দুই শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর-আগুন- রাজধানীতে শিবিরের তাণ্ডব

আবার তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুক্তি ও ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে ‘বিক্ষোভে’র নামে তারা গতকাল সোমবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস তৎপরতা চালিয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে প্রায় একযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, ফরিদপুর, বগুড়া, সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি স্থানে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে রাস্তায় নামেন। তাঁরা বেপরোয়া গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালান। এতে অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্য আহত হন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জামায়াত ও শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের গুলিবিনিময়ও হয়েছে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনায় বাঁশখালী জামায়াতের আমিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজধানীতে মতিঝিল থানার ওসিসহ অন্তত ২১ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ভাঙচুর করা হয় দুই শতাধিক গাড়ি। পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় তিনটি গাড়িতে। অর্থমন্ত্রীর প্রটোকলের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। তবে এ সময় মন্ত্রী গাড়িতে ছিলেন না। অর্থমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরাও আহত হন।
মতিঝিলে হামলা-সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চার দফায় ১৩টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসব হামলা-সংঘর্ষের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ের ভেতরে ছিলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সংঘর্ষের সময় ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ৫৫ জনকে আটক করেছে। আহত পুলিশ সদস্যদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে একই দাবিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর থেকে দফায় দফায় সারা দেশে চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করে জামায়াত-শিবির। এসব মামলায় এ পর্যন্ত দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন। এর আগে হামলার ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও ওঠে।
মতিঝিলে হামলা: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকালের হামলা-ভাঙচুরের চিত্র ছিল ভয়াবহ। সকাল পৌনে ১০টার দিকে কয়েক শ শিবিরকর্মী মতিঝিলের শাপলা চত্বর-সংলগ্ন এলাকা থেকে ঝটিকা মিছিল বের করে স্লোগান দিয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ের দিকে যেতে থাকেন। তখন পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালালে শুরু হয় সংঘর্ষ। শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়লে শিবিরকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশে বিভিন্ন স্থানে দৌড়ে চলে যান। শুরু হয় গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শিবিরকর্মীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পল্টন ও জিরো পয়েন্ট এবং বায়তুল মোকাররম ও রাজউক ভবনসংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের দিকে চলে যান। দৌড়ে যেতে যেতেই তাঁরা সামনে পাওয়া কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ও কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর করেন। পুলিশ প্রতিহত করতে গেলে শিবিরকর্মীরা চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের টুকরা ছুড়ে মারতে থাকেন। ওই অবস্থায় পুলিশও কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে।
এমনিতেই মতিঝিল এলাকা সব সময় থাকে ব্যস্ত। সকাল ১০টার দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা ছিল লোকারণ্য। ঠিক ওই সময় সংঘর্ষ হওয়ায় মুহূর্তেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গাড়ি ভাঙচুরের সময় যাত্রীরা যে যেভাবে পারেন, বের হয়ে যান। অনেকেই বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে বের হন।
পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, শতাধিক শিবিরকর্মী মতিঝিলের অগ্রণী ব্যাংকসংলগ্ন কোনো একটি গলি থেকে হঠাৎ ঝটিকা মিছিল শুরু করেন। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের ওপরও অতর্কিত হামলা চালানো হয়।
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক ইয়াসির আরাফাতের দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে আটক নেতাদের মুক্তি ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবু সালেহ মো. ইয়াহিয়ার মুক্তির দাবিতে এবং শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে তাঁরা মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেটে অন্তত ৫০ জন শিবিরকর্মী আহত হন।
এদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘একটি সন্ত্রাসী সংগঠন কর্তৃক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা, শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং বোমা হামলার ঘটনায় এফবিসিসিআই তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছে।’ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

No comments

Powered by Blogger.