১৮ দিনের টানা শিক্ষক ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা ঐক্য পরিষদের

 চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা ১৮ দিন ধরে চলা ধর্মঘট স্থগিত করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে দেশব্যাপী শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষকরা এ কর্মসূচী আপাতত স্থগিতের এ ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে সংগঠনটির এক দফা দাবি শিক্ষানীতি ২০১০ দ্রুত বাস্তবায়ন করে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে অনড় থাকবেন সরকার সমর্থিত এ শিক্ষক সংগঠনটি। এদিকে দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে শাহবাগ মোড় থেকে অবরোধ কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছে বিএসসি ইন হেলথ টেকনোলজি (ডেন্টাল) স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটেতে সংবাদ সম্মেলন করে সারাদেশে স্কুল, কলেজে ডাকা লাগাতার ধর্মঘট স্থগিতের কথা জানান সংগঠনের বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা। গত ৯ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করেছে বলে উল্লেখ্য করে সরকার সমর্থিত এ সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি ও বালাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলী আহমেদ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ বেসরকারী কারিগরি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু, সংগঠনের সমন্বয়কারী ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত কুমার সাহা, হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর চৌধুরী প্রমুখ। কর্মসূচী প্রত্যাহার সম্পর্কে নেতারা বলেন, জাতীয় স্বার্থ, শিক্ষার্থীদের কথাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে চলমান ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করা হলো। এর আগে গত বছর ১৭ নবেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ থেকে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে সংগঠনটি ঘোষিত ১৭ দফা দাবি মেনে নেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে দাবি না মানায় চলতি মাসের ১২ জানুয়ারি থেকে অবিরাম ধর্মঘট কর্মসূচী পালন করেন শিক্ষকরা। কর্মসূচীর মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী বাড়ি-ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও তা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে সংগঠনটি। এর আগে রবিবার চাকরি জাতীয়করণ না হলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েও নানা বিতর্কের মুখে তা প্রত্যাহার করে আন্দোলন স্থগিত করেছে বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট। সংগঠনের এ অংশের চেয়ারম্যান সেলিম ভূইয়া বলেছেন, আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে জাতীয়করণের ঘোষণা না দিলে ৩১ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট। মহাসমাবেশে বাধা দিলে ১ এপ্রিল সারাদেশে শিক্ষকরা হরতাল পালন করবে বলেও হুমকি দেন সেলিম ভূঁইয়া। এছাড়া রবিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষাঙ্গনে ধর্মঘটের তীব্র সমালোচনা করে শিক্ষা জাতীয়করণে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ। এদিকে সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা অবরোধ করে কর্মসূচী পালন করে বিএসসি ইন হেলথ টেকনোলজি (ডেন্টাল) স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন। একই স্থানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে সাধারণ ছাত্র পরিষদের অবরোধে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। এক ফলে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। দুপুরের পর দুই সংগঠন কর্মসূচী তুলে নেয়। এ সময় সরকারকে দাবি মানতে সময় বেঁধে দেয় বিএসসি ইন হেলথ টেকনোলজি (ডেন্টাল) স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনের আহ্বায়ক আবুল মনসুর বলেন, তাঁদের কোর্সে যা পড়ানো হয় তা পুরোপুরি ডেন্টাল সার্জারির। এখানে টেকনোলজির কোন বিষয়ই নেই। সিলেবাসের সঙ্গে কোর্সের নামের মিল না থাকায় পাস করার পর তাঁরা চাকরি পান না। কোর্সের নাম পরিবর্তনসহ কয়েকটি দাবিতে তাই তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। গত বছরের ১৮ নবেম্বর স্বাস্থ্য সচিব এক মাসের মধ্যে দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছিলেন, তবে এখনও সেই দাবি মানা হয়নি। তাই তাঁরা আজ অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছেন। পাঁচ দফার মধ্যে রয়েছে বর্তমান সিলেবাসের আলোকে কোর্সের নাম পরিবর্তন করে ব্যাচেলর অব ডেন্টিস্ট্রি (বিডিএস) বা বিএসসি ইন ডেন্টিস্ট্রি করা, কোর্সটি বিএমডিসির অনুমোদন দেয়া, সরকারী হাসপাতালগুলোতে পদ সৃষ্টি করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। সংগঠনের আহ্বায়ক আরও বলেন, দাবি মানতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দাবি না মানলে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। প্রায় একই সময়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবিতে কর্মসূচী পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচী পালন করা হয়। দাবির যৌক্তিকতা সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কর্মসূচীতে ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৫৯ বছর করার পর যুব সমাজ এক ধরনের স্থবির পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। আবার সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একদিকে যেমন গড় আয়ু বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে সেশনজট। তাই পৃথিবীর উন্নত অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা জরুরী। কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ ছাত্র পরিষদের সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক আইয়ুব আলী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সুমন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.