ব্রাদার্স ৪: ১ মোহামেডান- ব্রাদার্সে বিধ্বস্ত মোহামেডান

খেলোয়াড় বিদ্রোহের কুফলটা হাতে হাতেই পেল মোহামেডান? সোজা উত্তর—অবশ্যই। দুদিন আগে বেতনের দাবিতে মোহামেডান খেলোয়াড়েরা অনুশীলন বর্জন করলেন।
টানা দুই দিন! পরশু খেলোয়াড়েরা অনুশীলনে ফিরলেন বটে, কিন্তু পরদিন ম্যাচ খেলতে নেমে বিদ্রোহের প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারলেন কই!
ব্রাদার্সের কাছে কাল মোহামেডান উড়ে গেছে ৪-১ গোলে। লিগের প্রথম পর্বে মরিসনের হ্যাটট্রিকে এই ব্রাদার্সকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল সাদা-কালোরা। ফিরতি পর্বের শুরুতেই ঠিক বিপরীত ছবি। পেশাদার লিগে এত বড় ব্যবধানে সাদা-কালোরা হারেনি ব্রাদার্সের কাছে। মোহামেডানের জন্য এটা লজ্জার।
টানা ছয় হারের পর ভাগ্য ফিরেছে ব্রাদার্সের। পরের তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট! কাল ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে ব্রাদার্স কোচ লাডি বাবালোলার কথাবার্তায় আত্মবিশ্বাসের ঝলক। মোহামেডানকে বড় ব্যবধানে হারাবেন এটা নাকি আগেই জানতেন! এক সাংবাদিক রসিকতা করে বললেন, লাডি স্বপ্নে দেখেছেন মোহামেডানকে চার গোলে হারাবেন!
ফিরতি পর্বে শিরোপা-প্রত্যাশীদের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠল ব্রাদার্স। অবনমন বাঁচাতে থরহরি কম্প ব্রাদার্স এদিন মোহামেডানকে যোগ্যতর দল হিসেবেই নাকানি-চুবানি খাইয়েছে। এই ব্রাদার্স জয়ের নেশায় এককাট্টা।
কাল ছয় মিনিটে মরিসনের গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান, এরপর কমলা রঙের জার্সিধারীদের প্রতাপ গোটা ম্যাচে। গোল খেয়ে আহত বাঘের মতো ব্রাদার্স ঝাঁপিয়ে পড়ল মোহামেডানের ওপর।
মোহামেডান অবশ্য ছিল বদলে যাওয়া এক দল। প্রথম পর্বের তিনজন বিদেশি বিদায় দিয়ে নেওয়া হয়েছে সাদামাটা নতুন বিদেশি (সবাই যথারীতি আফ্রিকান)। নতুনেরা মোহামেডানের জোয়াল টানার সামর্থ্য রাখেন বলে মনে হয়নি প্রথম ম্যাচে।
নতুন মোহামেডানের রক্ষণকাজটা ছিল ছন্নছাড়া। সেই সুযোগই ব্রাদার্স নিয়েছে। উপরন্তু প্রতিপক্ষের সীমানায় খেলেছে ‘প্রেসিং ফুটবল’। মোহামেডানের রক্ষণে ব্রাদার্সের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড কিংসলে, ব্রাজিলের অ্যান্ডারসন ছিলেন ভীতিজাগানো।
সমতাসূচক গোলটা ব্রাদার্স পেয়েছে ৩৭ মিনিটে, অ্যাডমসের ধ্রু ধরে গোল করেন কিংসলে। বিরতির ঠিক আগে নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার স্যামসন করেন ২-১। ৫৭ মিনিটে ব্যবধান বাড়ান অ্যাডামস। এটা ৬৮ মিনিটে ৪-০ করেন কিংসলে।
অথচ শেখ রাসেলকে এই মোহামেডানই ৩-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল। প্রথম পর্বের সপ্তম ম্যাচে সেই মোহামেডান গোপালগঞ্জে ৪-১ গোলে হেরেছে মুক্তিযোদ্ধার কাছে। ওই পরাজয়কে সন্দেহের চোখে দেখে কর্তারা খেলোয়াড়দের কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছেন। তারপর খেলোয়াড়দের অনুশীলন বর্জন গোটা দলের ভিতই কাঁপিয়ে দিয়েছে।
তিন ম্যাচের মধ্যে মোহামেডানের ৮ গোল হজম করা দলটির নামের সঙ্গে বেমানান। এমন অবস্থায় অনুশীলন বর্জন করায় খেলোয়াড়দের শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন মোহামেডান কর্মকর্তারা।
মাঝখানে পড়ে হাঁসফাঁস অবস্থা কোচ সাইফুল বারীর। ব্রাদার্স-বিপর্যয়ের পর দায় মেনে তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘এটা ঠিক, সব খেলোয়াড়কে না পাওয়ায় ওই দুদিন কম্বিনেশন তৈরি করার সুযোগটা আমি হারিয়েছি।’
চড়া মূল্য দিয়ে সেটি বুঝলেন মোহামেডানের খেলোয়াড়েরাও!

No comments

Powered by Blogger.