হোঁচট খাচ্ছে পেট্রোবাংলা- গ্যাস রেশনিং

শিল্পকলকারখানায় গ্যাস রেশনিংয়ে হোঁচট খেল পেট্রোবাংলা। প্রত্যেক দিন নির্দিষ্ট এলাকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। চাহিদা এবং সরবরাহে বিশাল ঘাটতির তুলনায় রেশনিংয়ে সাশ্রয় সামান্য হওয়াতে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার রেশনিংয়ের বাইরে থাকা এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় আগের মতোই উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
সূত্রমতে বর্তমানে প্রত্যেকদিন গড়ে উত্তোলিত ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে তিতাসের গ্রাহকরা ব্যবহার করছে ১৬৫ কোটি ঘনফুট। তিতাস এ চাহিদার প্রেৰিতে ১৪৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। তিতাসের প্রত্যেকদিন ২১ কোটি ঘনফুট ঘাটতির বিপরীতে রেশনিংয়ে সাশ্রয় হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ঘনফুট। এ পরিস্থিতিতে রেশনিংয়ের আওতাভুক্ত এলাকায় সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে গৃহস্থালিকাজে পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া গেলেও অন্যসব এলাকার চিত্র আগের মতোই রয়ে গেছে।
সংশিস্নষ্ট সূত্রমতে উত্তোলিত গ্যাসের মধ্যে শিল্প খাতে ১৮ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে বিদু্যত খাতে ৪১ শতাংশ। সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ মেগাওয়াট বিদু্যত কম উৎপাদন হচ্ছে। শীত মৌসুমে বিদু্যত চাহিদা কম থাকায় আপাতত এ খাতে সংকট মোকাবেলা সম্ভব হচ্ছে। তবে সেচ মৌসুমে বাড়তি এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদু্যত চাহিদা সৃষ্টি হওয়ার প্রেৰিতে বিদু্যত কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে শিল্পে গ্যাস সঙ্কট চরম আকার ধারণ করবে। গ্যাসের তীব্র সঙ্কটে দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। পুরনো শিল্পগুলোও পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদনে যেতে না পারায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে।
তিতাস সূত্রমতে শনিবার রাজধানীর ঢাকা মেট্রো-১ এবং ঢাকা মেট্রো-২ অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। মেট্রো-১ এবং ঢাকা মেট্রো-২ এ থাকা এলাকাগুলো হচ্ছে ডেমরা, সারম্নলিয়া, পোসত্মগোলা, শ্যামপুর, জুরাইন, নারিন্দা, সায়েদাবাদ, ওয়ারী, চকবাজার, বংশাল, নবাবপুর, বাংলাবাজার ও পলাশী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নিয়ম মেনেই এসব এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শনিবার বন্ধ ছিল। তবে এতে অন্য এলাকার সরবরাহে উন্নতি হয়নি।
গ্যাস রেশনিংয়ের তৃতীয় দিনে শনিবার বিকেএমই'র প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক জানান, রেশনিংয়ে উলেস্নখযোগ্য কোন উন্নতি হয়নি। আরও চার পাঁচদিন দেখার পর তাঁরা পেট্রোবাংলাকে এ বিষয়ে অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।
রেশনিংয়ের তৃতীয় দিনে আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রম্নমন রেজা জানান, তার এলাকার গ্যাস সঙ্কট পরিস্থিতি আগের মতোই রয়েছে। তীব্র গ্যাস সঙ্কটের কারণে নারায়ণগঞ্জে শিল্পের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পে রেশনিংয়ের পরও পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। কারখানা চালাতে বাধ্য হয়ে তারা এখন ডিজেল জেনারেটর চালাচ্ছে যাতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হলেও কারখানাগুলো পূর্ণ উৎপাদনে যেতে পারছে না।
এ বিষয়ে হাশেম স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ইয়ান মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ সুলাইমান বলেন, গ্যাস সঙ্কটের কারণে স্পিনিং কারখানাগুলোর অসত্মিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। তীব্র গ্যাস সঙ্কটের কারণে তাঁর কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতিদিন কারখানা চালিয়ে রাখতে ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে ডিজেল জেনারেটর চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। তবে ডিজেল জেনারেটর চালিয়ে চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। এখানের সকল স্পিনিং মিলের অসত্মিত্ব একই রকম বলে জানান তিনি।
শনিবার কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি সালাউদ্দিন মিয়া স্থানীয় শিল্প মালিকদের বরাত দিয়ে জানান, কেরানীগঞ্জের গ্যাস সঙ্কট আগের মতোই রয়েছে। প্রতিদিন গ্যাস সঙ্কটের কারণে উপজেলায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন শুধু কেরানীগঞ্জে গ্যাস সঙ্কটের কারণে ১৫ কোটি টাকার শিল্প উৎপাদন কম হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কেরানীগঞ্জের গেস্নাবাল ওয়াশিংয়ের স্বত্বাধিকারী বাবু হোসেন জানান, প্রতিদিন গ্যাসের চাপ না থাকায় তার প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এখানে গড়ে ওঠা গার্মেন্টস ৬ হাজার ছোট বড় গার্মেন্টসের জন্য যে ওয়াশিং পস্নান্টগুলো গড়ে তোলা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশই আর্থিকভাবে ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে শিল্প টিকিয়ে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়বে।
গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ না থাকার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিলাসী টেক্সটাইলের মালিক হাজী আবুল কাশেম এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ওয়াশিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোঃ রমজান। তাঁদের মতে রেশনিং করার পরও শিল্প প্রতিষ্ঠানে সরবরাহর কোন উন্নতি হয়নি।
আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি মোসত্মাফিজুর রহমান টিটু শনিবার জানান, জেলার কালিয়াকৈর এবং টঙ্গীতে গ্যাস সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। এখানের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাসাবাড়ি এবং সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে এপেক্স টেরিটয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যনত্ম গ্যাসের চাপ আগে যেমন ছিল তেমনই আছে। রেশনিং তাদের জন্য কোন সুফল বয়ে আনেনি।
শনিবার একই বিষয়ে টঙ্গীর নোমান গ্রম্নপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরম্নল ইসলাম জানান, রাত ১১টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যনত্ম গ্যাস পেলেও দিনে তাঁরা গ্যাস পাচ্ছেন না। সকাল ১০টা থেকে গ্যাসের চাপ এতটাই কমে আসে যে কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোন বিকল্প থাকে না। তিনি জানান, মেশিন চালাতে গেলে ১৫ থেকে ২০ পিসিআই চাপে গ্যাস থাকতে হয় কিন্তু সকালে তা এক থেকে দেড় পিসিআইতে নেমে আসে। গ্যাসের পর্যাপ্ত চাপ থাকলে তার প্রতিষ্ঠান বর্তমানের দ্বিগুণ রফতানি করতে পারত। তিনি জানান, গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা যে হারে বেড়েছে সঞ্চালন লাইন সেভাবে নির্মাণ করা হয়নি। শুধু শ্রীপুর ছাড়া গাজীপুরের অন্য এলাকাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা খুবই নাজুক।
আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি মোসত্মফা কামাল সরকার তাঁর এলাকার গ্যাস সঙ্কট পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান, রেশনিং করার পরও নরসিংদীর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে না। সিএনজি স্টেশন এবং বাসাবাড়িতেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে নরসিংদীর ভঁূইয়া সিএনজি রিফুয়েলিংয়ের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় তাঁরা অর্ধেক গ্যাসের চাপ পাচ্ছেন। যাতে সিএনজি ব্যবসায়ী এবং ব্যবহারকারী উভয়ে ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.