পাখি- মেটেবুক প্রিনা by সৌরভ মাহমুদ

ছোট এক পাখি। বসে বসে ডেকে যাচ্ছে অবিরত। তখন খুব সকাল। বাংলাদেশের বিপন্ন এক পাখি শেখ ফরিদ বা কালা তিতির দেখার জন্য হেঁটে বেড়াচ্ছি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কাজীপাড়া গ্রামের মেঠো পথ।
তিলখেত, দ্রোণ ফুলের গাছভরা মাঠ পেরিয়ে একটি ভুট্টাখেতের কাছে যাওয়ার পর হঠাৎ একটি পাখির দেখা পাওয়া গেল। এটি শেখ ফরিদ বা কালা তিতির নয়, এটি মেটেবুক প্রিনা। যদিও এরা ছোট দলে থাকে। কিন্তু সেদিন সকালে একাই বসে ছিল ভুট্টার ছড়ায়। মিনিট তিনেক পাখিটি সেখানেই বসে ডাকছিল। তারপর উড়ে চলে গেল আমবাগানের ঝোপে।
নয় প্রজাতির প্রিনা পাখির বাস আমাদের দেশে, যার মধ্যে তিন প্রজাতির দেখা পেয়েছি।
মেটেবুক প্রিনা ছোট আকৃতির তৃণচারী পাখি। গায়ের রং মেটে-বাদামি। তবে প্রজনন মৌসুমে পালকের রং পরিবর্তন হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিকে জলপাই-বাদামি পালক থাকে। দেহের নিচের দিক সাদা, বুকের পাশ ধূসর, তলপেট পীতাভ বর্ণের। লেজ লম্বায় ৫ সেন্টিমিটার। দেহের দৈর্ঘ্য ১১ সেন্টিমিটার। ওজন ৬ গ্রাম। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। চোখ অনুজ্জ্বল, সামান্য বাদামি-কমলা, ঠোঁট কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহতলে হলদে আভা থাকে। ডানা ও লেজের প্রান্তদেশ লালচে হয়।
মেটেবুক প্রিনা প্রধানত দল বেঁধে চলে। প্রজনন সময়ে কাছাকাছি অনেক পাখি দেখা যায়। এরা সাধারণত আবাদি জমির ধারে, বৃক্ষতলে, লতাগুল্মের ঝোপে, কাশবনের পরিষ্কার জায়গায় বিচরণ করে। পাখিটির ইংরেজি নাম Gৎey-bৎeasted Pৎinia। বৈজ্ঞানিক নাম Pৎinia hodgsonii।
পিঁপড়া, শুঁয়ো পোকা, গুবরে পোকা ও ফুলের মধু আছে এদের প্রধান খাবারের তালিকায়। ঘাসবনে শুকনো ঘাস, পাতা ও নল দিয়ে মাটির কাছে মোচা আকৃতির বাসা বানায়। তিন-চারটি ডিম দেয়। ডিম ফোটে ১১ দিনে বা তারও বেশি সময়ে। মা ও বাবা পাখি উভয়ে মিলে সংসারে কাজ করে।

No comments

Powered by Blogger.