তিন খুনের পর ঝিনাইদহে চরম উত্তেজনা-২ সন্দেহভাজন আটক

ঝিনাইদহে নির্বাচনী সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন কাঞ্চননগরের গোলাম সরোয়ারের ছেলে সেলিম হোসেন এবং রেজাউল ইসলামের ছেলে পারভেজ রহমান। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানিয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তিনজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় যুবলীগের মাছুদ ও জাহাঙ্গীর গ্রুপের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। তাঁরা হলেন আলমগীর হোসেন, বজলুর রহমান ও সোহান হাসান। এর মধ্যে আলমগীর জাহাঙ্গীর গ্রুপের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। বজলুর ও সোহান পরিচিত মাছুদ গ্রুপের ক্যাডার হিসেবে। দুই গ্রুপ আসন্ন পৌর নির্বাচনে দুজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীকে সমর্থন করছে। তবে ওই দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর দাবি, এ সংঘর্ষের সঙ্গে পৌর নির্বাচনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে এ সংঘর্ষ হয়ে থাকতে পারে।
ঝিনাইদহ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আক্তার হোসেন গতকাল শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুবলীগের সংঘর্ষের সময় তিনি পাশের উদয়পুর গ্রামে নির্বাচনী গণসংযোগ করছিলেন। তবে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর ও তাঁর লোকজন নির্বাচনে তাঁর সমর্থন দিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো প্রচারণায় থাকছে না। সংঘর্ষের ঘটনায় নির্বাচনের সম্পর্ক নেই।
একই ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর পদপ্রার্থী জাহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, যুবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পবাহাটি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জাহাঙ্গীর গ্রুপ ও মাছুদ গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর জের হিসেবে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।
জাহাঙ্গীর হোসেন পৌর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মাছুদ সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, পবাহাটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর ও মাছুদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের কারণে কিছুদিন আগে মাছুদ শহরের পুরনো ডিসি কোর্টের সামনে এবং জাহাঙ্গীর চান্দা সিনেমা হলের সামনে হামলার শিকার হন। এ হামলার ঘটনায় দুজনই মারাত্মকভাবে আহত হন। এসব ঘটনার জের হিসেবে বৃহস্পতিবার তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, 'নিহতরা কেউই যুবলীগের কর্মী নয়। তবে তাঁরা যুবলীগের নেতা মাছুদ গ্রুপ ও জাহাঙ্গীর গ্রুপের সঙ্গে চলাফেরা করত।' এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধের কারণে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনিও মনে করছেন।
সদর থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, গতকাল তিনজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে সংঘর্ষের পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

No comments

Powered by Blogger.