সংসদ গ্যালারি থেকে

উত্তম চক্রবর্তী নিষপ্রাণ সংসদ চলছে। বিরোধী দল নেই। তাই উত্তপ্ত বিতর্ক, উত্তেজনা, দফায় দফায় ওয়াক আউটের ঘটনা যেন ভুলেই যেতে বসেছেন খোদ সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা।
উত্তাপ নেই, তাই সরকারী দলের সাংসদদেরও যেন মন নেই অধিবেশনকার্যে। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতির সুবাদে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সিনিয়র নেতাদের গরহাজির ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে পুরনোদের চেয়ে নতুন সংসদ সদস্যদের উপস্থিতির কমতি ছিল না। রসিক স্পীকার একাই সংসদ মাতিয়ে রাখলেও মঙ্গলবার তিনিও যেন ছিলেন 'মুড অফ' অবস্থায়। মন্ত্রী-স্পীকারের প্রেম! প্রশ্নোত্তরপর্বে উত্তর দিচ্ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। সরকারী দলের সাংসদ মোসলেম উদ্দিন ডাক বিভাগের অতীত গৌরব হারানোর বিষয়টি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এমন অভিযোগ স্বীকার করে অনেকটাই হতাশ কণ্ঠে মন্ত্রী বলেন, মাননীয় স্পীকার, সংসদ সদস্য ঠিকই বলেছেন, আগের মতো নীল খামে চিঠি পাই না। আগে যেমন ডাকঘরে চিঠির সত্মূপ আসত, মোবাইলের যুগে তা এখন আর আসে না। রসিক স্পীকার চুপ করে থাকার পাত্র নন। তাৎৰণিক জবাব_
"মাননীয় মন্ত্রী, নীলখামের মধ্যে প্রেমপত্র দিতেন কী-না?" ছাড়বার পাত্র নন মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। বলেন, "খামের মধ্যে করে প্রেমপত্র দেয়ার অভ্যাস আপনার যেমন ছিল, আমারও ছিল। ছাত্রাবস্থায় সকলেরই এ অভ্যাস থাকে।" এ সময় সবাই টেবিল চাপড়ে মন্ত্রীর বক্তব্য সমর্থন করেন অপেৰাকৃত তরম্নণ সংসদ সদস্যরা।
উকিলের কোর্ট বলে কথা
সরকারী দলের সংসদ সদস্য তারানা হালিম। সংসদ সদস্য, রাজনীতিকের পরিচয় ছাপিয়ে দেশজুড়ে খ্যাতনামা নাট্যশিল্পী হিসেবেই অধিক পরিচিতি তাঁর। এসব পরিচয়ের বাইরে তারানা হালিমের আরেকটি পরিচয় রয়েছে। তা হলো তিনি অত্যনত্ম চৌকস আইনজীবীও। মঙ্গলবার সংসদে তিনি শাড়ির ওপর এ্যাশ কালারের কোর্ট পরে সংসদে এসেছিলেন। বিষয়টি দৃষ্টি এড়ায়নি স্পীকারের। সম্পূরক প্রশ্নের জন্য তারানা হালিমকে ফোর দিতে গিয়ে স্পীকার বলেন, "কোট সুট বি বস্নাক।" স্পীকার যেহেতু নিজেও একজন প্রবীণ আইনজীবী, তাই আরেক আইনজীবী তারানা হালিমের কোট কালো পরার পৰে ওকালতি দেখে সবাই হেসে ওঠেন। যদিও প্রশ্ন করতে উঠে কালো কোট ছাড়া এ্যাশ কালারের কোট পরে আসার কোন কারণ ব্যাখ্যা করেননি তারানা হালিম।
স্বপ্নের পুরম্নষ হলে বাসত্মবে কী?
সম্পূরক প্রশ্নের জন্য ফোর পান নরসিংদী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনোয়ারম্নল আশরাফ। যাঁর উদ্দেশে এই প্রশ্ন সেই ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুও নরসিংদীর সনত্মান। তাই ফোর দিতে গিয়ে স্পীকার বলেন, "নরসিংদী টু নরসিংদী।" কিন্তু মজার ব্যাপার হয় সাংসদ আশরাফ সরাসরি প্রশ্নের আগে তাঁর এলাকার মন্ত্রীর একরাশ ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, "মন্ত্রী আমাদের নরসিংদীর কৃতীসনত্মান, স্বপ্ন পুরম্নষ। তাঁর প্রতিটি কর্মকা-ে এলাকার মানুষ সন্তুষ্ট। তিনি আমাদের সব দাবি পূরণ করবেন এটা সবার বিশ্বাস।" এমন বিশেষণে প্রশংসা শুনে মন্ত্রী নিজেও কিছুটা বিব্রত হন। হাস্যরসে পটু স্পীকার বিষয়টি বুঝতে পেরে টিপ্পনি কেটে বলেন, "মাননীয় সদস্য, স্বপ্নের পুরম্নষ বললেন, বাসত্মবে বোধ হয় দেখেন না।" জবাবে সাংসদ আনোয়ারম্নল আশরাফ বলেন, "আমরা মন্ত্রীকে বাসত্মবেও দেখি, স্বপ্নেও দেখি।"
মন্ত্রীর জৌলুস একটুকুও কমেনি
নিষপ্রাণ সংসদে নানা হাস্যরসাত্মক মনত্মব্য ছুড়ে অধিবেশন মাতিয়ে রাখার জুড়ি নেই স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের। মঙ্গলবার তাঁর কিছুটা মুড অফ থাকলেও একেবারেই নিশ্চুপ ছিলেন না। সরকারী দলের সংসদ মোসলেম উদ্দিন ডাকঘরের জৌলুস হারানো নিয়ে প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, "আমার বিশ্বাস মন্ত্রীও চান, এই হারানো জৌলুস যেন ফিরে আসে।" হাসতে হাসতে স্পীকার বলেন, "মাননীয় সদস্য, ডাকঘরের জৌলুস হারিয়ে গেলেও মন্ত্রীর (ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু) জৌলুস এতটুকুও কমেনি। তিনি নিশ্চয় জৌলুস ফিরিয়ে আনতে পারবেন। আর মন্ত্রীরা চাওয়ার মালিক নন, শুধু দেয়ার মালিক। যা চাইবেন তাই পাইবেন।" জবাবে ওই সাংসদ বলেন, "জি স্যার, স্পীকার অলওয়েস কারেক্ট।" এ সময় সবাই হেসে ওঠেন।

No comments

Powered by Blogger.