যশোরে জনসভায় শেখ হাসিনা-যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ওরা মানুষ মারছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করার জন্য হরতাল ডেকে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সেই বিচার এ দেশের মাটিতে হবেই হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর ঈদগাহে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বিরোধী দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়, মানি লন্ডারিং করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করে, মানুষ হত্যা করে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, 'উনার দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। দুর্নীতি করে উনি কালো টাকা বানিয়েছেন। তাঁর মুখে দুর্নীতিবিরোধী কথা শোভা পায় না।'
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজুর সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বিকেল ৩টা ৪৬ মিনিটে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। টানা ৪১ মিনিটের বক্তব্যে তিনি আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, '১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬০০ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ৪৩০০ মেগাওয়াট করি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা ৩২০০ মেগাওয়াটে নামায়। বিএনপি নেত্রী, আপনাকে এর জবাব দিতে হবে। নিজের ছেলে খাম্বা বানিয়েছে। খাম্বা লাগিয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এসে ৬৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছি। তিন দফা সারের দাম কমিয়েছি। চালের দাম প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৮ টাকায় রেখেছি। বিএনপি সরকারের সময় এই চালের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। বিএনপির সময় একটি মোবাইল ফোনসেটের দাম ছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। আমরা সেই মোবাইলের দাম কমিয়ে মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দিয়েছি।'
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, 'উনার ছেলেদের পড়াশোনার জন্য সরকারি তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। ছেলেদের কি পাস করিয়েছেন? হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি, মানি লন্ডারিংয়ের ডিগ্রি নিয়েছেন। উনি ক্ষমতায় থাকার সময় ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা ভুলে গেছেন। এবার ভারতে গিয়ে টিপাইমুখ সম্পর্কে কিছুই বলেননি। উনি গিয়েছিলেন ভারতকে তেল মারতে। কিন্তু উনার সময়েই সীমান্তে সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে।'
যশোরের উন্নয়ন ও বিভিন্ন দাবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যশোর ঐতিহ্যবাহী পুরান জেলা। গত নির্বাচনে আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের ছয়টি আসন উপহার দিয়েছেন। আমরা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারলে যশোরকে সিটি করপোরেশন করব। এই এলাকার উন্নয়নে কী করতে হবে, তা আমি জানি। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে অঙ্গীকার করেছিলাম আজ যশোর থেকে ডিজিটাল সেবার শুভ উদ্বোধন করে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। এখন থেকে যশোরবাসী তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়েও যোগাযোগ করতে পারবে। কপোতাক্ষের নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ২৫০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। বেনাপোল স্থলবন্দরের উন্নয়নেও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।'
যশোরের বিভিন্ন উপজেলা পর্যায় থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে আসতে থাকে। জনসভায় আরো বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুখ মোহাম্মদ, শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাব, খালেদুর রহমান টিটো, খান টিপু সুলতান, শেখ আফিল উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার প্রমুখ।
জনসভার আগে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল যশোরের ফলক উন্মোচন করেন। এর আগে তিনি শহরের বকুলতলায় নির্মিত বঙ্গবন্ধুর সর্ববৃহৎ ম্যুরাল উদ্বোধন করেন। সকালে তিনি যশোর বিমানঘাঁটিতে শীতকালীন গ্র্যাজুয়েশন কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।

No comments

Powered by Blogger.