) কয়েক বন্ধু মিলে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে রানীঘং মিশনের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান শেষে মাইক্রোবাসযোগে ঢাকায় ফিরছিলেন। আসাদগেটের সামনে অমিত রেমা ও সোহাগ মাইক্রোবাস থেকে নেমে যান। পরে তাঁরা হেঁটে মোহাম্মদপুর থানাধীন রাজিয়া সুলতানা রোডের ১০/৯ নং মেসে ফিরছিলেন। মেসের গেটের সামনে আসার মুহূর্তে সাদা প্রাইভেটকার যোগে ৬ ছিনতাইকারী অমিত ও তাঁর বন্ধু সোহাগকে ঘিরে ধরে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এ সময় অমিত ঘাগ্রা বাধা দিলে এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা অমিত ঘাগ্রার বুকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এটি দেখে সোহাগ ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে ছিনতাইকারীরা তার পায়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সাদা প্রাইভেটকারে ওঠার মুহূর্তে জনতা তাদের ধাওয়া করে। তিন ছিনতাইকারী প্রাইভেটকারে দ্রম্নত পালিয়ে যায়। অন্য ৩ ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করে জনতা মনিরম্নল (২০) নামে এক ছিনতাইকারীকে ধরে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ জনতার কবল থেকে ছিনতাইকারী মনিরম্নলকে একটি রক্তমাখা ধারালো ছোরাসহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রক্তাক্ত গুরম্নতর আহত ছাত্র অমিত রেমা ঘাগ্রা ও তার বন্ধু সোহাগকে সোহরাওয়াদর্ী হাপসাতালে জরম্নরী বিভাগে আনে পুলিশ। এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার অমিত ঘাগ্রাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সোমবার সকাল ৮টায় অমিতের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে নিহতের আত্মীয়স্বজন ও সহকমর্ীরা মর্গে ভিড় জমায়। কান্না ও বেদনায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
জানা গেছে, নিহত অমিত রেমা ঘাগ্রা ধানম-ি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের বিবিএ'র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার পিতার নাম মুহিত রেমা। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থানার ধহিরপাড়া গ্রামে। এক ভাই ১ বোনের মধ্যে সে বড়।
এদিকে সোমবার সকালে পুলিশ দৰিণ কাফরম্নল এলাকার ২৯৭ নম্বর বাড়ির মূল সড়কে মোঃ কাশেম (৬৫) নামে এক সিকিউরিটি গার্ডের রক্তাক্ত জখমী লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে কলেজ মর্গে পাঠায়। নিহতের ছেলে বেলস্নাল পুলিশকে জানায়, দৰিণ কাফরম্নল এলাকার এয়ারপোর্ট হতে কচুৰেতের সংযোগ সড়ক এলাকায় তার বাবা মোঃ কাশেম নাইটগার্ডের কাজ করত। রবিবার গভীর রাতে কে বা কারা তার বাবাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার পর লাশ রাসত্মায় ফেলে যায়। পুলিশ জানায়, নিহত কাশেমের সারা শরীরে ফোলা ও কাটা রক্তাক্ত জখম ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রম্নতার জের ধরে প্রতিপৰরা তাকে হত্যা করেছে। নিহতের পিতার নাম মৃত আনছার আলী। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার চাঁদবাড়ী কতুব সরকারের বাড়ি। তিনি ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক।

রমনায় কিশোরী গৃহপরিচারিকার লাশ
অন্যদিকে এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় পুলিশ রমনা থানাধীন ১৮৯ নং হাসনাবাদ কলোনির ছ-৬ নং ফ্যাটের দ্বিতীয় তলার ড্রইংরম্নম থেকে ফারজানা আক্তার ইতি (১৭) নামে এক কিশোরী গৃহপরিচারিকার লাশ উদ্ধার করে। পরে রাতে তার লাশ ময়নাতদনত্মের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানায়, ইতি ওই বাড়িতে দু'বছর ধরে ঝিয়ের কাজ করত। তার মৃতু্যর ঘটনা রহস্যজনক। লাশের ময়নাতদনত্মের পর আসল ঘটনা জানা যাবে। তবে নিহতের গৃহকর্তা পুলিশকে জানায়, কাজে বাড়ির সবাই বাইরে ছিল। কাজের মেয়ে ইতি ঘরে একা ছিল। এই সুযোগে ইতি ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নিহতের পিতার নাম মৃত সুলতান মিয়া। তার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার গারিদা গ্রামে।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১
জানা গেছে, একই দিন সকালে সংসদ ভবনের সামনে প্রাতর্ভ্রমণে বের হন মনোয়ার হোসেন (৬৩) নামে এক ব্যক্তি। তিনি সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের রাসত্মায় দৌড়াচ্ছিল। হঠাৎ দ্রম্নতগামী মোহনা পরিবহন (ঢাকা মেট্রো জ-১১-২০৪৯) বাস পেছন থেকে তাঁকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তাঁর মৃতু্য ঘটে। নিহতের পিতার নাম মৃত মৌলবী সিরাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়ার ডি বস্নকের ১/১ নম্বর বাড়িতে সপরিবারে থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.