পবিপ্রবিতে দরপত্র নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সংঘর্ষ, আহত ৪৭

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫ লাখ টাকার উন্নয়নকাজের দরপত্র দাখিলের দিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দিনটিকে সামনে রেখে আগের রাতে বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এ সত্ত্বেও গতকাল দরপত্র দাখিলের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আসে দুমকী উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পরে উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ দুই ছাত্র প্রহৃত হলে সংঘর্ষ ব্যাপক রূপ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগ দিয়ে দুমকী বাজারের প্রায় অর্ধশত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় এসব সহিংস ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় ৪৭ জন।
রাতে বহিরাগত লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল ছাত্রী হলে হামলা চালায় বলে খবর পাওয়া গেছে। এ সময় ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে ভবনের ওপর তলায় গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সহিংসতার পর বাতিল করা হয়েছে দরপত্র গ্রহণের কার্যক্রম। ক্যাম্পাসসহ পুরো উপজেলা পরিষদ ও দুমকী বাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ক্যাম্পাস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগের রাতে ককটেল বিস্ফোরণ সত্ত্বেও ভীত না হয়ে গতকাল সকাল ১১টায় দুমকী উপজেলা ছাত্র ও যুবলীগের ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী দরপত্র দাখিল করতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ তখন তাদের ওপর হামলা চালায়। দুপক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে। এ সময় আবারও বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের প্রতিরোধের মুখে দুমকী উপজেলা ছাত্র ও যুবলীগ ক্যাম্পাস ছেড়ে বাইরে অবস্থান নেয়। এ সময় হামলা-পাল্টাহামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ১০ জন এবং দুমকী উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাতজন আহত হয়। এ ঘটনার পর উপজেলা যুবলীগ দপ্তর সম্পাদক আখতারুজ্জামান শাহীন পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাফেটেরিয়ায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ কর্মীরা।
দুপুরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরামত আলী হলের দুই শিক্ষার্থী আসাদ এবং সাইমুনকে বেদম প্রহার করে উপজেলা ছাত্র ও যুবলীগকর্মীরা। এ খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐকবদ্ধ হয়ে দুমকী বাজারে প্রায় অর্ধশত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২০ থেকে ২৫টি দোকান। এ সময় হামলায় আহত হয় প্রায় ১০ জন। গুরুতর আহত ব্যবসায়ী কাওসার আহম্মেদ ও কামাল মৃধাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঐকবদ্ধ হয়ে ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পাল্টা হামলা চালান। এতে ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ারে ভর্তি করা হয়েছে আবু সাইদ, সজীব মোল্লা, আফজাল হোসেন শোভন, অহিদুল ইসলাম শোভন, সোলায়মান রাকিব, মাসুম বিল্লাহ, আবদুল্লাহ আল বাক্কি, শাহেদ, সুমন, রাকিব, সায়মুন, আরিফ, অঙ্গন, আসাদ ও রনিকে।
বিকেল ৩টায় সহকারী পুলিশ সুপার আনসুরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। বিকেল ৫টার পর স্থানীয় আ. লীগ নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
তবে প্রথম দফায় হামলা এবং ককটেলের বিস্ফোরণের বিষয়টি অস্বীকার করে ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি কামরুজ্জামান সোহাগ বলেন, 'ওরা (দুমকী উপজেলা ছাত্র ও যুবলীগ) ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে শিক্ষার্থীরা আহত হলে সম্মিলিতভাবে সবাই ওদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয়। পুরো ঘটনার জন্য উপজেলা ছাত্র ও যুবলীগ দায়ী।'
দুমকী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান সোহাগ বলেন, 'আমরা দরপত্র দাখিল করতে গেলে ওরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে অনেককে মারধর করে। লাঠিসোঁটা আর ইট নিয়ে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে আবার বাজারে ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। সব ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ পুরোপুরি দায়ী।'
পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সদস্যপদ স্থগিত : এদিকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) সংঘটিত পৃথক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সংগঠনের ইমেজ ক্ষুণ্ন হওয়ায় বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। এজন্য পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে পবিপ্রবির ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। ফলে তাঁরা আর সংগঠনের দায়িত্বে থাকবেন না। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.