পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন ও অস্ত্র ক্রয় চুক্তি হবে- প্রধানমন্ত্রী আজ রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন

পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, অস্ত্র ক্রয় চুক্তি ও ছয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে সামনে রেখে আজ সোমবার তিন দিনের সফরে রাশিয়া যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একাত্তরে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বিনির্মাণে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া অকৃত্রিম Ÿন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়ায় (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সরকারের শেষ বছরে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য দেয়ার আয়োজন এ সফরে বাড়তি আবেগ হিসেবে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সকাল ৯টায় বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমান প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে। বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর বহনকারী বিমানটি মস্কোর শেরেমেতিয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে। বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা শেষে প্রধানমন্ত্রীকে মোটরশোভাযাত্রা সহকারে মস্কোর প্রেসিডেন্ট হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। রুশ নেতার আমন্ত্রণে রাশিয়ায় ৩ দিনের সফরকালে তিনি এ হোটেলেই অবস্থান করবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর ক্রেমলিন কার্যালয়ে একান্ত বৈঠক করবেন। সে সময় তিনি রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন এবং বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এর পর শেখ হাসিনা এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নেবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভøাদিমির পুতিনের দেয়া আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন। রুশ ফেডারেশনের ফেডারেল কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন ভ্যালেন্তিনা ইভানোভানো ম্যাতভিয়েনকো এবং রুশ ফেডারেশনের যোগাযোগ ও গণমাধ্যম মন্ত্রী নিকোলে নিকিফোরভ শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। এছাড়া রাশিয়ার পরমাণু সহযোগিতা সংস্থা আরওএসএটিওএম-এর জেনারেল ডিরেক্টর সার্গেই কিরিয়েঙ্কো শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন।
প্রধানমন্ত্রী মস্কোর নাম না জানা সৈন্যদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিখ্যাত ক্রেমলিন জাদুঘর ও বলশয় থিয়েটার পরিদর্শন করবেন। শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি গ্যাজপ্রম কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি ‘কনটেম্পরারি বাংলাদেশ-পার্সপেক্টিভ ফর কলাবোরেশন উইথ রাশিয়া’ বিষয়ে বক্তব্য দেবেন। তিনি সেখানে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেবেন এবং ইউনিভার্সিটির রেক্টরের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
উল্লেখ্য, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বক্তব্য রেখেছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের এপ্রিলে মস্কো সফরের সময় বঙ্গবন্ধু ওই বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছিলেন। একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশকে অপরিসীম সহায়তা দেয়ার কারণে সেই সময় তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আগামী ১৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, এ্যাম্বাসেডার এ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং সংশ্লিষ্ট খাতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ মোট ৫১ জন।
এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় রাশিয়া সফর। এর আগে ২০১০ সালের নবেম্বরে শেখ হাসিনা বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরামের এক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দিতে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ সফর করেন।
এদিকে রবিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২টি চুক্তি ও ৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের তথ্য তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রূপপুরে এক হাজার মেগাওয়াটের দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর মধ্যে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আর্থিক, কারিগরি এবং নির্মাণপূর্ববর্তী কার্যক্রম পরিচালনা এবং নিরাপত্তার জন্য পৃথক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার সামরিক অস্ত্র ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এছাড়া কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সন্ত্রাস দমন, আইন ও বিচার এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রে মোট ৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ফলে প্রকল্পের মোট বাজেট ও মেয়াদকালসহ বিস্তারিত তথ্য ইআরডির কাছে রয়েছে। একইভাবে সামরিক ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তিটির বিস্তারিতও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল, ইউরোপ অনুবিভাগের মহাপরিচালক রিয়াজ হামিদুল্লাহ, বহির্প্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক শামীম আহসান, কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগের মহাপরিচালক সুলতানা লায়লা হোসেনসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.