কলঙ্কমোচনের দ্বিতীয় রায় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসংক্রান্ত কলঙ্কমোচনের দ্বিতীয় রায় হবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ যে কোনো দিন এই রায় ঘোষণা করতে পারেন। তবে দিনক্ষণ আগেই উভয়পক্ষের আইনজীবীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
এমনকি ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে প্রেসব্রিফিং করেও তারিখ জানানো হতে পারে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে মাওলানা আবুল কালাম আযাদের (বাচ্চু রাজাকার) বিরুদ্ধে প্রথম রায়টি দেওয়া হয় গত সোমবার।
রায়ে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়েছে। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধেও গণহত্যা, হত্যাসহ একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পর রায় ঘোষণা করা হয়। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে ১৭ জানুয়ারি। তাই এ মামলায় রায় প্রস্তুত করতে আর কত দিন লাগবে তা পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের ওপর নির্ভর করছে। মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে মামলায় জেরা বা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়েছে তুলনামূলক কম। তবে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষীদের জেরা করা হয়েছে ব্যাপকভাবে। সাফাই সাক্ষীও দেওয়া হয়েছে। আর এ কারণে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনও হয়েছে বেশ। তাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য, জেরা ও সাফাই সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করতে সময় লাগতে পারে।
আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে মামলায় গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করা হয়। ২৬ নভেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। শুধু রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা এতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) সাক্ষীদের জেরা করেছেন দ্রুততম সময়ে। আসামি পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী দেওয়া হয়নি। এ কারণে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে (২২ ডিসেম্বর) শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনও হয়েছে সংক্ষিপ্ত সময়ে। সব মিলে এ মামলায় বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে।
আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলায় ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়। এর পাঁচ মাস পর গত বছরের ২৮ মে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর জুনের শেষ সপ্তাহে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন এবং আসামি পক্ষে কাদের মোল্লাসহ ছয়জন সাফাই সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ১৭ জানুয়ারি এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন হয়। যেখানে মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর থেকে সাড়ে চার মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সময় লেগেছে এক বছরেরও বেশি।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঢাকার মিরপুরে কবি মেহেরুন্নেছাসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, আইনজীবী-সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে হত্যা, পল্লবীর আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জনকে হত্যা, বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবসহ সাতজনকে হত্যা, কেরানীগঞ্জের শহীদনগর গ্রামের ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচরসহ পাশের আরো দুটি গ্রামের অসংখ্য মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ষড়যন্ত্র ও উস্কানিসহ ছয়টি অভিযোগে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৩(১), ৩(২)(এ)(এইচ) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে গোলাম মোস্তফা নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। ওই মামলার অভিযোগে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক দেখিয়ে কারাগারে রাখার আদেশ দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর গত বছরের ১৬ এপ্রিল আবদুল কাদের মোল্লার মামলাসহ তিনটি মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.