ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট- কর্তৃপক্ষের নির্দেশের পরও হল ছাড়ছে না ছাত্রলীগ

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের ওপর হামলা এবং প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুরের পর গতকাল সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এ নির্দেশ পাওয়ার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এখনো হল দখল করে আছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের হলে অবস্থানের কারণে নতুন করে হামলার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম মীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছি। এখন কেউ যদি তা না মানে, তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমাদের কী আর করার আছে?’
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহমেদ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সময় নিয়ে কেউ কেউ হলে থাকছেন। এখন কর্তৃপক্ষ যদি হল খালি করার উদ্যোগ নেয়, পুলিশ তাদের সহায়তা করবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তো এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি।’
গত রোববার সকালে নাজমুল হোসাইন ও শাকিলা ইয়াছমিন নামের পুরকৌশল বিভাগের দুই অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়ার দাবিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের ওপর হামলা করেন। তাঁরা ইনস্টিটিউটে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এতে ইনস্টিটিউটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সিদ্দিকুর রহমান, তড়িৎ কৌশল বিভাগের মোক্তার আহমেদ ও পুরকৌশল বিভাগের সাইফুল ইসলাম নামের তিন শিক্ষক আহত হন।
শিক্ষকেরা জানান, কয়েক দিন আগে অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম মীরের কাছে ওই দুই শিক্ষার্থীর নাম পাঠিয়ে তাঁদের পাস করিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেন ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেন সাগর। কিন্তু অধ্যক্ষ এ প্রস্তাবে রাজি হননি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার সকালে জাকির গ্রুপের কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ইটের টুকরা নিয়ে ইনস্টিটিউটে ভাঙচুর চালান। এতে বাধা দিলে শিক্ষকদের ওপরও হামলা করেন নেতা-কর্মীরা।
সূত্র জানায়, এ ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে এবং গতকাল সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কর্তৃপক্ষের এ নির্দেশ অমান্য করে হলে অবস্থান করেন।
গতকাল বিকেলে ইনস্টিটিউটে গেলে অনেক জানালার কাচ ভাঙা দেখা যায়। চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাবও তছনছ করা। ইনস্টিটিউটের সামনে পুলিশি পাহারা রয়েছে। ভেতরে ছাত্রলীগের ইনস্টিটিউট শাখার সভাপতি জাকির ও রাকিবুলের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী অবস্থান করছেন। কিছুক্ষণ পর ইনস্টিটিউটের সামনে সভাপতি জাকির কয়েকজন শিক্ষককে বলছিলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। অথচ মিডিয়ায় আমাদের নাম আসছে।’
এ প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের ইনস্টিটিউট শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল অধ্যক্ষকে বলেন, ‘স্যার, আমরা অনুতপ্ত। আপনি আমাদের বিষয়টা দেখেন। অনেক কষ্ট দিছেন, আর দিয়েন না।’ সভাপতি জাকির বলেন, ‘স্যার, আমরা কয়েকজন হলে থাকতাছি। এডা আপনারে জানাইলাম।’ রফিকুল ইসলাম তাঁদের বলেন, ‘এটা এখন ওপর মহল দেখছে। আমার কিছুই বলার নাই।’
পরে অধ্যক্ষ রফিকুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনি তো সব শুনেছেন। তবে তদন্ত কমিটি সত্য ঘটনাটিই তুলে ধরবে।’
ইনস্টিটিউটের হলগুলোতে গিয়ে সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থান দেখা যায়। কয়েকজন বলেন, তাঁরা সাধারণ শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ তাঁদের ব্যাগ কেড়ে নিয়ে হলে থাকতে বাধ্য করেছে।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের নেতা জাকির ওই দুই শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়ার সুপারিশের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি স্যারকে বলছি, যদি সম্ভব হয় একটু দেখার জন্য।’ কিন্তু জাকির দাবি করেন, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটিয়েছেন।
হল না ছাড়ার ব্যাপারে সভাপতি জাকির বলেন, ‘ইন্টার্ন, পরীক্ষা এসব আছে বলে হয়তো কেউ কেউ রয়ে গেছেন।’ সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল বলেন, ‘অনেকের বাড়ি তো দূরে।’
এদিকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অধ্যক্ষ রফিকুল বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে পুলিশ জানায়।
বেপরোয়া ছাত্রলীগ: সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুলের নেতৃত্বে ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম রাহিদকে খুন করা হয়। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি এক ব্যবসায়ীর মূল্যবান সোফাসেট ছিনতাই করে নিয়ে আসেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালে নিয়মিত চাঁদাবাজি করেন তাঁরা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাতরাস্তার মোড়, বিটাক সড়ক ও ইনস্টিটিউটের সামনে ছাত্রলীগের কর্মীরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটান। তাঁরা ভ্রমণ, র্যা গ ডে, খেলাধুলা, উন্নয়নকাজসহ বিভিন্ন কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন।
তবে ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
শিল্পাঞ্চল থানার ওসি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘নির্দিষ্টভাবে এ অভিযোগগুলোর ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।’

No comments

Powered by Blogger.