নিন্দা সত্ত্বেও বাড়ি তৈরি থেকে সরবে না ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরায়েলের নতুন করে বাড়ি নির্মাণের ঘোষণাকে 'ভয়ংকর পথে' যাত্রা বলে হুঁশিয়ার করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সব সদস্যরাষ্ট্র এর নিন্দা জানিয়েছে।
পরিষদের অস্থায়ী সদস্যদের মধ্যে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনভুক্ত (ন্যাম) রাষ্ট্রগুলোও সরব হয়েছে নিন্দায়। ইসরায়েলি এ ঘোষণার 'তীব্র বিরোধিতা' করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্থাটির কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্র আলাদাভাবেও ইসরায়েলের এ ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে। প্রত্যেকেই ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি-প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। আর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তোলার হুমকি দিয়েছে। এর 'দায়ভার'ও ইসরায়েলকে নিতে হবে পরিষ্কার করে জানিয়েছে তারা। তবে এর পরও পরিকল্পনামাফিক বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া থেকে একচুলও সরে না আসার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।
গত তিন সপ্তাহে পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন এবং বাড়ি নির্মাণের কয়েকটি বড় পরিকল্পনার কথা জানায় ইসরায়েল। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত বুধবার পর্যন্ত তিন দিনেই পাঁচ হাজার ১৫৮টি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ইসরায়েল। এগুলোর ৮০ ভাগেরও বেশি নির্মাণ করা হবে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে। ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাজধানী মনে করে।
গত ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘের 'পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের' মর্যাদা পায় ফিলিস্তিন। এর পর বাড়ি নির্মাণ ও নতুন করে বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়া জোরদার করে ইসরায়েল।
বুধবার পূর্ব জেরুজালেমের গিভাত হামাতোস ডিস্ট্রিক্টে দুই হাজার ৬১০টি বাড়ি নির্মাণের বিষয় চূড়ান্ত করা হয়। গত ১৫ বছরের মধ্যে এটিই হবে সেখানে প্রথম বসতি স্থাপন। এর আগে আরো এক হাজার ৪৮টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেয় ইসরায়েলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়_এগুলোর অধিকাংশই নির্মাণ করা হবে পশ্চিম তীরে। এর দুদিন আগে পূর্ব জেরুজালেমে আরো দেড় হাজার বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দেয় ইসরায়েল।
বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, 'পশ্চিম তীরে বিশেষ করে জেরুজালেমে বসতি স্থাপনের ব্যাপারে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইসরায়েলের এ পদক্ষেপ টেকসই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের হুমকি।' তিনি ইসরায়েলকে 'ভয়ংকর এ পথ পরিহারের' আহবান জানিয়ে বলেন, দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের লক্ষ্যে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুর ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ বাধা হয়ে দাঁড়াবে। জাতিসংঘের রাজনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক সহকারী মহাসচিব জেফরি ফেল্টম্যানও ইসরায়েলের উদ্যোগের নিন্দা জানান। তিনি 'অতি শিগগির' ফিলিস্তিনিদের বরাদ্দ করের অর্থ ছেড়ে দেওয়ারও দাবি জানান। কয়েকদিন আগেই ফিলিস্তিনের ন্যায্য এ পাওনা বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল।
এদিন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বৈঠকে ইসরায়েলের বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনার নিন্দা জানানো হয়। তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত সুসান রাইস বিষয়টিকে কেবল 'উসকানিমূলক' অভিহিত করেন। চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করে। দীর্ঘমেয়াদে এতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে উল্লেখ করে জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ দূত ভিতালি চুরকিন জরুরি ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে গঠিত চতুষ্টয়ের (কোয়ার্টেট) শান্তি আলোচনা শুরুর আহবান জানান। এই চতুষ্টয়ের সদস্য হলো_যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, রাশিয়া ও জাতিসংঘ।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতাকারী মোহাম্মদ শাতেয়াহ ইসরায়েলের 'বসতি স্থাপন, ফিলিস্তিনিদের আটকসহ হত্যা' ইত্যাদি অভিযোগে আইসিসিতে যাওয়ার হুমকি দেন। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'সব সরকারের আমলেই জেরুজালেমে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরাও এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসব না।' ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনা গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, 'পশ্চিম তীর বা জেরুজালেম কোথাও ইসরায়েলি বসতির একটি পাথরও অবশিষ্ট থাকবে না।' এর আগে এদিনই ইইউর পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটন ইসরায়েলের বাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনাকে 'চূড়ান্ত বিপজ্জনক' বলে সমালোচনা করেন। তিনি কঠোর ভাষায় জেরুজালেমে বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করেন। সূত্র : এএফপি, আরটি।

No comments

Powered by Blogger.