শৈত্যপ্রবাহে উত্তরের জীবনযাত্রা ব্যাহত

ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে বগুড়া ও পঞ্চগড়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে এসব স্থানে দুপুর ১২টার আগে সূর্যের মুখ দেখা যায় না। শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের লোকজন কষ্ট পাচ্ছে।
শীতের কারণে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রধানপাড়া গ্রামের হাতিবউদ্দিন (৬৫) গতকাল বৃহস্পতিবার মারা গেছেন।
কয়েক দিন ধরে বগুড়ায় দুপুর ১২টার আগে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কনকনে ঠান্ডা বাতাসে সাধারণ মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে। রাতে পাড়া, মহল্লা ও রাস্তার ধারে আগুন জ্বালিয়ে শীত দূর করার চেষ্টা করছে মানুষ। কুয়াশার কারণে সড়কে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা বগুড়া-মহাস্থান সড়কে রাত ১০টা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে চলাচল করতেন। এখন রাত নয়টায় তা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
বগুড়া শহরের বস্তি ও ফুটপাতগুলোয় নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার আজিজার শেখ তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বগুড়া রেলস্টেশনের বস্তিতে থাকেন। তিনি জানান, গরম কাপড় না থাকায় এই শীতে তাঁদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
শীত জেঁকে বসায় বগুড়ার রেলস্টেশনের কাছে হকার্স মার্কেটে শীতের পুরোনো কাপড়ের দোকানে ভিড় বেড়ে গেছে। বিক্রেতা নজরুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পুরোনো কাপড়ের দাম বেশি। শহরের ফুটপাতগুলোয়ও শীতের কাপড় বেচাকেনা চলছে।
বগুড়া আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ এবং গত বুধবার সকালে ছিল ১২ দশমিক ৮। কুয়শা কেটে গেলে এই তাপমাত্রা আরও কমবে।
পঞ্চগড়ের ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে। রাতে বৃষ্টির মতো শিশির পড়ছে। দিনমজুর, শ্রমিক ও রিকশাচালকেরা শীতবস্ত্রের অভাবে কাজে যেতে পারছেন না। শহরে লোকজনের উপস্থিতি ও রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। শহরের লেপ-তোশক ও শীতবস্ত্রের দোকানগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে গেছে।
শীতের কারণে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আবুল কাশেম জানান, কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী ভর্তির হার বেড়ে গেছে। বুধবার ডায়রিয়া ও শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ২১ শিশু চিকিৎসার জন্য এখানে ভর্তি হয়।
জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, শীতবস্ত্র বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পঞ্চগড়ের শীতার্তদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.